
ছিঃ
মারিয়া সালামপ্রকাশিত : জুলাই ৩১, ২০১৮
একটু আগেই ফেসবুকে দেখলাম এক বাচ্চাছেলেকে পিটিয়ে পুলিশ মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। ভীষণ রাগ হয়েছে আমার, রাগের মাথায় ফেসবুকে কমেন্ট লিখেছি, ছি!
এছাড়া আমার আর কী আর করার আছে? আমার বয়সতো আর ১৮ না, আমি তাই দুঃসহস্পর্ধায় মাথা তুলবার ঝুঁকি নিতে পারি না। আমি গর্তে বসে বারকয়েক উঁকিঝুঁকি দিতে পারি কেবল, আর পারি গল্প পড়তে আর বলতে।
গতরাতে একটা উপন্যাস পড়লাম আবু তাহের সরফরাজের ‘দ্য লাভ লেটার’। তরুণেরা পড়ে দেখতে পারেন, কেবল ১৮ তে না, যার বুকে সাহস আর ভালবাসা আছে, সে একুশেও অনেক বড় বীরত্বের কাজ করে ফেলতে পারে।
দ্য লাভ লেটারের বিষয়বস্তু হচ্ছে, বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে, তখন ব্রাসেলস এর মিউজিয়ামে বিশ্বের দুর্লভ সব চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয়। একরাতে প্রদর্শনী থেকে চুরি হয়ে যায় ডাচশিল্পী ভারমেয়ারের দ্য লাভ লেটার। এটি চুরি করে মারিও রয়ম্যান, যার বয়েস একুশ বছর। সে এতিম। টিভিতে দিনের পর দিন সে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অসহায় অবস্থা দ্যাখে, এই ছবি তার কোমল প্রাণ সইতে পারেনি। তাই সে তৎকালীন সময়ের দশ মিলিয়ন ডলারের চিত্রকর্ম দ্য লাভ লেটার চুরি করে তার মুক্তিপণ হিশেবে মোটা অঙ্কের ডলার দাবি করে। এবং জানায়, এ ডলার ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা কারিতাসকে দিতে হবে। তারা পৌঁছে দেবে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধপীড়িত মানুষদের কাছে। গণমাধ্যমকে সে নিজের পরিচয় দ্যায় থিল ফন লিমবার্গ বলে। এ এমনই এক চরিত্র, যে কীনা ধনীদের সম্পদ কেড়ে এনে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দ্যায়।
প্রশাসন আটক করে মারিওকে। জনগণ মারিওর পক্ষে নানা সমাবেশ করতে থাকে। সরকার ছয় মাস পর মারিওকে মুক্তি দ্যায়। কিন্তু বিধস্ত মারিও বেরিয়ে আসে জেল থেকে। কিছুটা পাগল পাগল অবস্থা তখন তার। বিয়ে করে প্রেমিকা অ্যানিকে। তাদের একটি মেয়েও হয়। অ্যানিকে মারধোর করতে থাকে মারিও। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর রাস্তায় রাস্তায় থিল ফন লিমবার্গের দিন ও রাতযাপন। অবশেষে আত্মহত্যা।
আমাদের মতো বৃদ্ধ আর পচে যাওয়া জনগণ কেবল মারিওদের মুক্তির জন্য দু`একটা কথা বলতে পারে, প্রকৃত মুক্তি এনে দেয় মারিওদের মতো তরুণরা।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী