জাহীদ ইকবাল, আলোকচিত্রী: নাসির আলী মামুন

জাহীদ ইকবাল, আলোকচিত্রী: নাসির আলী মামুন

জাহীদ ইকবালের ৯৯টি খুদে পদ্য

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২

১.
চুম্বনে পাপ নেই, চুম্বন করো সুজনেষু।

২.
খোঁপা খুলতেই খুলে গেলে তুমি।

৩.
এ বছর প্রেম আসেনি
কবিতা এসেছিল; দরোজা খুলিনি।

৪.
ব্রা’র ওপাশে না যাই; মা খুব বকে দেবে।

৫.
মিথ্যাও সুন্দর
যদি সুন্দর করে রঙ মাখিয়ে বলা যায়।

৬.
ভাঙনের আগেই ভেঙে দাও সব
নিয়তি, এ তোমার কেমন উৎসব!

৭.
দরোজার ওপাশে কেউ নেই
জেনেও তীব্র অপেক্ষার খিড়কিটা খুলে রাখি।

৮.
সব দীর্ঘশ্বাসে
ভাঙনের এক খরস্রোতা নদী থাকে।

৯.
মন তুমি কার উঠানে ধান খাও; গৃ্হস্থ কি জানে!

১০.
অন্তর্বাস খুলে দেখি, তুমি নেই
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে তোমার অনিচ্ছুক কঙ্কাল শরীর।

১১.
পুরুষ কাঁদে না; কাঁদলে হাঁটু সমান হয় জল।

১২.
জীবন রেখে এসেছি
তোমার ফুলদানিতে; তৃষ্ণায় জল দিও।

১৩.
দেয়ালের মতো আমাকে ফুটো করে কাকে খুঁজছ!

১৪.
তরে লৈ কৈ যাই
পরানডা খালি কান্দে আর একছের ফাল পাড়ে
যুদি তোরে কেউ চিলের লান ছোঁ দি লৈ যায়!

১৫.
চারভাগের পৃথিবীতে তিনভাগই দুঃখ।

১৬.
বোবা নই; পাথর বলেই চুপ থাকি।

১৭.
নিষেধ মানে না দেয়াল; গোপন চুমু খোঁজে মন।

১৮.
যুবকপাড়ায়
সাবানের ফেনায় সব রমণী হয়ে ওঠে অপ্সরী।

১৯.
প্রণয় প্রণয় করে
স্তনের নিচে ডিম পাড়ছে খবিশ কচ্ছপ।

২০.
পরজনমে কুকুর হবো
তবু তোমার ‘তুমি’ হবো না।

২১.
বৃক্ষ, কাঠুরিয়াকে ভাবে কসাই
আর চুল্লিতে পুড়তে পুড়তে আগুনকে ভাবে জাহান্নাম।

২২.
আমাকে মুখস্থ করে
চলে গেছে যারা; আমি তাদের প্রত্যেককে চিনি।

২৩.
কবিকে আঘাত করো, কবিতার জবান খুলে যাবে।

২৪.
আমাকে একটি ফুলের আয়ু দাও
আমি সমস্ত পৃথিবী ফুলের সুবাসে ভরে দেব।

২৫.
পৃথিবী উঠে দাঁড়াও
কবি আসছেন, কবি এলে উঠে দাঁড়াতে হয়।

২৬.
কবির অন্তর ছিঁড়ো না, কবিতা ছিঁড়ে যাবে।

২৭.
যে নগরে কবি নেই
সে নগর জন্মান্ধ, শ্রীহীন, কদাকার।

২৮.
তোমাকে ভেবেছিলাম মস্ত বড় কবি
কিন্তু না, তুমি তো দেখছি দিব্যি মানুষ।

২৯.
পৃথিবী ঘুরে এসে দেখলাম,
তুমি এখনও প্রাচীন কবিতায় মগ্ন।

৩০.
মানুষ পাঠের মতো মধুর পাঠ
পৃথিবীর আর কোনোকিছুতে নাই।

৩১.
ভাগ্যিস তোমাকে নয়
সেদিন ট্রেন মিস করেছিলাম।

৩২.
নিঃস্ব হ’তে হ’তে দেখি,
ভস্মের চিতায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছি
জ্বলে উঠে নিভে গেছে সব অন্ধকার।

৩৩.
তুমি তৈরি হও। আমি প্রস্তুত।
পুড়ে যাব। চিতা সাজাতে যেটুকু সময়...

