দীপক সাহার সাহিত্যকৃতি
অমিত কুমার কুণ্ডুপ্রকাশিত : জুলাই ১৫, ২০২০
বাতিঘর বললেও যাকে কম বলা হয়, তিনি সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত প্রাণ একজন মানুষ। সর্বদা প্রফুল্লচিত্তে উদ্ভুদ্ধ করে যাচ্ছেন নবীনদের। মহেশপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপামর জনসাধারণকে দিচ্ছেন সুসাহিত্যিক হবার দীক্ষা। বলছিলাম শিশুসাহিত্যিক দীপক সাহার কথা। দীপক সাহা শুধু নিজেই লিখছেন না, লেখালেখির প্রেরণা হচ্ছেন। সাহস যোগাচ্ছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তরুণ লেখকদের হৃদয়ে জ্বেলে দিচ্ছেন জ্ঞানের আলো।
আজ আলোচনা করব দীপক সাহার সাহিত্য সম্ভারের একটি অংশ নিয়ে। দীপক সাহার প্রথম কাব্যগ্রন্থ `ব্যস্ত থাকে ঢেউ’। কাব্যগ্রন্থের একটি রোমান্টিক কবিতা:
যখন তোমাকে পাই
সব কিছু ভুলে যাই
ব্যথা অভিমান,
যখন তোমাকে পাই
সব কিছু পাওয়া হয়
আকাশ সমান।
তিনি একই কাব্যগ্রন্থ `ব্যস্ত থাকে ঢেউ`তে `ফিরে আসা` নামে আরেকটি রোমান্টিক কবিতায় লিখেছেন:
ভালো বাসতে যদি নাইবা পারিস
বাসলি কেন ভালো?
গহীন বনে ছাড়িয়ে গেলি
জ্বালিয়ে প্রেমের আলো
তবু আমি তাকিয়ে থাকি
জাগিয়ে রাখি আশা
আসবি আবার ফিরিয়ে দিতে
আমার ভালোবাসা।
দীপক সাহার সবচেয়ে নান্দনিক কাব্যগ্রন্থের নাম `পাখির ডানায় উড়ছে সকাল`। বত্রিশটি অভূতপূর্ব ছড়া-কবিতা নিয়ে ২০১৬ সালে পঙ্খিরাজ থেকে প্রকাশ পায় বইটি। অসাধারণ অলংকরণ করেছেন শিল্পী গোবিন্দ প্রসাদ দেবনাথ। বইটির অপূর্ব একটি কবিতা `বীর`:
দেখাও দেখি
কেমন তুমি বীর।
এখান থেকে চাঁদের দেশে
ছোটাও তো এই তীর।
জানি, তুমি পারবে নাকো
তফাৎ থেকে দেখতে থাকো
কেমন করে তীরের ফলায়
লাগাই জাদুর গতি।
ধনুক ছিলায় তীরটা ধরে
এমন করে ছুঁড়ব জোরে
স্বর্গ থেকে হুর রে দেবে
লক্ষ্ণী সরস্বতী।
এই গেল যা
সন্ধ্যা এলো নেমে।
তোমার সাথে বকবকিয়ে
শরীর গেল ঘেমে।
অলুক্ষুণে সন্ধ্যা বেলায়
আর যাব না তীরের খেলায়
আসছে বৃহস্পতিবারে
তীর পাঠাবোই চাঁদে।
হাজার মানুষ আসবে ধেয়ে
অবাক চোখে দেখবে চেয়ে
ছাই মুখে সব নিন্দুকেরা
পড়বে নিজের ফাঁদে।
দেখবে সবাই
আমিই সেরা বীর।
আমার তীরের ঘায়ে হবে
চাঁদ ফেটে চৌচির।
শিশু মনের অসম্ভব কল্পনাকে জাদুবাস্তবতার মতো করে বর্ণনা করেছেন কবি। শিশুরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। নিজেদেরকে বীর রূপে দেখতে ভালোবাসে। শিশুদের এই বিশ্বাসে থাকে দৃঢ়তা। যাকে আমরা বলি কনফিডেন্স। সেই শিশুমনের আশা জাগানিয়া একটি কবিতা `বীর`।
বইটির আরেকটি নান্দনিক কবিতা `মাছরাঙা আর দুষ্টু বিশু`:
দেখরে বিশু দেখ না চেয়ে
ট্যাংরা পুঁটির হদিস পেয়ে
মাছরাঙাটা পড়ল জলে ঝুপ।
শিরশিরে ভয় মাছের ঝাঁকে
মাছরাঙাটার ঠোঁটের ফাঁকে
তিড়িং বিড়িং পুঁটির ছানা চুপ।
গাছের ঝোপে ডালের `পরে
খাচ্ছিল মাছ আরাম করে
দুষ্টু বিশু গুলতি ছোড়ে ঠুস।
কেমন যেন খটকা লাগে
ঝটকা আঘাত হানার আগে
মাছরাঙাটা উড়াল দিল হুস।
ইস রে কেমন ফসকে গেল
এক নিমেষে উধাও হলো
দুষ্টু বিশু টাসকি খেয়ে হা।
ঢেউয়ের তালে তালে ভেসে
খলখলিয়ে উঠল হেসে
ট্যাংরা পুঁটি খোলসে মাছের ছা।
কী চমৎকার ছন্দ। কী নান্দনিক দৃশ্যকল্প। মন জুড়িয়ে যায়। হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রাণ আনন্দে ভরপুর হয়ে যাই। আহা, এমন ছেলেবেলায় যদি আবার ফিরে যেতে পারতাম। আহা, আবার যদি দুষ্টু বিশুর বয়স পেতাম। একই কাব্যগ্রন্থে তিনি লিখেছেন `শ্যামল সোনার দেশ` নামে আরেকটি কবিতা।
চাঁদ চিকচিক
জল ঝিকমিক
বন বনানীর ফুল হাসে ফিক
আসমান থেকে
চুপচুপ ঝরে জোছনা।
ঢেউ কুলকুল
বয় মশগুল
গন্ধ বিলায় হাসনা বকুল
রাতভর জাগে
লক্ষ তারার রোশনা।
আহ, সুখ সুখ
বুক ধুকপুক
আবছা আলোয় কার যেন মুখ
সবুজ সবুজ
এ কোন মায়ার বেশ গো।
ভোর লাল লাল
স্বপ্নের জাল
পাখির ডানায় উড়ছে সকাল
এইতো আমার
শ্যামল সোনার দেশ গো।
এই কবিতাটির একটি পঙক্তি নিয়েই বইটির নামকরণ হয়েছে। কত সুন্দর বর্ণনা আমার শ্যামল দেশের। তিনি চমৎকার ছন্দে। অসাধারণ বর্ণনায় দেশের যে ছবি এঁকেছেন, লেখাটি পড়লে তার রেশ দীর্ঘক্ষণ রয়ে যায়। মস্তিষ্কে একটি সুখানুভূতির দোল দুলে ওঠে। বইটির আরেকটি লেখা `ছোটন বাবু`:
ছোটন বাবু হচ্ছে কাবু দিনকে দিনে
যতই বাবা ঘাম ঝরিয়ে আনুক কিনে
কমলা আপেল ঘি দুধ ননী বাজার থেকে।
বিরাট চোয়াল আসছে বোয়াল খালুই ভরে
যতই মা তার সোহাগ দিয়ে যতন করে
রাঁধুক সে মাছ সুগন্ধি সব মশলা মেখে।
ছোটন বাবুর বার্লি সাবুর বারণ আছে
এর পিছনেও বিশেষ কিছু কারণ আছে
এসব খেলে ছোটন সোনা বমন করে।
ফুলকো লুচি খুব অরুচি আলুর দমে
তাইতো ধীরে ধীরে ওজন যাচ্ছে কমে
তবু ছোটন উটকো ক্ষুধা দমন করে।
মাংস পোলাও ইলিশ ও লাউ ডিম রোচে না
কিচ্ছুতে তার উদর ভরা ভুখ ঘোচে না
কেউ বোঝেনা ছোটন বাবুর মনের চাওয়া।
ডাল খিঁচুড়ি পুঁই মিচুড়ি ছানার বড়া
ভাল্লাগেনা হলুদ রঙা কলার ছড়া
বিচ্ছিরি সব খাবারগুলো যায় কি খাওয়া?
ছোটন বাবুর শরীর কাবুর চান অবসান?
বেশ তো তবে পকেট থেকে পয়সা খসান
আইসক্রিম ও ফানটা চকো ক্র্যাকার কিনে।
না যদি দেন এনার্জি ক্যান জুসের বোতল
ছোটন মণির পেটের ভিতর ক্ষুধাও কোতল
কেমনে ছোটন চাঙা হবে এসব বিনে?
