তানভীর রাতুরের প্রবন্ধ ‘লিঙ্গ পরিচয়ের ভূমিকা’
প্রকাশিত : মে ১৫, ২০২৩
পুরুষ লিঙ্গ ও মহিলা লিঙ্গ, বিশেষত যখন জৈবিক বিষয়গুলির পরিবর্তে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য-কাঠামোর মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়, তখন পুরুষ ও মহিলার প্রতিষ্ঠিত ধারণাগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন অন্যান্য পরিচয়গুলিও যৌক্তিক বলে মনে হয়। লিঙ্গপরিচয় বলতে মেয়ে, নারী, ছেলে, পুরুষ এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যতাপূর্ণ মানুষের সামাজিকভাবে নির্মিত ভূমিকা, আচরণ, অভিব্যক্তি ও পরিচয়কে বোঝায়। এটি মানুষের নিজেকে এবং একে অপরকে উপলব্ধি করা, মানুষ ক্রিয়া, মিথস্ক্রিয়া এবং সমাজে ক্ষমতা ও সম্পদের বণ্টনকে প্রভাবিত করে।
লিঙ্গ পরিচয় কোনো দ্বিমূল/বাইনারি (মেয়ে/মহিলা, ছেলে/পুরুষ) দিয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বা এটি স্থিরও নয়; এটি একটি ধারাবাহিকতার পথে বিদ্যমান এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিতও হতে পারে। ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী কীভাবে তাদের ভূমিকা গ্রহণ করে, তাদের উপর রাখা প্রত্যাশা, অন্যদের সাথে সম্পর্ক এবং সমাজে লিঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জটিল উপায়গুলির মাধ্যমে কীভাবে লিঙ্গকে বোঝে, অনুভব করে এবং প্রকাশ করে, সেসবেই যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে।
তথাকথিত লিঙ্গধারণা শ্রেণিবদ্ধতা এবং অসমতা তৈরি করে যা অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে মিলিত হয়। লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য অন্যান্য নিপীড়ন, যেমন জাতিগত, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শারীরিক অক্ষমতা, বয়স, ভৌগলিক অবস্থান, নারীঅধিকার এবং যৌন স্বাধীনতার মতো কারণগুলি সাথে আন্তঃবিভাজন সৃষ্টি করে।
`লিঙ্গ পরিচয়` এক জটিল এবং বৈচিত্র্যময় বর্ণালীর মতো। কেউ যদি নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করে অথবা ভাবে যে সে লিঙ্গসন্ধিহান বা লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে অনিশ্চিত, তাহলে বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য কিছু উপায় রয়েছে। কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে নিজস্ব লিঙ্গ পরিচয় পুরুষ বা মহিলার ঐতিহ্যগত বিভাগ-বিভক্তির মধ্যে খাপ খায় না। কেউ হয়তো নিজেকে তরল বা বিভিন্ন লিঙ্গপরিচয়ের মধ্যে ভাসমান বা ভ্রাম্যমাণ মনে করতে পারে, এক লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে স্থানান্তরিত বা দুইভাগবিশিষ্ট বাইনারি সংজ্ঞার সম্পূর্ণভাবে বাইরেও নিজেকে ভাবতে পারে।
কারো জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ নিয়ে পরবর্তীতে অস্বস্তি বা অনুতাপ অনুভব হতেই পারে। এটা নিজস্ব লিঙ্গ পরিচয় এবং নিজের শরীরের শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্নতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, যা কিনা একজনকে পরিচালিত করতে পারে শারীরিকভাবে-অসঙ্গতিময় অনুভূতির দিকে।
কেউ ঐতিহ্যগতভাবে পালিত লিঙ্গ ভূমিকার সাথে সম্পর্কিত সামাজিক প্রত্যাশার প্রতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনোভাব বোধ করতে পারে। কেউ পোশাক, চুলের বিন্যাস বা জীবনের অন্যান্য আগ্রহ সম্পর্কিত প্রচলিত লিঙ্গ নিয়ম প্রত্যাখ্যান করতে পারেন এবং নিজেকে এমনভাবে প্রকাশ করতে পছন্দ করতে পারেন যা নিজের কাছে খাঁটি মনে হয়।
মনে রাখতে হবে, লিঙ্গ পরিচয় প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত এবং অনন্য। প্রশ্ন করা, অন্বেষণ করা এবং যা নিজের কাছে সত্য বলে মনে হয় সেভাবেই নিজের লিঙ্গ পরিচয়কে সংজ্ঞায়িত করা উচিত।