তুহিন খান
তুহিন খানের কবিতা ‘তখন সন্ধ্যা’
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২১, ২০২১
সন্ধ্যাকে
তখন সন্ধ্যা, জলের শরীর ছুঁয়ে
আমরা দুজন বসে আছি একাকার
তোমার হাতের তালুতে নরম ঘাস
আমার আঙুলে বেনসন সিগারেট।
তখন সন্ধ্যা, আকাশ উধাও দূরে
বাতাস কাঁপায় তোমার চোখের ভুরু
আমার কণ্ঠে জিপসি মেয়েদের গান
তোমার গলায় বিলাসের অভিলাষ!
তখন সন্ধ্যা, পৃথিবীর কোলাহল
থমকে রয়েছে দৃশ্যের ওইপাড়ে
এপাড়ে কেবল ঘাসের সবুজে তুমি—
আমি জ্বলে আছি প্রথম সন্ধ্যাতারা।
তখন সন্ধ্যা, সময় ভুলেছে ঘড়ি
সূর্য? চন্দ্র? তাদেরও কি আছে মনে?
পিঠের দুপাশে ওড়না উড়িয়ে তুমি
বুনো উল্লাসে হয়ে গেছ প্রজাপতি।
তখন সন্ধ্যা, সন্ধ্যাই হবে ঠিক—
মানুষেরা সব জ্বেলেছে অলীক বাতি
আমি তো জোনাকি, জ্বলে আছি বিস্ময়ে
তোমার চোখের নরম অন্ধকারে!
তখন সন্ধ্যা, ভাষাহীন জনপদে
নেই যেন কিছু বলবার মতো কথা
তুমি চা খাচ্ছ, আমি টানি সিগারেট
তুমি বলেছিলে, ভালোবাসি নীরবতা!
তখন সন্ধ্যা, বিপ্লব-মতো লাগে
আমাদের এই আলেয়া দেখার দিন
মিছিল-ফেরত লোকেদের মুখে শুনি
`ফুক্কা কুল্লে নিজামিন নিজামিন`—
তখন সন্ধ্যা, তবুও ভাঙে না কিছু
বৃত্তেরা খোঁজে পারস্পরিক ছেদ
`ঘেন্না লজ্জা ভয়ে তো হবে না ভাব`
ইঙ্গিতে ঢাকো ভাষার বাড়তি মেদ—
তখন সন্ধ্যা, আমার ভেতরে ভাঙে
সুখ নয় তবু সুখের মতন ব্যথা
তোমার কণ্ঠে বুনোফুল ফুটে ওঠে
সান্ধ বাতাসে ছড়ায় আরণ্যক।
তখন সন্ধ্যা, তোমার নাকের পাটা
একটু ঘেমেছে; চিবুকে সোনালি ঢেউ—
বাঁকানো ঠোঁটের দুপাশে নরম হাসি
দেখে মনে পড়ে— এখনো ওঠেনি চাঁদ।
তখন সন্ধ্যা, আমার প্রথম কথা—
`তোর গায়ে শাদা টগরফুলের ঘ্রাণ`
তুমি হেসেছিলে কোনদিকে যেন চেয়ে
কাছেই বসেছি, তবু কী যে ব্যবধান!
তখন সন্ধ্যা, তোমার চুলের শ্লাঘা,
এলিয়ে পড়েছে ঘামেভেজা কাঁধ ঘিরে
তারপর আর কাউকে দেখিনি কেউ
সেই সন্ধ্যাটি রাত হয়ে গেছে ধীরে...