ছোটন ছোটন পায়রা নোটন ক্যান্ডি পেয়ে
ঝাল চানাচুর চিপস ওয়েফার যাচ্ছে খেয়ে
লিটার লিটার পেপসি কোলা গড়ায় পেটে।
দারুণ ভোজন বাড়ছে ওজন ঝুমকো তালে
এখন ছোটন ব্যা`ম ধরেছে উল্টো চালে
সকাল সাঁঝে সময় কাটায় দৌড়ে হেঁটে।
শিশুদের খাদ্যাভ্যাসের কী মনোমুগ্ধকর বর্ণনা। বাচ্চারা সেসব খাবারই পছন্দ করে, যেগুলো তাদের জন্য মোটেও দরকারি নয়, বরং ক্ষতিকর। তবুও তাদের সেসবই চায়। চকলেট, বোতলের জুস থেকে চানাচুর। মুখরোচক এসব খাবারের দিকেই তাদের ঝোঁক। তারা এগুলোই পছন্দ করে। শিশুদের খাদ্যাভ্যাসের কী নান্দনিক বর্ণনা।
`পাখির ডানায় উড়ছে সকাল’ বইটির সব ছড়া-কবিতায় নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ। কাব্যগুণে অভিনব। বইটি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কর্তৃক ক্রয় হয়েছে। রকমারিসহ অনলাইনে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। এমন একটি বই পড়তে পারাও সৌভাগ্যের ব্যাপার।
দীপক সাহার অগ্রন্থিত একটি লেখা `কখন মারে ছোঁ`:
তিনটি কালো তিনটি সাদা
তিনটি ধূসর ছা।
লাল টুকটুক মুরগী এবার
প্রথম হলো মা।
নয় ছানাদের চলতে শেখায়
ফেলতে শেখায় পা।
আগলে রাখে ডানায়; যখন
বিপদ করে হাঁ।
সারাটি দিন মুরগী মায়ের
নেই জিড়োবার জো।
উঠোন জুড়ে চিলের ছায়া
কখন মারে ছোঁ।
মায়ের মন তার শিশু সন্তানের উপর সারাক্ষণ ন্যাস্ত থাকে। এই লেখাটি চিরকালীন মায়ের হৃদয়ের আকুলতার বহিঃপ্রকাশ। কবি দীপক সাহার আরেকটি ছড়া-কবিতার বই `বৃষ্টি নামে বৃষ্টি থামে`। বইটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আগে একটি প্রশ্ন করতে হয়। কে শক্তিশালী, প্রাণ না অপ্রাণ? অথবা প্রশ্নটা এমনভাবে করা যায়, কে শক্তিশালী, জীবন না যন্ত্র? শক্তিশালী আসলে জীবন। শক্তিশালী প্রাণ। যার ভিতরে প্রাণের স্পন্দন বিদ্যমান, তার সমকক্ষ আর কে আছে এ বিশ্বভূবনে? প্রকৃতি নিজেও একটা জলজ্যান্ত প্রাণ। আমরা তাকে প্রাণ-প্রকৃতি বলে ডাকি। প্রকৃতির শক্তি প্রাণের মধ্যদিয়ে প্রকাশিত হয়।
প্রাণের শক্তি তার বিস্তৃতির ক্ষমতায়। প্রকাশের ক্ষমতায়। বিকাশের ক্ষমতায়। প্রাণ নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চায়। বিস্তৃত হতে চাই সর্বত্র। অন্যকে ছাপিয়ে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চাই। সে মানুষ হোক বা করোনা ভাইরাস।
এই যে করোনা ভাইরাস, মানুষ যাকে নাম দিয়েছে কোভিড ১৯, তার ক্ষমতা কী একটা এটম বোমা থেকে কম? ভাইরাসের প্রাণ আছে। সে নিজেকে বিকশিত করতে চাচ্ছে। তাতে মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও তার কিছু আসে যায় না? শুধু যে মানুষ পৃথিবী থেকে হাজার হাজার প্রাণী বিলীনের জন্য দায়ী তাই নয়। অনেক প্রাণী চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধুমাত্র মানুষের আধিপত্যের কারণে। মানুষের অবিবেচনার কারণে। তাতে যেমন মানুষের কিছু বিবেচনা জাগেনি তেমনি করোনা ভাইরাসেরও বিবেচনা জাগবে না।
