জবাফুলের দুনিয়া
দেবদুলাল মুন্নাপ্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এ প্রকাশিত হয়েছে গল্পকার দেবদুলাল মুন্নার চতুর্থ গল্পের বই `জবা ফুলের দুনিয়া`। বৈভব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী কাব্য কারিম। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে `বৈভব’ এর ৪২২ নম্বর স্টলে। বইটি থেকে ‘জবাফুলের দুনিয়া’ গল্পটি পাঠের আমন্ত্রণ—
এরকম হয়। খুব কম সময়। তবে হয়। সে তো জানা ছিল রফিকুলের। কিন্তু এবার যেরকম হলো সেটা অতীতের চেয়ে ব্যতিক্রম। সে যাচ্ছিল নীলক্ষেত টু মিরপুর রোডের শুক্রাবাদের সিনজিয়ান রেস্তেরাঁর সামনে দিয়ে। সন্ধ্যা ৭টার একটু বেশি হবে। রাত বেশি নয়। কিন্তু শবে বরাতের রাত বলেই হয়তবা ঠিক সেসময় মানুষজন রাস্তায় কম ছিল। যদি বেশি থাকত তবে হয়তো রফিকুল অতীতে এমন ঘটনার সময় যেরকম মানুষের হেল্প নিয়েছিল, সেরকম নিতো। কিন্তু সেদিন সে নিরুপায়। সিনজিয়ান রেস্তেরাঁ বাঁ পাশে ফেলে দু`কদম এগুতেই সে পড়ে গেল।
এরপর ধানমণ্ডি ইবনে সিনা ক্লিনিকে ১৪ ঘণ্টা পর যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন দেখল, তার বাবা-মা ও ছোট ভাই আরিফ তাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। চিকিৎসক জানালেন, রফিকুলের যে রোগটি হয়েছে এটিকে চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় বলে, ডিমেনশিয়া। এ রোগ সাধারণত বৃদ্ধকালে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা অ্যালকোহলিক, তারা এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে।
কিন্তু রফিকুলের বয়স মাত্র আটাশ বছর কয়েক মাস। এবং সে নন-অ্যালকোহলিক।
রফিকুল ক্লিনিক থেকে সুস্থভাবে বাসায় ফেরে ঠিকই, কিন্তু ভয় পেয়ে বসে তার মাঝে বাইরে বেরুনোর। কারণ বাইরে বেরুলে যদি সে আর তার বাসা না চিনতে পারে! আবার যদি এমন হয়!
কিন্তু তাকে ক্লাস নাইনে পড়ুয়া যে মেয়েটি ভালবাসে, মানে মিল্কি, সে তো আর এসব বোঝার কথা নয়। সে মোবাইলে ফোন দিতেই থাকে প্রতিদিন। বলে, ‘স্যার আমাকে বাসায় এসে পড়ানো ছেড়ে দিলেন, ঠিকাছে। কিন্তু আসবেন না বেড়াতে?`
কোনোদিন বা বলে, ‘স্যার খুব মিস করছি। জবাফুলের গল্প না একদিন বলেছিলেন শোনাবেন, শোনালেন নাতো!`
কোনোদিনবা বলে, `স্যার পোস্টমাস্টারের রতনের কথা মনে পড়লে এখনও আমার চোখ ভিজে যায়। বলেছিলেন না, মফস্বলে এখনও অনেক রতন থাকে। তাদের কথা বলবেন। কই, এলেন না তো! কবে আসবেন।`
রফিকুলের এসব কথা আর ভালো লাগে না। আবার সারা দিনরাত বাসায় কাটায় বলেই হয়তোবা রতনের ফোনকলের অপেক্ষাও করে। কিন্তু তাকে সারাক্ষণ তো তটস্থ রাখে সেই ভয় যদি কোনোদিন সে তার বাবা-মা আর ছোটভাই আরিফকেও না চিনতে পারে! বাসার এ ঘর থেকে ওঘরে যাওয়া ভুলে যায়!
