
তেলআবিবে পালটা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুথি বাহিনীর
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : এপ্রিল ১৯, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ইয়েমেনের উপকূলীয় হুদায়দা শহরের বিমান হামলা চালানোর পর শুক্রবার পালটা হামলা চালায় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি। ইজরায়েলের রাজধানী তেলআবিবের উপকণ্ঠে দখলকৃত জাফায় ‘জুলফিকার’ নামের অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে হামলা চালায় হুথি যোদ্ধারা।
শুক্রবার ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইজরায়েলের বেনগুরিয়ন বিমানবন্দরের আশপাশের একটি সামরিক ঘাঁটি।”
ইয়েমেন এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এমন এক সময় চালালো যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনের উপকূলীয় হুদায়দা শহরের কয়েকটি বন্দরে বিমান হামলা চালায়। এতে ৮০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়।
ইয়াহিয়া সারি বলেন, “আমরা সম্মিলিত সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছি। যেখানে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী—ট্রুম্যান ও ভিনসনকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছি। এছাড়া ইয়েমেনি প্রতিরক্ষা বিভাগ সানা প্রদেশে একটি মার্কিন এমকিউ-৯ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়।”
যুক্তরাষ্ট্র এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে গুপ্ত নজরদারি জোরদার করেছে। একই সঙ্গে তাদের হামলাগুলোও নিয়মিত করেছে। তবে ইয়েমেনের স্বাধীন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা এই অঞ্চলে নতুন সামরিক ভারসাম্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এদিকে ইজরায়েলের দখলকৃত অঞ্চলে ছোড়া জুলফিকার ক্ষেপণাস্ত্র মূলত ইরানি প্রযুক্তিনির্ভর। এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে সরাসরি ইজরায়েলের মূল ভূখণ্ডে হামলা কেবল সামরিক বার্তাই নয়, এটি ইজরায়েলের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও।
ইজরায়েলি ভূখণ্ডে এই হামলা বিশেষভাবে প্রতীকীও। কারণ এটি বেনগুরিয়ন বিমানবন্দর এলাকা ঘিরে রাখা নিরাপত্তা বলয়ের প্রতিরোধের মুখেও আঘাত হানে। যদিও ইজরায়েলের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে এই হামলা যদি সফলভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, তাহলে তা ইজরায়েলের জন্য নতুন মাত্রার হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হবে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক স্তরে ইজরায়েল-ইরান সংঘাতের ছায়া স্পষ্টই ইয়েমেন হয়ে আরও বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।
ইয়েমেনের তরফ থেকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি এসেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও সামরিক সরঞ্জাম পাঠায় এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তাহলে আমাদের আঘাত আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চল শান্তি নয়, সংঘাতের দিকে ধাবিত হবে।
এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যে শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক আলোচনাকেও তীব্র করে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল, ইরান ও ইয়েমেন এখন এমন জটিল সমীকরণে আটকে পড়েছে, যেখানে প্রতিটি প্রতিক্রিয়া নতুন বিপর্যয়ের জন্ম দিতে পারে।
এদিন তেলআবিবের দিকে ছোঁড়া এই জুলফিকার ক্ষেপণাস্ত্র যেন শুধু ইজরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই বিশেষ বার্তা। আর তা হলো, যখন প্রতিরোধের ভাষা কানে পৌঁছায় না, তখন আকাশ পথে বিস্ফোরণ আসে।
তবে এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে শুধু আগুন নয়, এর আকাশে অনিশ্চয়তার মেঘও জমতে শুরু করেছে। সূত্র: মেহের নিউজ