অঙ্কনঃ রিফাত বিন সালাম
ছেলেটি এসেছিল
নাঈমুল হাসান হিমেলপ্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮
ছেলেটি এসেছে...
তার আসার কথা ছিল। যেহেতু সে এসেছে তার প্রস্থানটাও নিশ্চিত, চিরন্তন সত্য। ছেলটির হাব ভাব একটু অন্য রকম,ঠিক স্বাভাবিক নয় । হয়ত তার জন্য এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতি তাকে এভাবেই চালনা করছে। প্রকৃতির উদ্ধেত কেউ নয়। যাকে যে চরিত্রে প্রেরণ করেছে তার সেই চরিত্রে অভিনয়। ছেলেটা একটা সমস্যা নিয়ে এসেছে। সে বলছে আমি তাকে দেখছি। ছেলেটা বলার সময় তুতলাচ্ছে, সব সময় না। যখন কোন বিশেষ বিষয়ের কথা বলছে তখনই সে তুতলাচ্ছে। তার বা হাত কাপছে। বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছে। স্বরের উঠা নামায় চোখের অস্থিরতায় এক অদ্ভুত আবহের সৃষ্টি হয়েছে। জানালার পর্দাটায় উত্তরের শীতল বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে আর আলোটা মাঝে মাঝে কেপে কেপে উঠছে। নির্ভয়ে ছেলেটা অবলিলায় তার কথা বলে যাচ্ছে। আমি শুনছি সর্বাঙ্গ সজাগ করে শুনছি। আর চোখের সামনে একটা চিত্র একে নিচ্ছি। এটাই আমার কাজ।
আমার রুমটা একটা মাঝারি ধরনের কক্ষ। উত্তরে একটা জানালা আর একটি মাত্র দড়জা। সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের উপরের তলায় হওয়ার আলো বাতাস বেশ করে আসে। একটা শীতলতা কাজ করে মনে। আলো মানুষের ভয়কে দূর করে সজীব রাখে । মানসিক সমস্যা নিয়ে মানুষ আসে এই ঘরে। তার মন মত বলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আবার কতটা একদমই গুরুত্বহীন। আমি শুনি শুনতে হয়। মানুষের মনের কথা জমতে জমতেও মানুষ ক্লান্ত হয়। ক্লান্তি মানুষকে দূর্বল করে আর দূর্বল মানুষ অসুস্থ হয়। সে ক্লান্তি দূর করতেই আমার কাছে বলে। আমি শোনার আগ্রহে চোখে মুখে একটা অবাক বিষ্ময় নিয়ে বসে থাকি। আমার বিষ্ময়ে শ্রোতারা আরও বলার আগ্রহ পায়। বলতেই থাকে আর আমি শুনতেই থাকি।
বিভিন্ন কথা মনের কথা বিভিন্ন সমস্যার কথা তেমন এক অদ্ভুত ক্লান্তির কথাই বলতে এসেছে ছেলেটি। এই ছেলেটির সাথে আমার কোথায় যেন একটা মিল রয়েছে। তার গল্পের কোন এক চরিত্রটা যেন আমায় টানছে। আমায় আচ্ছন্ন করে রাখছে। আমি শুনছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। হাহাকারে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলছি। মনে হচ্ছে এক আমিই যেন বলছি বলতে বলতে একটা ঘোরে চলে এসেছি। ছেলেটা উঠে দাড়াল বড় কাচের জানালাটা খুলে আমায় আসতে বলল। আমি উঠে আসলাম জানালার পাশে নিচের রাস্তায় জ্যাম আর ক্ষুদ্র প্রাণের চলন। চোখটা হাটাৎ একটা অতি ক্ষূদ্র প্রাণের উপর দৃষ্টি দেয় সাদা আর কিছু লাল ফুল হাতে গাড়ির পাশে পাশে ছুটে চলছে সে। হে ঐ মেয়েটিত। আমি চিনতে পেরেছি আমার গাড়ির ভারি চাকার নিচে পিষ্ট হওয়া সেই মেয়েটি। আমার যে তার সাথে অনেক কথা তাকে আমার বলতে হবে আমার যে বলতে হবে। আমার যে মেয়েটির কাছে যেতে হবে।
ছেলেটি একটু মুচকি হেসে জানালাটা বন্ধ করে চলে আসে। ছেলেটি তার কাজ শেষ করে চলে যায় নতুন কাজের সন্ধানে। তার যে সময় নষ্ট করার মত সময় নেই তার যে অনেক কাজ । অনেক জীবিত অতৃপ্ত আত্মাকে পরাধিনতার দাসত্ব থেকে।