নঈম তারিক
নঈম তারিকের ৪ কবিতা
প্রকাশিত : জানুয়ারি ৩০, ২০২১
শোধডুব
ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি নিজেকে
এত ধুলোময়লা জমেছে চারপাশে
শোধডুব দিয়ে এসেছি শেষ নদীতে
নদী কই, সব জলীয় ভাগাড়
গুটিয়ে আনছি নিজস্ব নাটাই
কেটে যাওয়া ঘুড়ির পেছনে দৌড়াইনি কখনো
নামিয়ে আনিনি মগডালে আটকে থাকা রঙিন সুতো
কতদূর আর নিজেকে বিছিয়ে দিতে পারে মানুষ
শেষতক তো এই সাড়ে তিন হাত মাটির ঘেরাটোপ
ফিরে যাবার আগে চারপাশ দেখে নেয়া ভালো
আসার সময় যেমন দেখে নিতে হয় ফিরে যাবার পথ
১৩ ডিসেম্বর ২০২০
আমি কিছুই বলব না
না, আমি আহ্বায়ক নই, আগন্তুকও নই এই সভায়
তবে আমি কিছুই বলবো না, সমবেত সুধী।
আজও আমি শুনতে এসেছি, আজীবন মুগ্ধ শ্রোতা
দূর থেকে ভেসে আসা অনুরোধের আসরে প্রচারিত চেনা গান যেভাবে শুনেছি কান পেতে
যেভাবে শুনেছি কুকুরের ডাক ডাহুকের আর্তনাদ।
শুনেছি ভিখিরির গল্প, রিক্সাচালকের দুঃখ, ফেলে আসা মাঠের হাহাকার, চায়ের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া ফোঁপানি।
শুনেছি মর্মর, ইঞ্জিনের ঘর্ষণ, কুলি হাঁকাহাঁকি।
গুনেছি ঢেউ, জানে না তা কেউ— গাছেদের মৌনতা আমি শুনি।
২২ ডিসেম্বর ২০২০
আহ সুন্দরবন
যে কন্ডোতে বসে সুন্দরবনের জন্য তোমার কান্না পায়, সেটা একসময় জলাশয় ছিল
যে পালংকে শুয়ে তোমাকে জন্ম দিয়েছিলেন মা, সেটার কাঠও এসেছিল কোনো বন থেকে
তোমার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালু রাখতে বাতাসে কার্বন ছেড়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো
রেফ্রিজারেটরের ঠাণ্ডা পানি ছাড়া তোমার চলে না
তোমার স্মার্ট ফোন, টিভি ও ল্যাপটপ চালু রাখতে গিয়ে কতকিছু উজাড় হয়ে যাচ্ছে
তুমি পাহাড় খুব ভালোবাসো— তোমাদের জন্য একের পর এক পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে
কিন্তু তোমার ভীষণ কান্না পায় সুন্দরবনের জন্য
আহা সুন্দরবন!
২১ মে ২০২০
ভালোবাসা
ভালোবাসা হচ্ছে সেই গুপ্তমন্ত্র
যার উচ্চারণ মেঘকে বৃষ্টি করে দ্যায়
ভিজিয়ে শান্ত করে দ্যায় তপ্ত প্রান্তর
ভালোবাসি বললে খুলে যায়
আলাদিনের সেই গুহার দরজা
ভালোবাসি বললে
ধরা পড়ে যায় চল্লিশ চোর
এই যে ফুল ফুটেছে ফল পাকছে
দুঃখ ভুলে গান গাইছে পাখি
এসবের পেছনে কিন্তু একটাই মন্ত্র
কেউ কোথাও জপছে—
ভালোবাসি ভালোবাসি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০