তুষার কবির

তুষার কবির

তুষার কবিরের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪

প্রথম দশকের মেধাবী কবি তুষার কবিরের আজ জন্মদিন। ১৯৭৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৪। পেয়েছেন, কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার, দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার, দাগ সাহিত্য পুরস্কার ও বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার। তুষার কবির তার কবিতায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক অভাবিত যোগসূত্র স্থাপন করেছেন তার মেধাদীপ্ত রূপকের বিভায়! তুষার কবির-এর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায়। এরপর থেকে প্রতিটি প্রধান দৈনিকে ও ছোটকাগজে তিনি সমানভাবে সক্রিয়। তার কবিতা অভিনব চিত্রকল্পে ঋদ্ধ যা খুলে দেয় একটার পর একটা ইন্দ্রিয়সমূহের দরজা! তার জন্মদিনে ছাড়পত্রের শুভেচ্ছা—

ক্যাফে বর্ষা

বৃষ্টির মাতাল শব্দ এ রেস্তোরাঁয় গান হয়ে বাজে! ধোঁয়াওড়া কফি পেয়ালায় এ রেস্তোরাঁ মেঘের ঘুঙুরে নাচে। কামিনী ফুলের ঘ্রাণে সন্ধ্যার আলোআঁধারে প্রেমিকারা এ রেস্তোরাঁয় সুনসান বসে থাকে। পিয়ানোর টুংটাং সুরে তাদের হৃদয় ডুবে যায় কাচঘেরা জলের প্রপাতে। জানালায় জলের প্রিজম কণা তাদের আঙুলগুলোতে বিভোর বেহালা হয়ে কাঁদে। বৃষ্টির মাতাল শব্দে এ রেস্তোরাঁয় জলের লিরিক শুধু বাজে!

নাবিক ও গণিকা

যে নাবিকেরা নতুন নতুন গণিকার খোঁজে নেমে যেত গন্তব্যে পৌঁছার আগেই কোনো আলোআঁধারিময় বন্দরে— দ্যাখো তারা আজ লাল পেনশন বই আর খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে জবুথবু হেঁটে যাচ্ছে এক শস্তা সরাইখানার পাশ ঘেঁষে!

শহরের যেকোনো প্রাচীন কয়েদিঘরেও ঠাঁই হতে পারত তাদের— অথচ তাদের মাথাভর্তি সমুদ্রের শব্দ আর তেল চিটচিটে অন্তর্বাসের ঘ্রাণ!

মাঝরাতে কতিপয় কয়েদী নাবিক হেঁটে যায়— জাহাজের সাইরেনে চাপা পড়ে যায় পাপ ও পতনের দাগ!

ডালিম কথন

ডালিম যৌবনা হয়ে ওঠে—
যখন তুমি দাঁড়াও তার পাশে!

ডালিম কোরক হয়ে ফোটে—
যখন তুমি ছড়াও তার কাছে!

ডালিম স্তনের মতো হাসে—
যখন তুমি হারাও সোঁদা ঘাসে!

ডালিম লিরিক হয়ে বাজে—
যখন তুমি মেলাও দূরভাষে!

মাদল

দূরের মাদল সুরে দ্যাখো ফিরে আসে রাতের অপেরা!

বাইজির ছেঁড়া ছেঁড়া জরির কাঁচুলি ঘিরে জেগে ওঠে মহুয়া মাদক নাচ। মল্লিকা অপেরা থেকে এক পিয়ন আমাকে আজ মুঠোভরা রঙিন টিকিট দিয়ে গেছে!

এ শরতে অপেরায় তুমুল বাইজি নাচ হবে; দ্যাখো নটীর নাটাই ঘোরে জমিদার বাড়ির পুরনো ছাদে।

এ শারদ সন্ধ্যায় এসো, মাদলের সুরে সুরে হাত ধরে নাচি, রাত জেগে অপেরায় চোখ খুলে বাঁচি!

সমুদ্র ও সরাইখানা

মাঝরাতে সমুদ্র আর সরাইখানাকে আমার কাছে একই বলে মনে হয়—একই রকম কলরব, একই রকম গান ও ঘ্রাণ, একই রকম ঢেউ! সমুদ্রের উপচানো ফেনাকে মনে হয় গেলাসে গেলাসে জমা তরল আরক!

এক সমুদ্রসারস ধীর লয়ে ডানা মেলে উড়ে যায় মাস্তুলের ফুঁসে ওঠা গ্রীবা চিরে—নীল জলরাশি ছুঁয়ে তার রৌদ্রঘ্রাণ যেনবা আছ্ড়ে পড়ে মর্চে পড়া ডকইয়ার্ডের তীরে!

বাইরে সৈকত থেকে কিছুটা দূরেই এক সহিস আমার জন্যে অপেক্ষা করছে তার রোমশ শ্বেতাভ ঘোড়া নিয়ে—সে আমাকে পৌঁছে দিবে লণ্ঠন জ্বালানো এক পানশালায়—যেখানে ক্রিস্টাল লবণের ঘ্রাণে আর স্ফটিক নারীর শাদা অন্তর্বাসে ভেসে বেড়ায় শুধু সমুদ্রের স্রোতকান্না!