ড. তানভীর রাতুল
ড. তানভীর রাতুলের দর্শনগদ্য ‘চরম সংস্রব বা দৃঢ় উদ্বেগময় ভালবাসা’
প্রকাশিত : জুন ১১, ২০২২
ঐক্যবদ্ধ বা একতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা ইঙ্গিত করে, অনেক সময়ই একজন তার প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে আদরযত্ন করা বা যত্নশীল-দায়িত্ববান হওয়াটাকেই ভালোবাসার অংশ বলে মনে করে। জোরালো উদ্বেগ বা চরম সংস্রবময় প্রেমের দৃষ্টিভঙ্গি এটাকেই ভালোবাসার কেন্দ্রীয় এবং সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য হিসাবে ধরে নেয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, যদি একজন ব্যক্তি ক, আরেকজন ব্যক্তি খ-কে ভালবাসে তাহলে ক সুবিধা বা কল্যাণ করার লক্ষ্যেই খ-এর সাথে থাকতে চায়। তারমানে, ক-এর এই ধরনের বা অন্তত কিছু একটা চাওয়া বা ইচ্ছা আছে। কারণ ক বিশ্বাস করে, খ-এর কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি যেমন: অ, আ, ই, ঈ ইত্যাদি রয়েছে, যেসব ক-এর কাছে মূল্যবান মনে হয়। ক সেইসব সুনিশ্চিত বৈশিষ্ট্যের স্বার্থরক্ষার্থেই খ-এর সাথে থাকতে চায়। ক এইসব ইচ্ছা-বাসনাকেই সন্তোষ বা পরিতৃপ্তির পরিণতি বা গন্তব্য হিসাবে মনে করে। অন্য কোনো গন্তব্য বা প্রান্তে যাওয়ার উপায় বা পন্থা হিসেবে নয়।
একতাবদ্ধ তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দু বা মুখ্য যুক্তিই হলো যে, প্রেমকে বুঝতে হয় আক্ষরিক বা রূপক আমরা সৃষ্টির প্রেক্ষিতে বা শর্তাবলিসমেত। অন্যজনের প্রতি একজনের সংস্রব বা উদ্বেগটা যে একজনের নিজের খাতিরেই গঠিত হয়— এই ভাবনাটা ধারণ করতে গিয়েই দৃঢ় উদ্বেগের দৃষ্টিভঙ্গি ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের মূলবক্তব্যটা প্রত্যাখ্যান করে: একজনই সেই ব্যক্তি যার অন্যজনের জন্য চিন্তাচেতনা আছে। যদিও সেই চিন্তাশীল-উদ্বেগ নির্লিপ্ত, তবুও ততটা অহংকারী নয় যতটা দম্ভ অন্যজনের নিমিত্তে না হয়ে একজনের নিজস্ব স্বার্থের জন্য হয়।
জোরালো উদ্বেগ বা সংস্রব তত্ত্বের কেন্দ্রীয় ধারণাটাই এই যে, প্রেম অনুভূতিমূলক বা জ্ঞানীয় নয়। এটা স্বেচ্ছাকৃত বা ঐচ্ছিক। একজন ব্যক্তি অন্যজন বা লক্ষ্যবস্তু নিয়ে যে চিন্তা করে বা সেটাকে ভালোবাসে তা আসলে সেই প্রেমের লক্ষ্যবস্তুটা একজনকে কী অনুভব করায় বা একজন অন্যজনের বিষয়ে কেমন মতামত পোষণ করে সেই কারণে যতটা না তার চেয়েও বেশি এই কারণে যে, সেই দুজনের আমরা সম্পর্কের স্থিতিশীল অনুপ্রেরণামূলক কাঠামো বা সংস্থানই একজনের পছন্দের অগ্রাধিকারগুলোকে রূপদান করে এবং আচরণের দিক-নির্দেশিকা এবং সীমানা নির্ধারণ করে।
প্রিয় অন্যজনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেমে পড়ার ঘটনাটা যেভাবে দেখা যায়, আংশিকভাবে সেটার প্রতিক্রিয়ায় এই তত্ত্ব অন্যজনের প্রতি যত্নশীল মনোভাবকে নির্দিষ্ট উপায়ে অনুপ্রাণিত হওয়া হিসাবে বিশ্লেষণ করে। অবশ্যই আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে ভালোবাসাকে দেখা বা বোঝার মানে এই নয় যে, অন্যান্য মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলোর কথা ধর্তব্যে না নেওয়া। কারণ সেই অন্যান্য প্রতিক্রিয়াগুলো আসলে আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছারই পরিণতি। এইভাবে, একজনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা বা আশাগুলির মধ্যে যে কোনো একটা ভগ্ন হলে