প্রাণের এই বিকাশের শক্তি কিংবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি, বা নিজেকে ছড়িয়ে দেবার শক্তি তাকে অপ্রাণ থেকে আলাদা করেছে। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। বিরাট আকৃতির হাতি বা তিমি থেকে শুরু করে অতিক্ষুদ্র ভাইরাস-ব্যক্টেরিয়া বা এককোষী এমিবা সকলেই প্রাণের শক্তিতে বলিয়ান। বিশাল উড়োজাহাজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাকে প্রয়োজন হয় মানুষের বা প্রাণের শক্তির। অথচ ছোট্ট টুনটুনি কত সহজে উড়ছে, ঘুরছে, ডালে বসছে আবার ডাল থেকে উড়ে দূরে চলে যাচ্ছে। এই যে স্বাধীন বিচরণ ক্ষমতা বা গাছের বৃদ্ধির ক্ষমতা, যা স্বতঃস্ফূর্ত, তা কি জড় বা যন্ত্রের আছে? না, নেই। তাই জড়/যন্ত্র যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তার শক্তি প্রাণের শক্তির কাছে তুচ্ছ।
কবি দীপক সাহা তার বৃষ্টি নামে বৃষ্টি থামে’ বইটিতে এই প্রাণশক্তির উদাহরণ দিয়ে ‘ঘুড়ি আর চিল’ নামের একটি চমৎকার কবিতা লিখেছেন।
মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ওড়ে
ঘুড়ি আর চিল
দুজনেরই ভাব জমে
হেসে খিলখিল।
এত উড়ে উড়ে চিল
ক্লান্তিতে হায়
নেমে এসে উঁচু গাছে
খুঁজে নেয় ঠাঁই।
ঘুড়ি হেসে বলে, `চিল,
শেষ নাকি দম
এত খাও তবু কেন
শক্তিটা কম।
শক্তি কি বোঝো তুমি
চিল কয় হেসে
পারলে প্রমাণ দাও
নিচে নেমে এসে।
অনেক চেষ্টা বৃথা
হলো ঘুড়িটার
শক্তিটা কোথা যেন
বাঁধা আছে তার।
চিল বলে, কি-গো ঘুড়ি
পারলে নাতো
তোমায় রেখেছে বেঁধে
নাটাই সুতো।
এই যে `নাটাই সুতো`র বন্ধন, এটাই জড়/যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা। এখানে, এই একটি জায়গায় প্রাণ মুক্ত, প্রাণ স্বাধীন। প্রাণীর আছে নিজস্ব বুদ্ধি। বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে প্রাণ স্বতন্ত্র। শিশুসাহিত্যিক দীপক সাহার এ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালে। প্রকাশের পর থেকে যতবার বইটি পড়েছি, ততবারই ভালো লেগেছে। এই দশবছরে পাঠকের মৃত্যু হয়নি। ভালো বই, ভালো লেখা চিরকালীন। যুগ বা দশকের ঘূর্ণাবর্ত থেকে ভালোকিছু সবসময়ই মুক্ত থাকে।
বইটির আরেকটা বড় বৈশিষ্ট্য আছে, যা খুব কম বইয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। আর সেটি হচ্ছে, বইটির চমৎকার প্রচ্ছদ ও অলংকরণ লেখক নিজেই করেছেন। নিজের বইয়ের প্রচ্ছদ-অলংকরণ নিজে করা চাট্টিখানি কথা নয়। আমি বইটির পাঠমুগ্ধ একজন। নিশ্চয় আপনাদেরও বইটি ভালো লাগবে। প্রিয় শিশুসাহিত্যিক দীপক সাহা লিখেছেন ছোটদের গল্পের বই `লাল শেয়াল ও সিংহের গল্প`। বইটিতে তিনটি গল্প আছে। প্রথম গল্পটি বন্ধুত্বের গল্প। খাদ্য ও খাদকের মধ্যেও বন্ধুত্ব হতে পারে। বন্ধুত্ব হতেও পারে দুই অসম শ্রেণিরর মধ্যেও। যদি মনের মিল থাকে। যদি ভালোবাসা খুব দৃঢ় হয়। ভালোবাসার শক্তি উঠে এসেছে এ গল্পের মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় গল্পটি একটি ছেলেকে নিয়ে। যে তার সরল বুদ্ধির জন্য, কিছুটা অটিজম থাকার