জীবন কীভাবে যে ধীরে ধীরে গুটিয়ে আসছে, সে টের পায়।
একদিন দুপুরবেলা তার মাথায় প্রথম চিন্তা আসে যে, আত্মহত্যা করলে তো সে এই ক্রমাগত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে। কিন্ত সমস্যা হলো, আরিফ। আরিফের মুখ ভাসে। যেন সেই শৈশবে জামালপুরের রেললাইন ধরে রফিকুল ঘুড়ি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। পেছনে আরিফ। আহা, এমন মায়াময় দৃশ্যের বাইরে চলে গেল রফিকুল! রাতে ঘুম হয় না বললেই চলে। তার পাশে ঘুমায় আরিফ। মাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। সেও জেগে থাকতে চেষ্টা করে। রফিকুল যখন আরিফ ঘুমিয়েছে ভেবে একটু উঠে বসে থাকতে চায়, অন্ধকার ঘরে দেখা গেল, ঠিক তখনই আরিফ লাফিয়ে উঠে রফিকুলকে জড়িয়ে ধরে বলবে, ‘ভাইজান, খারাপ লাগছে?’
রফিকুলের তখন ভীষণ কান্না পায় ছোট ভাইয়ের তার প্রতি মায়া দেখে। কিন্তু বুঝতে দেয় না। দেখা গেল, সচরাচর এমনই বলে, ‘তুই ঘুমাস না কেন? আমি ঠিক আছি।’
রফিকুল যদিও বলে ভালো আছে, কিন্তু আজকাল তার মাঝে মাঝে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে। সে আত্মহত্যা বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করে। বেশ রোমান্টিকতাও আছে এসব আত্মহত্যা পরিকল্পনায়।
উদাহরণ দেয়া যাক:
এক. ছোট্ট তিনটা নীল ক্যাপসুল রফিকুলের হাতে। লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যে নিঃসঙ্গতম রেলপথটি চলে গেছে সে পথে আশ্বিনের জোছনা, রেললাইনের পাশ দিয়েই নেমে গেছে ঢালুপথ। ওই পথ দিয়ে নেমে যাচ্ছে রফিকুল। জিহ্বার নিচে রাখে তিন নীল ক্যাপসুল। এই-ই শেষ। যে শেষটার জন্য সবাই অপেক্ষা করে। কেউ পায় দেরিতে, কেউ পেতে চায় না। কিন্তু রফিকুলের জীবনে আচমকা এসেছে, বুঝে ওঠার আগেই সে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বোধ। হ্যাপিলি এভার আফটার। কেমিক্যাল নাম পটাশিয়াম সায়নাইড।
দুই, একটা বাথটাব, কানায় কানায় পরিপূর্ণ উষ্ণ পানি। ‘গোসল করবা মিল্কি? তুমি আর আমি নেকেড হই চলো আপাতত। শরীর, শরীরই তো। নতুন কিছু নয়। চলে এসো। ঘ্রাণ নাও। নেবু নেবু গন্ধ পাইতেছ না? ওই যে দুইটা গেলাস। আগে আমি খাইনি। কসম আল্লার। আজই একদিন দুইজনে মিল্যা খেলতে খেলতে খাইতে খাইতে তোমারে রতনের গল্প করুম। জবাফুলের। ওই গেলাসে গোপীবাগ থিকা আনা স্পিরিট মিশানো বাংলা মদ।’
‘না,’ রফিকুল বলে, ‘না, একটা মদের গ্লাসে দুশোটা ঘুমের বড়ি মেশানো আছে।’
