তানভীর রাতুল

তানভীর রাতুল

তানভীর রাতুলের ৪ কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ২৭, ২০২২

দুই শয়তানের মধ্যে কম

দুই শয়তানের মধ্যে কম
হলো ভালো আর মন্দের মোবাইল সংস্করণ
ইহা শুরু হয় একটা ভালো পুলিশ আর একটা খারাপ পুলিশ দিয়ে
তারপর ভালো ঠোলা ভাগে আর আরেকটা আসে
যে কিনা প্রথম খারাপ থেকেও খারাপ
অতএব পুরনো খারাপ পুলিশ হয়ে যায় নতুন ভালো পুলিশ
মুখোমুখি তার নতুন খারাপ পুলিশ
কিন্তু এরপর পুরনো খারাপটা যে কিনা এখন নতুন ভালো পুলিশ
চলে যায়
আর আরেকটা পুলিশ আসে
যে কিনা নতুন খারাপ পুলিশের চেয়েও খারাপ
তাই নতুন খারাপ পুলিশ এখন নব্য নতুন ভালো পুলিশ
সম্মুখিন তার নব্য নতুন খারাপ পুলিশ
যতক্ষণে নব্য নতুন ভালো পুলিশ যায়
আর আরেকজন আসে
যে কিনা নব্য নতুন খারাপের থেকেও মন্দ
সুতরাং নব্য নতুন খারাপ হয়ে যায় নব নব্য নতুন ভালো
বিপরীতে তার নব নব্য নতুন খারাপ
আর এই খেলা চলতেই থাকে
বোঝাই যায়, কিভাবে শশাঙ্ক থেকে এরশাদ হয়ে পালাক্রমে প্রধানপাগলা
একই খেলা সহজেই নবি থেকে শুরু হয়ে নিয়ে আসে নব্যরাজাকার
আর যেহেতু জগতে শয়তানের (আর ভালোর) অভাব নেই
এই চক্র আজীবন চলবেই
যদি না আমরা এই বালছাল খেলা বন্ধ করে
লড়াই শুরু করি...

হারানো পৃথিবী

ভাবুন যদি একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জগতে বাস করেন
এবং আপনার আকাশ ভরা থাকে মেশিন এলিয়েন
যদি ভিনগ্রহের প্রাণীরা পৃথিবী শাসন করত
যদি লাঠিসোটা-পাথর নিক্ষেপ দিয়ে করা হয় পাল্টা লড়াই
মেশিন করতে আসবে আপনাকে জবাই
কিন্তু যদি লুকিয়ে থাকা হয় তারা আপনার সন্তানের জন্য আসবে
 
যদি বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে বাস করেন ভাবেন তাহলে কী হবে
ভিনগ্রহের প্রাণী এবং তাদের হত্যার যন্ত্রের সাথে,
এবং প্রতিরোধের একমাত্র সম্ভাবনা,
যদি প্রতিশোধের একমাত্র উপায় হয় ব্যথার বদলে বেদনা…
যদি আপনি যে এলিয়েন ধরতে পারেন তা শুধুই
ভিনগ্রহের শিশু
আর ধরেন ভিনগ্রহের শিশুরা যত
হয় যদি নিষ্পাপ
এবং মিষ্টি
ঠিক যেন আপনার নিজেরটারই মতো

কবি

কবি কী করে হয়?
চিন্তার বক্তব্য,
কল্পকাহিনির দক্ষতা,
নাকি আবেগ জাগানোর কারিশমা?

নাহ।
এইসব গুণাবলি পুণ্য এবং দুর্বৃত্ত উভয়ই।

জয়প্রিয় নেতাগুলো তাদের দুষ্ট উদ্দেশ্য অস্পষ্ট করতে শব্দকে জটিল করে তোলে,
তবে কবিরা তাদের নগ্ন, জটিল সত্যকে উপহার হিসেবে সাবধানতার সাথে শব্দ বুনন করে।
সততা হলো কবির শব্দের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করার প্রলোভনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।

এবং, এই এখানে আমি, সততার সাথে এক কেবলা কবি।
মঞ্চে আমাকে উত্সাহী, স্বতন্ত্র, সাহসী আর অনুপ্রেরণামূলক মনে হয়,
তবে আমি সত্যিই এক কাপুরুষ যিনি আপনার সাথে আর কীভাবে কথা বলতে হয় জানে না।

কারো সাথে একা ভালোমন্দকথা বলার জন্য শত শত শ্রোতার সামনে ভাষণ দেওয়ার চেয়ে আরও সাহসের প্রয়োজন আমার, যা আমি কখনও করিনি এবং সম্ভবত কখনও করবও না।

প্রতিটি কাব্যপাঠের আগে, আমি এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করি,
কারণ আমার ক্ষুদ্র ঘর থেকে এই ক্ষুদ্র পাঠ-পর্যায়ে যাত্রা সম্পর্কে ভয়।