একজন যেমন আবেগগতভাবে চূর্ণ বা হতাশ হতে পারে, তেমনি একজনের প্রিয় অন্যজনেরও কোনো চাওয়া বা ইচ্ছা অসফল হওয়ার হতাশাও একজনকে একই রকম মানসিক আঘাতে বিচূর্ণ করতে পারে। আর স্পষ্টভাবে, একজনের অন্যজনের জন্য যত্ন বা খেয়াল নেওয়ার ফলে একজনের পরিচয় তার প্রিয় অন্যজনের প্রভাবের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়। কারণ সেই অন্যজনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা বা জিনিসগুলির জন্য একজন দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে সব দৃঢ়-উদ্বেগ তাত্ত্বিকরা এই কথাটি গ্রহণ করেন বলে মনে হয় না। বিশেষ করে কারো কারো মতে, মানুষের মনে একটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ববাদী ধারণা থাকে যা একজনের পরিচয়কে প্রিয় অন্যজনের সাথে এইভাবে আবদ্ধ হতে বাধা দেয় বা প্রতিবদ্ধকতা তৈরি করে। এমন ধরনের মতবাদ স্বজ্ঞাত বা স্বজ্ঞালব্ধভাবে যে গভীরতায় মানুষ ভালোবাসা আছে বলে মনে করে বা খুঁজে পায়, সেটাকে অবমূল্যায়ন করে। আবার মধ্যপন্থীরা প্রেম বোঝার জন্য থমাস অ্যাকুইনাসকে অনুসরণ করে শুধুমাত্র একজনের প্রিয় অন্যজনের মঙ্গলকামনা বা আকাঙ্ক্ষাই নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট ধরনের যোগসূত্র বা সম্পর্কের-আকাঙ্ক্ষাকেও জড়িত করতে। একজনের প্রিয় অন্যজনের সাথে সম্পর্ক— উদাহরণস্বরূপ, পিতা-মাতা বা পত্নী বা ভাইবোন বা পুরোহিত বা বন্ধু হিসাবে—এমন একটি সম্পর্ক যার গণ্ডির মধ্যেই একজন নিজেকে বা সত্তার অংশগুলোকে বণ্টন করে দেয় এবং একজন নিজেকে তার প্রিয় অন্যজনদের সাথে সংযুক্ত করে।
চরম সংস্রবসম্বলিত এই উদ্বেগজনক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে উদ্বেগের ও মাথাব্যথার একটি উৎসই হলো যে, এটি একজনের ভালোবাসার লক্ষ্যবস্তু বা অন্যজন সম্পর্কে বোঝাপড়াটা খুব নিষ্ক্রিয় উপলব্ধির সাথে পরিবেশন করে। মাথাব্যথার কারণটা হলো যে, জোরালো সংস্রব বা উদ্বিগ্ন মনোভাব অনুসারে, একজন কেবলমাত্র অন্যজনের মঙ্গল কীসের মধ্যে নিহিত তা আবিষ্কার করার চেষ্টা করে এবং তারপরে সেটা প্রচার বা বর্ধিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হয়তো ভালোবাসার লক্ষ্যবস্তু অন্যজন মনে করতেই পারে যে, একজনের এই প্রচেষ্টাগুলি আসলে মঙ্গলকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং অন্যজনের নিজস্ব প্রচেষ্টাকেই প্রতিহত করছে। অসম্মানজনক ও অবমাননাকর এই মনোভাব আর যাই হোক, ভালবাসার মতো নয়। দৃঢ় উদ্বেগের দৃষ্টিভঙ্গিগুলিতে যে বিষয়টা নিরুদ্দিষ্ট তা হলো, ভালোবাসা যে প্রক্রিয়ায় আন্তঃযোগাযোগ বা মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে প্রেমিকপ্রেমিকাদের জড়িত বা আবদ্ধ করে, যেভাবে প্রত্যেকেরই থাকে স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতাসহ স্বীকৃতি এবং প্রবৃত্তি যার সাথে প্রেমের সার্বিকতার একটি অপরিহার্য অংশ জড়িত। এর জবাবে, উদ্বেগী প্রেমের প্রবল ভক্তটা উল্লেখ করতে পারে যে, কারো মঙ্গল কামনার জন্য সাধারণত তার ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রচার করা জরুরি। যদিও চাইলে একথার বিপরীত অবস্থানও খুঁজে পাওয়া যায় যে, এটি সর্বদা সত্য নয়। যেমন, কারো প্রতি একজনের পিতৃত্ববোধ কখনো কখনো ভালোবাসার ন্যায্য ও উপযুক্ত অভিব্যক্তি হতে পারে। তবে পিতৃতন্ত্রের সামগ্রিকরূপের সংজ্ঞা দিয়ে