৩৪.
জ্বলে জ্বলে জলে যায় দিন
বয়স পুড়িয়ে দেখি, থেকে গেছে সমস্ত ঋণ।

৩৫.
তার জন্য ফুরিয়ে এলাম
সমস্ত আয়ু; এসে দেখি, সে নেই।

৩৬.
সেবার পয়সা গিলে মস্তবড় বিপদে পড়েছিলাম
এবার আস্ত একটা মানুষ গিলে বিপদে পড়েছি
মানুষটা পৃথিবীতে আসছে...

৩৭.
আমি নিতান্তই গরিব কবি
সের দরে চাল কিনে খাই।

৩৮.
বাঙলাদেশের মানুষ জন্মসূত্রে কবি।

৩৯.
আগে জানতাম না চা কেন লাল হয়।

৪০.
কবিরা মূলত শ্রেষ্ঠ শব্দশিকারি।

৪১.
খোদার কসম, আমি কোনো ভগবান দেখিনি

৪২.
তোমার জন্য আমিও
ফেয়ার অ্যাণ্ড লাভলী দিয়ে দাঁত মাজি।

৪৩.
তুমি কেমন পাষাণ
সিন্দুকে না রেখে ধন, ভরে রাখো মন।

৪৪.
ভেবেছিলাম তোমার প্রেমে হবো আমি আউলিয়া
কিন্তু না
তোমার প্রেমে হয়ে গেছি ভীষণ রকম দেউলিয়া।

৪৫.
হাঁটতে হাঁটতে যেদিকেই যাই
পা দুটো ঠিক ঠিক তোমার সামনে এসে দাঁড়ায়।

৪৬.
তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ পাহাড় সমান
তাই বলে ভালোবাসা কম নয়, আকাশ ছোঁয়া।

৪৭.
আমার কোনো আকাশ নেই, তোমার আকাশেই উড়ি
ভুলবশত তাই তো তুমি, ভাবো আমায় সুতাকাটা ঘুড়ি।

৪৮.
তুমি অপাঠ্যই থেকে গেলে
তোমাকে পাঠ করা গেল না কবি।

৪৯.
সাহিত্যে কবির মর্যাদা সবার ওপরে
সে কারণে হালের সব দাদা কবি হতে চায়।

৫০.
কবিতা লিখতে এসেছিলাম
বুকভরা দুঃখ লিখে চলে যাচ্ছি।

৫১.
দূরে নদী
আমি সমুদ্রের কাছাকাছি
আগে কার সান্নিধ্যে যাই!

৫২.
রোজ আমাকে আমি খুলে রাখি তেজপাতার বিছানায়
আর রোজ তুমি হুটহাট ঢুকে পড় বৌ খোঁজার বাহানায়।

৫৩.
মৃত্যু আমার দুধবোন
তারে এক নজর দেখিবার মনে লয়।

৫৪.
তোমাকে দেখে পৃষ্ঠা উল্টাতে ভুলে যাই
তবুও কোনো পৃষ্ঠা না পড়েই তোমাকে পড়া হয়ে যায়।

৫৫.
চোখের দিকে তাকাও
বলে দিচ্ছি তুমি কেমন আছ।

৫৬.
চুপ থাকতে থাকতে
চুপকথার মতো আমাদের সব কথা চুপ হয়ে গেছে।

৫৭.
আপনি সুন্দর, পদ্মার ইলিশের মতোন।

৫৮.
তোমাকে ছিঁড়তে গিয়ে
আমার সমস্ত ক্রোধ ছিঁড়ে ফেলেছি।

৫৯.
মূলত আমরা কোথাও কেউ নেই
সবখানেই আমাদের ছায়াবাড়ি।

৬০.
আমাকে তুমি পাহাড় দেখাও
আর আমি দেখি তোমার আদিগন্ত সবুজ ফসলের মাঠ।

৬১.
কাকে
মুছে দিতে চাও
প্রেম না মৃত্যু।

৬২.
আমার বিশ্বাসে ঘুণপোকা ধরেছে
অথচ তুমি আমার হাতটাও ধরোনি।

৬৩.
তুমি সব পারো; পারো না শুধু
আমার মাথার ওপর থেকে আকাশটা সরাতে।

৬৪.
তুমিহীন ভূমিহীন প্রতিটি মুহূর্ত।

৬৫.
ঘুম একটি অনন্ত বাড়ির নাম
আমরা সেই বাড়ির বাসিন্দা।

৬৬.
দর্শন ছাড়া কবিতা আর প্রেমিক ছাড়া প্রেম।

৬৭.
চিতার পাশে
কবর দেখে বুঝলাম, ওরা যমজ দুটি ভাই।

৬৮.
নদীর কাছে যাই না নদীও আসে না
অথচ প্রতিদিন একটু একটু করে
চুলখোলা নদীর মতো ভিতরটা নদী হয়ে যাচ্ছে।

৬৯.
আপনি আমার জানালা হবেন
রোজ বিকেলে
আমি আপনার সামনে এসে দাঁড়াবো।

৭০.
বুকের ওপর থেকে ট্রাক গেলেও টের পাই না;
তুমি গেলে টের পাই; সারারাত ঘুমাতে পারি না।

৭১.
জীবনটা ছেঁড়া স্যাণ্ডেলের মতো টেনেহিঁচড়ে চলছে

৭২.
আপনি সুন্দর, দারুণ বিষধর!

