জালালউদ্দীন রুমির তিনটি কবিতা

বাঙ্লায়ন: হৃদ্য আবদুহু

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৩, ২০২১

এই একাকিত্ব

এই একাকিত্ব হাজার হাজার জীবনের চেয়েও বেশি মূল্যবান
এই স্বাধীনতা পৃথিবীর সমস্ত জমির চেয়েও দামি
একমুহূর্তের জন্য সত্যের সাথে এক হওয়া
পৃথিবী ও জীবনের চেয়েও বেশি মূল্যবান।

এটাই প্রেম

এটাই প্রেম, গোপনে আকাশের দিকে উড়ে যাওয়া
প্রতিমুহূর্তে একশো ঘোমটা খুলে পড়ে যায়
প্রথমত, জীবন ছেড়ে দেয়া
শেষপর্যন্ত পা ছাড়াই একটি পদক্ষেপ নিতে উপেক্ষা করতে হয় পৃথিবী
এবং নিজের বিষয়ে ধারণাও

হৃদয়, আমি বললাম, প্রেমিক বৃত্তে ঢুকতে এটা কি যথেষ্ট নয়!
নিজেকে দেখার বাইরে দেখতে এবং স্তনের মধ্যে পৌঁছতে ও অনুভব করতে!

আমার দরজায় কে

তিনি জিগেশ করলেন, আমার দরজায় কে?
জবাবে আমি বললাম, আপনার বিনীত বান্দা।
তিনি জিগেশ করলেন, তুমি কিসের বাণিজ্য করো?
আমি বললাম, প্রভু, আপনাকে অভিবাদন জানাই।

তিনি জিগেশ করলেন, তুমি কতক্ষণে যাত্রা শুরু করবে?
আমি বললাম, যতক্ষণ না আপনি আমাকে থামিয়ে দেন।
তিনি জিগেশ করলেন, আর কতক্ষণ নিজেকে আগুনে পোড়াবে?
আমি বললাম, যতক্ষণ না পবিত্র হই। ভালবাসার শপথ,
ভালোবাসার খাতিরে আমি সম্পদ ও পদ ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি বললেন, তুমি মামলা করেছ অথচ তোমার কোনো সাক্ষী নেই।
আমি বললাম, আমার কান্না আমার সাক্ষী
আমার মুখের বিবর্ণতাই আমার প্রমাণ।
তিনি বললেন, তোমার সাক্ষীর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই
তোমার চোখ অশ্রুসিক্ত।
আমি বললাম, আপনার ন্যায়ের মহিমার কসম
আমার চোখ পরিষ্কার ও ত্রুটিহীন।

তিনি জিগেশ করলেন, তুমি কি চাও?
আমি বললাম, আপনাকে সবসময়ের বন্ধু হিশেবে পেতে চাই।
তিনি জিগেশ করলেন, আর?
আমি বললাম, আপনার অনুগ্রহ, যা কখনোই শেষ হবে না।

তিনি জিগেশ করলেন, সফরে তোমার সঙ্গী কে ছিল?
আমি বললাম, আপনার ভাবনা।
তিনি আবারও জিগেশ করলেন, তোমাকে এখানে কে ডেকেছে?
আমি বললাম, আপনার মদীয় সুবাস।

তিনি জিগেশ করলেন, কোনটি তোমাকে সবচে বেশি পূর্ণতা এনে দ্যায়?
জবাবে বললাম, সম্রাটের সঙ্গ।
তিনি বললেন, তুমি সেখানে কি পাও?
বললাম, একশো অলৌকিক ঘটনা।

তিনি জিগেশ করলেন, রাজপ্রাসাদ নির্জন কেন?
আমি বললাম, তারা সবাই চোরকে ভয় পায়।
তিনি বললেন, চোর কে?
আমি বললাম, যে আমাকে আপনার থেকে দূরে রাখে।

তিনি বললেন, নিরাপত্তা কোথায়?
আমি বললাম, সেবা ও ত্যাগে।
তিনি বললেন, ত্যাগ করার কি আছে?
আমি বললাম, মুক্তির আশা।

তিনি বললেন, বিপর্যয় কোথায়?
আমি বললাম, আপনার ভালোবাসার উপস্থিতিতে।
তিনি বললেন, এ জীবন থেকে তোমার কী উপকার হবে?
জবাবে বললাম, নিজের প্রতি সত্য ধরে রাখতে পারি।

এখন নীরবতার পালা।
যদি আমি তোমাদেরকে তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করি
তবে তুমি নিজের থেকেই উড়ে চলে যাবে
কোনো দরজা বা ছাদ তোমাকে আটকে রাখতে পারবে না।