এটাকে পর্যালোচনা করা অনুচিত। তদুপরি, সম্ভবত মনে করা যেতেই পারে যে, কোনো কোনো মানুষ কেবলমাত্র স্বায়ত্তশাসন বা ব্যক্তিস্বাধীনতার অনুশীলনের মাধ্যমেই ব্যক্তি হিসাবে নিজের মঙ্গল বা আকাঙ্ক্ষাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। মানে, একজন প্রেমিক বা প্রেমিকার অন্যজনের নিজস্ব স্বায়ত্তশাসনকে সম্মান করতে ব্যর্থ হওয়াটাই অন্যজনের মঙ্গলকামনায় বা স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার সামিল। আর তাই এটা প্রেমের অভিব্যক্তি নয়। ফলস্বরূপ, এটি মনে হতেই পারে যে, দৃঢ় উদ্বেগ তত্ত্ব ব্যক্তি বা সত্তা হওয়া এবং ব্যক্তিগত মঙ্গল সম্পর্কে একটি সমৃদ্ধ ধারণা প্রদান করে এই আপত্তির মোকাবিলা করতে পারে।
দৃঢ় উদ্বেগের দৃষ্টিভঙ্গি সমালোচনায় প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এটা প্রেমের ধারণার খুব পাতলা-শীর্ণ বিবরণ প্রদান করে। প্রচণ্ড উদ্বেজন বা দুশ্চিন্তা ওপর জোর দিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রেমের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয় অন্যান্য যেসব বিশেষকগুলি, যেমন একজনের প্রিয় অন্যজনের প্রতি আবেগগত প্রতিক্রিয়া, ইত্যাদিকে প্রেমের উপাদান ভাবার পরিবর্তে সেগুলোকে উদ্বেগেরই প্রভাব মনে করে। এইভাবে, দৃঢ় উদ্বেগের দৃষ্টিভঙ্গি, ভালোবাসাকে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন, যেমন: প্রিয় অন্যজনের কল্যাণ, করার বিষয় হিসাবে বোঝার মাধ্যমে, প্রেমকে নিছক সংগতিশীল অনুরক্তি বলে উপস্থাপণ করে। যাই হোক, ভেবে দেখলে আকাঙ্ক্ষার সাথে ভালবাসার কোনো সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো একটি ঝামেলাপূর্ণ আত্মীয়-সম্পর্ক বা এমন কারো সাথে সাময়িক প্রেম বা প্রেম করার সম্ভাবনা বা প্রস্তাবনা সেখানে একজন সত্যিকার অর্থে থাকতে চায় না, অথবা যার মঙ্গল বা স্বার্থ প্রচারের কোননো অভিপ্রায়ই একজনের নেই, ইত্যাদি। একইভাবে যুক্তি দেয়া যায় যে, এই ধরনের উদ্দেশ্যবাদী বা পরমকারণমূলক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রেমকে এতটা রহস্যময় করে তোলে যে, একজন অন্যজনকে ক্ষতি বা উপকারের ঊর্ধ্বে চলে যাওয়া যে মৃত্যু, সেটার পরেও ভালোবাসতে পারে। তদুপরি আরো যুক্তি আসতে পারে যে, প্রেম যদি প্রকৃতই একটি আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছা, তাহলে এর অর্থ হলো কোনো কিছুর অভাব। তবুও ভালবাসা এটা দিয়ে বোঝানো যায় না। কারণ প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করা যায় এমন সময়ে যখন মানুষ আসলে তাদের জীবনকে সবচেয়ে সম্পূর্ণতায় কোনো কিছু অভাব ছাড়া অনুভব করে। ফলস্বরূপ বলা যায় যে, প্রেমে একজনের তার প্রিয় অন্যজনের জন্য মঙ্গলকামনায় কোনো আকাঙ্ক্ষা বা উদ্বেগ জড়িত নয়।
তবে এই উপসংহারটি খুব ত্বরিত ও হঠকারী বলে মনে হয়। কারণ এই ধরনের উদাহরণগুলোতে উপস্থাপিত সমস্যাগুলো দৃঢ় উদ্বেগের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সমন্বয়বিধানের মাধ্যমেই মিটমাট করা যেতে পারে। যেমন, একজনের ঝামেলাপূর্ণ-আত্মীয় বা সম্পর্কের জন্য উদ্বেগ উপস্থিত হয়তো থাকে তবে অন্যান্য আরো শক্তিশালী এড়ানোর আকাঙ্ক্ষা দ্বারা আচ্ছন্ন। বাস্তবিকপক্ষে, একজন কিছুটা হলেও সেই ঝামেলাযুক্ত অন্যজনের উপকার বা স্বার্থরক্ষা করতে চায় এই ধারণাটি বজায় রাখা। কাউকে ভালোবাসা এবং কাউকে সাহায্য করতে না চাওয়ার মধ্যে ধারণাগত সীমারেখার উত্তেজনার বোঝার জন্য অপরিহার্য বলে মনে হয়। এই চিন্তাগণ্ডির সীমানা অনেক তাত্ত্বিক পুরোপুরি স্বীকার করেন না। একইভাবে, মৃত কারো প্রতি অবিরত ভালোবাসাটা দৃঢ় উদ্বেগের দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত ব্যক্তিটির প্রতি জীবিত থাকাকালীন একজনের আগের ভালোবাসার পরজীবী হিসাবে ভেবে নেয়া যেতে পারে। কর্মোদ্ধারের অসম্ভবতা সম্পর্কে বোধগম্যতাই মৃত প্রিয় অন্যজনের প্রতি জীবিত একজনের মঙ্গল করার কর্মপ্রচেষ্টাকে মঙ্গলপ্রার্থণায় রূপান্তরিত করে। পরিশেষে, প্রিয়জনের মঙ্গলের জন্য উদ্বেগের ধারণাটির মানে এই যা যে, একজনের কোনো কিছুর অভাব রয়েছে। কারণ এই ধরনের উদ্বেগ একজনের তার প্রিয়জনকে সাহায্য করার জন্য স্বভাবসুলভভাবেই প্রস্তুত থাকতে পারে এবং ফলস্বরূপ সংগঠিত প্রাসঙ্গিক ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাও থাকতে পারে। আর এইসব যুক্তিগুলো জোরালো সংপৃক্ততাজনিত প্রেমতত্ত্বের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রশ্ন করা যেতে পারে যে, একজনের অনধিকারচর্চী বা অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপমূলক সম্পর্ক বা মৃতব্যক্তির প্রতি অব্যাহত ভালোবাসার উপরোক্ত উদাহরণগুলির সঠিক ব্যবহার হয়েছে কিনা। যদিও এগুলি ভালোবাসার প্রকৃত নমুনা, তবুও এই নমুনাগুলো ঘাটতিপূর্ণ এবং তাই এগুলোকে উচিত আদর্শ নমুনার পরজীবী গণ্য করা। নির্দ্ধিধায় কোনো বিশেষ যুক্তি ছাড়াই প্রেমের এই ধরনের ঘাটতিপূর্ণ ঘটনাগুলিকে দৃষ্টান্ত বা আদর্শ নমুনাগুলোর সাথে সমতুল্য বা সমহার অবস্থায় দার্শনিক বিশ্লেষণে সমন্বয় বা স্থান দেয়াটা সন্দেহজনক।
যাই হোক, দৃঢ় সংস্রব-উদ্বেগ তত্ত্ব ভালোবাসার স্বজ্ঞাত গভীরতার সঠিক নির্ণয় করতে অক্ষম আর সেইজন্যই ভালোলাগা ও ভালোবাসার মধ্যকার পার্থক্য সঠিকভাবে নির্দেশেও অপারগ। যদিও, যেখানে পূর্বে উল্লিখিত, দৃঢ় উদ্বেগের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যজনের দ্বারা একজনের পরিচয় ও ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করার উপায় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়। তবে তা কেবল প্রেমের প্রভাবকে হিসেবে, প্রেম যেসব উপাদান দিয়ে গঠিত তার কেন্দ্রীয় অংশ হিসাবে নয়। প্রেমের দৃঢ়-উৎকণ্ঠামূলক বিবরণগুলির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একজনের অন্যজনের জন্য একধরনের অনাগ্রহী উদ্বেগ ছাড়াও, অন্তত রোমান্টিক বা আবেগময় প্রেমের একটি অপরিহার্য অংশ হলো এই ধারণা যে, কাউকে ভালোবাসাকালীন একজন অন্যজনকে শুধু সেই অন্যজনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তা নয়, একজনের নিজের কারণেও অন্যজন গুরুত্বপূর্ণ হয়। মৌলিকভাবে মজবুত একটি উদ্বেগজনক প্রেমকাহিনী থেকেও এই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি বা আনুগত্যের ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব বিষয় জড়িত সেসব দিয়েই অন্তরঙ্গতা এবং প্রেমের গভীরতা বোঝা যায়।
লেখক: ড. এস. তানভীর রাতুল; এফআরএসএ, এফআরএসএল
অধ্যাপক, স্কুল অব হিস্টোরি, ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার (ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি)
পরিচালক, সেন্টার ফর নিউ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়