মনে হয় মানুষের নদী পার হয়ে সাঁতার কাটা আমার মতো ভীরু অভিজাত কাঁকড়ার পক্ষে এক অসম্ভব অভিযান।
সম্ভবত আমি বন্ধুত্বকে এত গুরুত্ব সহকারে নিই যে বিশ্রী সূচনা-সূত্রপাতের পক্ষে দাঁড়াতে পারি না।

আমি এখনও ছোট বাচ্চা, যখন বড়ভাইয়েরা আমাকে তাদের সাথে খেলতে আমন্ত্রণ জানাতো তখন যে পেছনেই সবসময়।

এবং, আমার মধ্যে এই সামান্য অন্তর্মুখী স্বভাবে খুব সহজেই স্থায়ী হয় ভাষার সীমানা।
প্রতিবার সহজ বাক্যাংশ বলার আগে, যেমন ‘ক্ষমা করুন’,
আমি কমপক্ষে আমার মাথায় তিনবার এর সমালোচনাটি অনুশীলন করি এবং তারপরও মুখচোরা।
তবে মঞ্চে এটা বলতে আমার কোনও সমস্যা নেই: ‘ক্ষমা করুন’

মাথায় যখন রসিকতা আসে, আমি তা কেবল দমন করি কারণ মনে হয় যে আমার শব্দচয়ন এটাকে নিরাপদে অবতরণ করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।

আমি কেবল ফোনে শব্দ বুঝতে পারি না বলেই কারো ফোনও ধরি না।
এমনকি এখন, আমি যদি বসে বসে এই কবিতাটি পড়তে শুনি তবে আমার কথা আমি নিজেই বুঝবো না।

তবুও, মনে রাখবেন, হোমার তার রচনাগুলি না দেখেই লিখেছেন,
এবং কোনও ফুল কখনও নিজেকে দেখে না তবুও আমরা তাদের সুন্দর বলি।
পরকীকরণ আমাদের থেকে মানুষের সাথে যোগাযোগের ক্ষমতা কেড়ে নেয় না।
আমার শব্দগুলো কবিতায় পরিণত হয় যখন আপনি শ্রোতা এগুলিকে প্রিয় করে গ্রহণ করেন,
এবং আমি জানি যতক্ষণ আমি সৎ ততক্ষণ আপনি তা করবেন।

আর যদি কখনও আমার মতো বোধ করেন তবে দয়া করে আপনার সততা দিন,
তারপরে আমি আপনাকে বানাবো এক কবি।
আপনার কাহিনি এবং অকাহিনিগুলো শুনবো,
শুনবো আপনার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি নীরব উচ্চারণ এবং প্রতিটি সততা,
বারবার আবার বারংবার, যদি না আমি বুঝে উঠতে পারি একবারে আপনার কবিতা

প্রতিদিনের অসন্তুষ্টি

এটি আমাদের সমালোচনামূলক মুহূর্ত, সমালোচনামূলক লড়াই।
আমি প্রতিদিনের অসন্তুষ্টি, প্রতিদিনের অসন্তুষ্টির জন্য করি গান।

আমি যদি স্বৈরাচারী হতাম, আমি চাইতাম আপনি ভাবেন আপনার কিছু করার ক্ষমতা নাই।
আমি যদি মালিক হই, চাইব যে ভয় পান অন্যকেউ চাকরি কেড়ে নেবে।
আমি যদি রাষ্ট্রপতি, আমি চাই আপনি অন্যদের করুন ঘৃণা প্রদান।
আমি যদি পুলিশ, আমি চাই আপনি জানুন, যে আমি চাইলেই আপনাকে যে কোনও সময় করতে পারি খুন।

তবে আমি সত্যি কথা বলতে পারা যথেষ্ট কাব্যভনিতা।
তবে আমি জ্ঞানীর ভান করা বোকা অভিনেতা।
তবে আমি এমন নৃত্যশিল্পী যা যথেষ্ট স্বাধীন।
তবে আমি এতটুকু গায়ক যে শান্তির জন্য কান্না পারি নীরব কণ্ঠহীন।

যখন তোমার কোনও আশা নেই, সামনে না। ভিতরে তাকাও।
যখন তোমার কোনও কাজ নেই, প্রতিটি মুহূর্ত পুরোপুরি মানুষ হও।
যখন তোমার স্বপ্ন নেই কোনও, তখনো আশ্চর্য হয়ে শোনো, মহাবিশ্বের দিবানিশি।
যখন তোমার প্রেম নেই কোনও, আমি তোমাকে ভালবাসি, ভালোবাসি, আমি তোমাকেই ভালোবাসি...

কবি পরিচিতি: ড. এস. তানভীর রাতুল; এফআরএসএ, এফআরএসএল
অধ্যাপক, স্কুল অব হিস্টোরি, ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার (ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি);
পরিচালক, সেন্টার ফর নিউ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়