মিল্কি পানির ভিত্রে আধডোবা হৈয়্যা আছে ফেস টু ফেস দুজনে। ‘নাও গেলাস। একশোবার গেলাস বদল করব। আর এক, দুই, তিন করে একশো গুনব। ঠিকাছে?’ রফিকুল বলে, ‘মিল্কি, রতনের মতোন কাউরে ভালবাসবা না। কানবা না। বুঝলা, জবাফুল আমি খুব ভালবাসতাম। লাল দেইখ্যা। কিন্তু গন্ধ নাই, বুঝলা?’ এরপর এতটুকু বলে রফিকুল গেলাসের হাতবদল করতে করতে গোপন সংকেত দেয়া গেলাসটা নিজ হাতে নেয়। একশো গোনা শেষ। সে গেলাসের সবটুকু খায়। মিল্কি হয়তো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার ওপরে শুয়ে পড়ে রফিকুল, অস্ফুস্ট স্বরে কী বলেছিল, ‘তুমি জবাফুল হলা না আমার…’
বাথটাব পানির নিচে এলোমেলো দুটি নগ্ন তরণ-তরুণীর শরীর জড়ানো। অয়েল পেইন্টিং।
তিন. কোনো পাহাড়ে রফিকুল হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে অনেক কষ্টে এমন একটা জায়গায় ওঠে সেখানে দেখে যীশুখ্রীস্ট্রের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মতো লোহার ফ্রেমের একটা ক্রুশ। সেই ক্রুশে একটা সাপ ঝুলে আছে। রফিকুল তার মোবাইল থেকে সিম খোলে। এরপর সিমটিকে মুখে মুড়ে চিবিয়ে যতটা সম্ভব গুড়ো করে গিলে। মোবাইল ফোনটা ছুড়ে ফেলে। এরপর এগিয়ে যায় ক্রুশে ঝুলে থাকা সাপের দিকে। তখন শীতের বিষন্ন বিকেল। সে জিহ্বা এগিয়ে দেয়, ব্যস সাপটি সাহায্য করে। তার জিহ্বায় একটা সত্যি একটা মাত্র ছোবল দেয়। The road less travelled। রফিকুলকে দেখা যায় গড়িয়ে গড়িয়ে অনেক নিচে খাদ থেকে থাদে ঝরে পড়তে।
কিন্তু মুশকিল হলো, রফিকুল এসব ভাবলে ভয় পায়। সে জানে, আত্মহত্যা করবে না। সে ভীরু প্রকৃতির। তার জাকিরের মুখ ভাসে। ভাইজান ভাইজান ডাক শুনে। তার বাবার মুখ অতটা ভাসে না। তবে মায়ের মুখ ভাসে। মাঝে মাঝে। ভাসবে আর কতদিন? সে তো স্মৃতিভ্রষ্টই হতে যাচ্ছে। অতএব বেঁচে থাকলেই বা কি মরে গেলেই বা কি? এমন চিন্তা রফিকুলকে তাজা করে।
একদিন দুপুরে ঘুম থেকে ওঠে গোসল, নাস্তা সেরে তার কেন জানি বহুদিন পর খুব ফ্রেশ লাগে নিজেকে। আব্বা অফিসে। আম্মা রান্না নিয়ে ব্যস্ত। জাকির স্কুলে। সে গ্যাবার্ডিনের একটা প্যান্ট আর এ্যাশ কালারের টি শার্ট পরতে পরতে ফোনকল দেয় মিল্কিকে, ‘মিল্কি কোথায় তুমি?’
মিল্কি কল রিসিভ করে। কিন্তু এত কোলাহলপূর্ণ তার চারপাশ যে, কথা স্পষ্ট শোনা যায় না। শুধু শোনা যায়, ‘স্কুলের গেইটে।’ আরও কীসব বলে, শোনা যায় না। রফিকুল বলে, ‘থাকো। আমি আসছি।’
বাসা থেকে বেরুনোর আগে রফিকুলের একটু ভয় জাগে, যদি বাসা না চিনে ফিরতে পারে, যদি চারপাশ অন্ধকার দেখে! এরপরও সে বেরিয়ে পড়ে। শ্যামলী সিনেমা হলে উল্টোপাড়ে গিয়ে একটু দাঁড়ানোর পরই বাস পায়। ঘিঞ্জি। তবু উঠতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করায় পায়ের একজোড়া স্যাণ্ডেলের একটা খসে পড়ে।
