তুষার কবিরের তিনটি কবিতা

প্রকাশিত : জুলাই ২২, ২০২৩

রেস্তোরাঁ

 

বরং তুমি সেই রেস্তোরাঁর কথাই বলো যার ঝাড়বাতিগুলো জেগে ওঠে মাঝরাতে কোনো ভগ্ন বেহালার সুরে— যার আবলুশ রেকাবির পর জেগে থাকে নীলচে নরম নাশপাতি— ফেটে যাওয়া আনারের দানা— রক্তিম গেলাসে যার ঘুরতে থাকে আঙুরের রস, মদ, মোহ, মায়া— ঘুমের গহিনে যাতে বেজে যায় সুরময় ক্যানেস্তারা! বরং তুমি সেই রেস্তোরাঁর কথাই ভাবো, যেখানে বিষাদমাখা প্রেমিকাগণ বসে থাকে ঠাণ্ডা রিস্টওয়াচ হাতে— যেখানে ঘুরতে থাকে সারি সারি মেঘের পয়ার— পিরিচে আর চায়ের কাপে যেখানে উড়তে থাকে চকমকি প্রজাপতি— রাতভর বেজে যায় যে রেস্তোরাঁয় শুধু প্রেমের প্রমাদ— গহিনে বাজতে থাকে শুধু এক ঘুমচেরা সেরেনাদ!

 

হিমবাক্স

 

এ শীতে আমাকে ডেকে যাচ্ছে শুধু
প্রান্তরের হরিৎ হাওয়া
বিকেলের ধূলিচিত্র
ফেলে দেয়া দূরের কিন্নরী!

 

আর আমি ধীর পায়ে হেঁটে চলি
শীতলাগা মেথরের মতো;

 

কুয়াশার ক্যারাভান ছেড়ে
এই শীতে আমি হেঁটে চলি
জেগে ওঠা খড়ের গাদায়—
ধূসরিম নদীর কিনারে!

 

দেখি কোনো এক শীতপিয়নের হিমবাক্সে
নৈঃশব্দ্যের ধূলিখামে
ছোট ছোট প্রেমের হরফে
কে যেন লিখছে শুধু
অসমাপ্ত শীতসমাচার!

 

দ্যাখো প্রান্তরের কুয়াশারা এখন মুদ্রিত;
বিষণ্ণ ছাপাখানায়
লণ্ঠনের নীলাভ রেখায়—
শীতগ্রস্ত কবিগৃহে!

 

কলঘর

 

জল পতনের শব্দ
যেভাবে আছড়ে পড়ে কলঘরে
স্নানরতা যুবতীর মোহ চিরে—

 

যেভাবে ছিট্কে পড়ে দুপুরের তরঙ্গ বিভ্রম
ফেনাওঠা স্নানঘরে
সাবানের মুদ্রিত বেদনা বুকে নিয়ে—

 

বিষণ্ণ লোবান যে ঘ্রাণে
হঠাৎ জেগে ওঠে
কর্পূরের মায়াকান্না চোখে নিয়ে—

 

সেই সব সুর, ঘ্রাণ আর ধ্বনি চিরে
জেগে ওঠে আমার ঘুমন্ত রাত্রি—
তোমার বিপন্ন কলঘরে!

 

কবি পরিচিতি
জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬। শিক্ষা: এম.বি.এ. (মেজর ইন মার্কেটিং)। সম্মানসহ স্নাতকোত্তর (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কাব্যগ্রন্থ: বাগ্দেবী আমার দরজায় (২০০৬), মেঘের পিয়ানো (২০০৭), ছাপচিত্রে প্রজাপতি (২০০৮), যোগিনীর ডেরা (২০০৯), উড়ে যাচ্ছে প্রেমপাণ্ডুলিপি (২০১০), কুহক বেহালা (২০১২), রক্তকোরকের ওম (২০১৪), ঘুঙুর ছড়ানো ঘুম (২০১৫), তিয়াসার তৃণলিপি (২০১৬), হাওয়াহরিৎ গান (২০১৭)। কবিতা-বিষয়ক প্রবন্ধ: কুঠুরির স্বর (২০১৬)।
সম্মাননা: ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১৬’ ও ‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০১৫’