৭৩.
পৃথিবী চুলোয় যাক
তুমি পাশে থাকলে শান্তি শান্তি।

৭৪.
দুধশাদা স্নানঘর তবু যেন স্নানেই
যতো ভয়, যদি তার স্পর্শ ধুয়ে যায়!

৭৫.
জমানো অন্ধকারে কবিতাই জমে ভালো।

৭৬.
কেমন আছ ছেলেবেলার চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বালক?

৭৭.
এই যে আপনারা উত্তরে সরে আসুন
দক্ষিণে দেশটা ভীষণ রকম হেলে পড়েছে।

৭৮.
জমিদার প্রথা উঠে গেলেও
জুলুমের প্রথা আজও ওঠেনি।

৭৯.
কিছু ঋণ শোধ হয় কিছু ঋণ থেকেই যায়
গোপন চুমুর মতো আমারও কিছু ঋণ আছে
আমিও রিনির কাছে ঋণী।

৮০.
গাঙে গাঙে সাঁতার কাটতি আর ভাল্লাগে না; এবার আমি সমুদ্রে যাতি চাই; সমুদ্র আমারে ডাকতিছে...

৮১.
তাকে দেখে ঝলসে গেল চোখ
কিছুই হলো না তার, আমার হলো অসুখ।

৮২.
পৃথিবীর লোকসংখ্যা বলতে
তুমি আর আমি, বাবি সবাই ফেরেশতা।

৮৩.
বৃষ্টি চলে গেছে সেই কবে
অথচ এখনো ভিজে আছে
আমার সমস্ত ঘরদোর, বিছানা-চাদর।

৮৪.
আমার আয়নায় কেন দেখি তোমার মুখ?

৮৫.
পাশেই ছিলে, ছিলে তো, ছিল না খেয়ালে
তবু খুঁজি, খুঁজতে থাকি, তোমার ছবি দেয়ালে।

৮৬.
আমরা আগুন নেভাতে ব্যর্থ
তাই মানুষগুলো পুড়ে পুড়ে নিভে যাচ্ছে।

৮৭.
নারী দেখলেই সুন্দর কোনো বাড়ির কথা মনে পড়ে
আহা, কতকাল দেখা হয় না
সুন্দর কোনো নারী সুন্দর কোনো বাড়ি।

৮৮.
বলিনি কোথাও যাব না।
সবখানেই যাব; শুধু তোমার কাছে যাব না।

৮৯.
পথ না ফুরালেও
পথের শেষে ঠিকই গন্তব্য দাঁড়িয়ে থাকে।

৯০.
বস্তুত অন্ধকার মরে না
নিরুপায় পুষে রাখি সন্তাপ
নিদানে; তবু এক প্রাণ আছে মুখোশের আন্ধারে...

৯১.
ঘ্রাণ ছেড়ে চলে গেছে গোলাপ
গোলাপ শহরে
এখন আর কোনো গোলাপ ফোটে না।

৯২.
না কিছুই ছুঁতে পারি না
না তুমি, না তোমার কোনো দুঃখবোধ
অথচ তোমাকে ভেবে ভেবে দুধের বালতিতে ডুবে মরি।

৯৩.
আলাপে আলাপে জানা গেল
ভদ্রলোক আমার আপেলবৃক্ষের কদর করিতেছেন।

৯৪.
তোর ছুটিতে আমার ছুটি, খুশিতে হই কুটিকুটি;
তোর ছুটিতে আমার ছুটি, কষ্টে করি ছোটাছুটি।

৯৫.
ব্রা`র জঙধরা হুকটা খোলা হয় না বহুকাল।

৯৬.
ভুলে যাচ্ছ, যাবেই তো
এতদিন কে কাকে মনে রাখে
খুব কাছের মানুষ না হলে!

৯৭.
যেটুকু অন্ধকার দেখছ
ওইটুকুই আমি; বাকিটা খোলসমাত্র।

৯৮.
আমাদের পৃথিবী পশ্চিমে হেলে পড়েছে

৯৯.
দেয়ালে পিঠ না পিঠে দেয়াল
কে কোথায় ঠেকে গেছি জানি না
ভাবছি এবার দেয়াল ভেঙে পালাব।