দেবাশীষ তেওয়ারী
দেবাশীষ তেওয়ারীর ৭ কবিতা
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ০২, ২০২০
একটি কাকতালীয় বেড়াল
একটি কাকতালীয় বেড়াল, নীল চোখ, এক তারিখ আমার গা-ঘেঁষে দৌড়ে হারিয়ে যায় অভিজাত ইহুদি কবরের দিকে, আন্দ্রেই বলেছে, একজন বুড়ি এসে রোজ রাতে প্রেমিকের কবরের পাশে বসে কাঁদে, তার এই আশ্চর্য বেড়াল খুব কাকতালীয়।
তোমার অস্বস্তি লাগবে দু-তারিখ থেকে,
সারারাত ঘুম আসবে না, ছটফট ভোরে ঘুম আসলেও অ্যাশট্রে আর খালি বোতলের চাপে থেমে যাবে রোজকার সাড়ে সাতটার এলার্ম, বুধ বা বৃহস্পতিবার ফোন না আসলে থেমে যেতে থাকবে শহর ঘড়ির কাঁটা।
ল্যাম্পপোস্টগুলি বেড়ালের চোখ, মেঘগুলি বেড়ালের গুচ্ছ গুচ্ছ লোম, অন্ধকার যেন এক চোখবোজা বেড়ালের ম্যাও-মিউজিক, ধীবরের খোজে
খুঁজে খুঁজে জেলেদের গ্রাম, অভিজাত মাছ-গুদাম,
রাতে
একটা কাকতালীয় বেড়াল, নীল চোখ, ত্রিশ তারিখ একটা ইঁদুর থেঁতলে দৌড়ে হারিয়ে যাবে অন্ধকারে,
তার প্রেমিকের গোপন কবরের দিকে
অষ্টপদী
ছোট ছোট ফুল গাছ কোণাতেই থাকো,
বড় বড় ব্যাঙ মাছ কুয়োতেই ডাকো।
ভালো যদি বাসো সখি কুয়োর প্রাচীর,
কেন আর যাবে বলো অতলান্ত তীর!
ওখানে বসিয়া তুমি যা বলিবে ভাই,
এমন উজ্জ্বল দ্যাখো আশেপাশে নাই।
ফুল গাছ তুমি ভাই কোণাতেই যাও,
ভাই তুমি ব্যাঙ মাছ, কুয়োতেই গাও।
ঘুম ও ঘোড়ারোগ
ছুড়ে মারলাম দেয়ালঘড়ি
এলার্ম দিবি? শালা!
আনবাড়ি গে মুড়ি খা তুই
ডালবাটানি খালা।
হামলোক রাজি আছি, ঝেড়ে কাশো কাশু ভাই
ধর্মদ্রোহীকে আগুনে পুড়িয়ে
অথবা কুপিয়ে মারছো। বেশ করছো।
কবিতা চলতে পারে যদি শানে লেখা হয়
নালে তাকে পিটিয়েই মারো।
পাহাড়ে হোটেল আর ক্যান্টনমেন্ট ভরে দাও
যারা অফিসার, তাদেরকে দাও দু-একটা পাহাড়ি ফুল
দোচুয়ানী খেতে খেতে তারা ফুল ভেজে খাক
তার কিছু ভাগ ভাইলোক সেটেলারও পাক
হোয়াট এ সহি আচিভমেন্ট।
বাউলদের ধরে ধরে জেলে পুরে দাও
গান নিষিদ্ধ।
বদসুরত কাফিরি মূর্তিগুলি ভেঙে ফেলো সব।
তারপর যে দু-একটা থেকে যাবে,
সেগুলি বেঁচে দাও গোপনে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।
মনে রাখবে, মূর্তি যত ভাঙবে,
থেকে যাওয়া গুলির দাম তত বাড়বে।
একটা লালনের মূর্তিও বেচো
যদি বেচারার একটা মূর্তি থেকে যায়!
আমজামজামরুলনারকোল সব কেটে ফেলো।
খেজুর আর ইউক্যালিপটাসে বুনে দাও বন।
ব্রিটিশরা কলোনিয়ালিস্ট, তাদের চামচা হইও না।
স্কুল-কলেজে যেও না, বন্ধ করে দাও হাসপাতাল।
আলহাজ্ব হও,
আলহাজ্ব হওয়া মানে কলোনিয়াল কিছু না।
লাইনে এসেছে কওমিরা, গণতন্ত্রীরা,
আমরা কোন ছাড়!
হামলোক রাজি আছি, ঝেড়ে কাশো, কাশু ভাই।
হলুদ ব্যাচ পরবো এবং জিজিয়া টেক্স দেব।
গলাটাকে ভালোবাসি ভাই।
বড়পিসি
আঁকড়ে ধরার মতো ছিল একটা কাঁঠাল গাছ,
উঠোনে।
তার বুকের কোটরে ছিল
একজোড়া বয়সী গোখরো, কখনো কামড়ায়নি।
গোড়াতেই ছিল তুলসীগাছের বেদী।
উঠোন ঘেরা ছিল ঘরে।
বড়ঘর রান্নাঘর উত্তরের ঘর তুষের ও গোয়াল ঘর।
ছিল চে`র ছবি সাঁটানো নিজের পশ্চিমের ঘর।
কামিনী ও রজনীগন্ধা ছিল সুপারিবাগানে।
ছিল একটা পুকুর।
আম জাম বাঁশ নিম কদম ও কাঠমালতী ঘেড়া।
সকলে ঘুমোলে সেখানে পরিরা নাইতে নামতো।
পুকুরের ওপারে ছিল একটা শ্মশান।
একটা শ্মশান ছিল পুকুরের ওপারে।
ছিল পুকুরের ওপারে একটা শ্মশান।
ডুবতে ডুবতে যতবার আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি
শ্মশান বন্ধুর হাত শুধু পোড়াতে শিখেছে!
সহজ কথা
সে অবিশ্বাসী, তার বাবা পৌত্তলিক।
তাদের যারা কাফির ও মুরতাদ ঘোষণা করছো
তোমরা, একেকজন আসলে শয়তানের গুপ্তচর।
প্রতিবার খুনের আগে, রক্তে রাঙিয়ে জয়ধ্বনি দিয়ে
জানিয়ে যাচ্ছ, তোমাদের প্রভুর নাম।
ঈশ্বরের পুত্রেরা
মোসদ্দেক পূরের মজিদ করলো কি,
একদিন পান খেতে খেতে ভাসিয়ে দিল
হাওয়ায় ভেসে চলা পালতোলা নাও।
নাও ভাসতে ভাসতে যতই এগোয়
হাওয়ায় ভাসিয়ে নেয়া ময়নাদ্বীপের দিকে
ততই সুস্পষ্ট হয় পান চকচকে হোসেন মিয়ার মুখ!
চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, দুজনেই দাঁড়িতে হাত বুলায়!
নদীভাঙন এগিয়ে আসা ভিটের মতো
সাধের ময়না দ্বীপ!
ও কপিলা, কী ঘুম তোর এত কুবেরের সাথে!
কুপি দপ দপ বৃষ্টিভেজা রাতে!
কোথায় জাগবে চর? এবার?
যারা জানে
বাঁধা আছে তারা, তাদের উৎসর্গ করো
তোমাদের প্রভুর নামে।