জন্য, সমাজে হাবলু নামে পরিচিত। সেই হাবলুর দেশপ্রেম নিয়ে লেখা অসাধারণ গল্প এটি। দেশপ্রেম থাকলে একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলেও যে কত বড় কাজ করতে পারে, সেই ম্যাসেজটিই পেয়েছি `দেশপ্রেম` গল্পে। তৃতীয় গল্পটির নাম `কাজের ছেলে`। গল্পের কাজের ছেলে মান্দারকে বাগান পরিষ্কার করার কাজ দেন গিরিবাবু। মান্দার মেহগনি বাগান পরিষ্কার করতে যেয়ে মেহগনি গাছসহ পুরো বাগান পরিষ্কার করে ফেলে। গিরিবাবু মান্দারের কাজ দেখে হয়ে যান হতভম্ব। কথার গুরুত্ব ও কাজের গুরুত্ব না বুঝে কাজ করলে, শ্রম যে পণ্ডশ্রম হয়ে যায়, সেটা এর থেকে ভালো গল্প দিয়ে বুঝান মুস্কিল। চমৎকার শিক্ষণীয় গল্প এটি।
দীপক সাহার বইটি পাওয়া যাবে বইটির প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান শিশু গ্রন্থকুটিরে ও প্রসিদ্ধ বই বিক্রয় কেন্দ্রে। মহান একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ বইমেলা থেকে কেনা বইগুলোর মধ্য থেকে প্রথমেই পড়েছিলাম প্রিয় শিশুসাহিত্যিক দীপক সাহার এক গল্পে এক বই `রিকশা চলে আকাশ পথে`। আমাদের মেলায়, আমাদের স্কুলে প্রায় গ্যাস বেলুন দেখা যায়। এ বইটি সেসব রঙিন গ্যাস বেলুনের গল্প। শিশুদের নিজেদের গল্প। শিশুদের পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশ-পরিবেশ, তাদের ভালোলাগা, তাদের ভালোবাসা আর তাদের মুখের কথা উঠে এসেছে গল্পটিতে। গল্পটি শিশুর দূরন্ত কল্পনা শক্তিকে বাড়িয়ে দেবে। শিশুতোষ এই গল্পের বইটিও পাওয়া যাবে শিশু গ্রন্থকুটিরে। প্রকাশ শিশু গ্রন্থকুটিরই করেছে।
দীপক সাহার আরেকটি বই `সিংহ রাজার মন ভালো নেই`। প্রতিভা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত এ বইটিতে এগারটি গল্প মোড়কবদ্ধ হয়েছে। বইটির প্রথম গল্প `তালা ও সিন্দুক`। পৃথিবীতে যত জীবন আমরা দেখি। এমনকি যত যন্ত্র আমরা দেখি, অথবা আমরা এ দু-চোখ দিয়ে যা যা দেখি, তার বেশিরভাগ একে অপরের পরিপূরক। আমরা অন্যের সাহায্য ছাড়া যেমন চলতে পারি না। পৃথিবীর সকলকিছুই তেমনি কোন বা কোন কিছুর পরিপূরক। অন্যের উপর এই নির্ভরশীলতা আমাদেরকে যেমন সমাজবদ্ধ রাখে। তেমনি জুড়ে রাখে প্রকৃতির সকল জীব ও জড়কে। গল্পটি এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উপর। বইটিতে `ঘোল কেলেংকারি` নামে চমৎকার একটি শিক্ষামূলক হাসির গল্প আছে। হাজারটা বাজে বইয়ের ভীড়ে দীপক সাহার এই অমূল্য গ্রন্থখানি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত।
পেটুক মাছ, পাখিপ্রেমীর মতো আরো অনেক বই আছে লেখকের। দীপক সাহা একাধারে কবি, গল্পকার, নাট্যকার, শিশুসাহিত্যিক, অলংকরণ শিল্পী, সংগঠক ও সাদা মনের মানুষ। দীপক সাহার লেখা নাটক অভয়াশ্রম এবং নদাই টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। তিনি প্রদীপের মতো আলো জ্বেলে নিত্য আঁধার দূর করছেন। আলোকিত করছেন তরুণ হৃদয়। দীপক সাহা যে সে হতে পারে না। দীপক সাহা শুধু মাত্র দীপক সাহাই হতে পারে।