রফিকুল ততক্ষণে উঠে গেছে। বাসও ছেড়েছে। রফিকুলের একটা হাত ওপরের হাতল ধরা, অন্যটি একটি সিটের পেছনে ভর দেয়া। সে ধীরে ধীরে বাম পায়ে থাকা অন্য স্যাণ্ডেল পা থেকে খুলে অগোচরে যেনবা, যেনবা কেউ না দেখে সেরকম পায়ের টো দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে অনেকটা দুরে সরিয়ে দেয়। যেন ওই একখানা স্যাণ্ডেল তার না।
জ্যাম। বাস ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। আসাদগেটের স্টপেজ পেরিয়ে ফের জ্যাম। রফিকুলের মিল্কির বাসার কথা মনে পড়ে। আজিমপুর সরকারি কোয়ার্টারে। তার স্কুলও পাশেই। মিল্কিদের বাসার গেটভর্তি মাধবীলতা। উলোঝুলো হয়ে ঝুপ্পুস করে জড়িয়ে আছে গেটটা। সেই গেট ঠেলে এগোলে একটা উঠোনমতো। তারপর একটা টানা বারান্দা। প্রথম দরজাটা খুললে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। ওই ওপরে থাকে বাকি বাড়িটা। আর দ্বিতীয় দরজা ঠেললে? হ্যাঁ, ওইটা মিল্কির ঘর। অনেকগুলো জানলা। সেই জানালা দিয়ে তাকালে জবাফুলের দুটো গাছ। মিল্কিকে যেদিন প্রথম টিউশনি পড়াতে যায় রফিকুল সেদিনের কথা মনে পড়ে। মিল্কিদের বাসার কাজের বুয়া প্রথমে এসে চা বিসকিট দেন। এর কিছুক্ষণ পর আসেন মিল্কির আম্মা। বোরকা পরিহিতা। বাসায়ও কি বোরকা পড়েন? রফিকুল ভাবে। কে জানে? রফিকুলের পেছনে পেছনে ঢোকে মিল্কি। পরিচয়পর্ব শেষে রফিকুল মিল্কিকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই চলে যায় জবাফুলের দুটো গাছের দিকে। সে ওদিকে তাকিয়েই বলে, ‘বাহ, জবাফুল দেথতে দেথতে পড়ানো।’
মিল্কিও তাকায় জানালা গলিয়ে জবাফুলের দিকে।
রফিকুল যেন আপনমনে বিড়বিড় করে বলে, ‘ফুলটা লাল। সুন্দর। কিন্তু তেমন স্মেল নাইকা। এই যে গন্ধ ফুলটা এই ফুলটা পেল না, এই নিয়া মজার গল্প আছে।’
মিল্কি মিশুক মেয়ে বোঝা গেল তার প্রশ্নে, ‘কি গল্প স্যার বলেন না?’
রফিকুল বলে, ‘ওইটা আরেকদিন বলুম। নাও ম্যাথ বইটা নাও।’
জ্যাম ছেড়েছে। প্রায় একঘণ্টা লেগে যায় মিল্কির স্কুলের গেটের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। রফিকুল মোবাইলে কল করে, ‘মিল্কি আছ?`
কল রিসিভ করে মিল্কি। বলে, ‘জ্বী। এই যে পাশেই আমিন কনফেকশনারীর ভেতর। জবাফুলের, রতনের গল্প শুনব বলে সেই থেকে বসে আছি। আপনি কৈ?’
দেখা হয় তাদের। একটা কমদামি হোটেলে ঢোকে। চা-সিঙ্গারা খায়। মুখোমুখি বসা। রফিকুলের মনে হয়, সে তো আর কিছুদিন পরই মিল্কিকে চিনবে না। সে কিছু বলে না। তার মুখ দেখে। ভাগ করে করে। ভ্রু। কপাল। চিবুক। ওষ্ঠ। কান। মিল্কি জানতে চায়, ‘কথা বলছেন না যে! কী দেখছেন?’
মানুষের এমন হয়। দেখছে একজিনিষ। ভাবছে অন্য জিনিষ। আর ওই অন্য জিনিষ নিয়ে ভাবনাই সে অসতর্কভাবে প্রকাশ করে ফেলে হঠাৎ। মন, তোর এত অলিগলি! রফিকুল দৌড়াচ্ছে। এ গলি থেকে ও গলিতে। আর সামনে বসা মিল্কিকে বলে, ‘কি দেখছি? দেখছি জবাফুল।’
রফিকুলের মিল্কির হাত স্পর্শ করতে ইচ্ছা করে। বলতে ইচ্ছা করে সে আর বেশিদিন বাঁচবে না হয়তো। কিছুদিন পরই হয়তো আর কাউকে চিনতে পারবে না। স্মৃতিভ্রষ্ট হবে। বলতে ইচ্ছা করে, এই অল্পজীবনে সে কেন পড়াতে গিয়েছিল মিল্কিকে? মিল্কিকে কেন মনে পড়বে তার?
কিছুই বলে না। তার মুখ দেখে। ভাগ করে করে। ভ্রু। কপাল। চিবুক। ওষ্ঠ। কান। মিল্কি জানতে চায়, ‘কথা বলছেন না যে! কী দেখছেন?’
রফিকুল কিছুই বলে না।
বাসায় ফেরার পথে রফিকুল আটকা পড়ে নীলক্ষেত মোড়ে জ্যামে। একটা বাম ছাত্র সংগঠনের ছেলেমেয়েরা মিছিল বের করেছে। শ্লোগান দিচ্ছে, ‘প্রহসনের নির্বাচন চাই না। লুটপাটের ক্ষমতা চাই না। মুক্তি মুক্তি মুক্তি, মানুষের মুক্তি চাই।’
রফিকুলের শিরদাঁড়া বেয়ে ঘামের বিন্দু নামতে থাকে একের পর এক। তার মনে হলো, ফের ঘটতে যাচ্ছে বিপর্যয়। একটা নেপথ্য। ব্যাকগ্রাউন্ড। আলো নেই। পিচ ডার্ক। শুধু সাউন্ড আসছে। কথা। আর অসংখ্য জবাফুল। ঝরে পড়ছে তার ওপর।
আপনারা কি ভাবছেন? কি ভাবছ, চারপাশে যারা দাঁত হাসছে তারা সেভেন্থ হেভেনে আছে আর রফিকুল দোজখের টিকেট কেটেছ? জ্বী না... এটা দোজখই, টিকিট দরকারই নেই। এই যারা চাদ্দিকে রংচং মেখে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ টিপছে, মুচকি হাসছে, বলছে, ‘দেখ, সব ঠিক হয়ে যাবে...’ তারাও, ওই... দোজখেই। কিন্তু কাউকে সেটা বলছে না। অথবা, কেউ কেউ আবার জানেও না এখনো। কেউ কাউকে বলে না তো... তাই সবাই জানে যে, তারা জানে না তারা দোজখে আছে, অথবা তারা সত্যিই জানে না অথবা ওই বামের মিছিলের মুখগুলোও জানে না, বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। নো মোর বিপ্লব।
ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়া দুপুর যাচ্ছে বিকেলের কাছে। রফিকুলকে আমরা পড়ে থাকতে দেখি। দেখি অনেক লালজবা ঝরে পড়ছে তার ওপর। সত্যি কথা কি, এসব গপসপ তো আর রফিকুলকে বানিয়ে লাভ নেই। ইলিউশ্যুন। সব। সব।
সিটি করপোরেশন কর্তপক্ষই বা কেমন দায়িত্বজ্ঞানহীন। ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা। সেদিকে নজর নেই।
থাক ওসব কথা। আমরা এরপর দেখি রফিকুল একটু পাশ ফেরে। এরপর জবাফুলের ভিড় থেকে ম্যানহোলে পড়ে যায়। তেমন কিছু না, ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন। এণ্ড অব দ্যা হিস্ট্রি।
এগিয়ে আসুন, প্লিজ, না রফিকুলদের জন্য নয়। একটু ভাবতে থাকেন, রফিকুল গন্ধহীন জবাফুল কেন ভালবাসত? আর তার পরিণতি কেনইবা হলো দুর্গন্ধযুক্ত ম্যানহোলে। সে ভেসে ভেসে এই রাজধানী ঢাকার নিচ দিয়ে গিয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিশবে। বাদ দেন। আমরা বরং উপরিকাঠমোতেই ব্যস্ত থাকি। লগ আউট।