চ.বির বৃক্ষ ও প্রাণিসম্পদ

নাঈমুল হাসান হিমেল

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২০, ২০১৭

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষাপীঠ। প্রাকৃতিক সুন্দর্যের লীলাভূমি এ বিশ্ববিদ্যাল চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারি থানার ফতেহপুর ইউনিয়নের জঙ্গলপট্টি মৌজার ১৭৫৩.৮৮ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। পাহাড় ও সমতল ভূমির সমন্বয়ে অপরূপ নকশায় গড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়। ঘন সবুজে ঘেরা শান্ত সুনিবিড় প্রকৃতি যেন বিধাতার আপন হাতে তৈরি জীব বৈচিত্র্যের এক বিশাল ভাণ্ডার। কাটা পাহাড়, টেলি পাহাড়, ভিসি হিল, কলা ভবনের পেছনের পাহাড় এবং সেন্ট্রাল ফিল্ডের প্রকৃতি মুগ্ধ করবে যে কাউকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্যের এক অমূল্য ভাণ্ডার এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে হঠাৎ দেখা মিলবে মায়া হরিণের শান্ত হেঁটে চলা। অসংখ্য পাখির কলতান মনে এক অপার শান্তি বয়ে আনে। ক্যাম্পাসে ঢোকার পথেই রয়েছে কাটাপাহাড়, যা জীব-বৈচিত্র্য সোপার হটস্পট নামে পরিচিত। ভারতের নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও বাংলাদেশের সিলেটের এক প্রান্ত থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটি ‘ইন্দোবার্মা ডাইবারসিটি  হটস্টট’ নামে পরিচিত। ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট এ অঞ্চলটিকে জীব-বৈচিত্র্যের এক আকর ভূমি হিসেবে অভিহিত করেছে। এ হটস্পটের সোপার হটস্পট বলা হয় চ. বি. কাটাপাহাড়টিকে। এখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ, ব্যাঙ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী।
১৬ প্রজাতি স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৫০ প্রজাতির পাখি এবং বাংলাদেশে আবিষ্কৃত ৩৫ প্রজাতির ব্যাঙয়ের ২৫টি প্রজাতির ব্যাঙই এখানে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এই একটি স্থানেই এত প্রজাতির ব্যাঙ একসাথে পাওয়া যায়। বিরল প্রজাতির গাছের মধ্যে বাঁশপাতা, যা পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে প্রথম আবিষ্কৃত ফ্যাজারভেরিয়া আসমতি বা বাংলাদেশি ঝিঁঝি ব্যাঙ, সুন্দরী ব্যাঙ, চীনা ব্যাঙ এবং তাইপে ব্যাঙসহ আরও তিন ধরনের গেছো ব্যাঙ রয়েছে এখানে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে লালচে-বাদামি রঙের মায়া হরিণ, বন্য শুকর ও বিভিন্ন প্রজাতির বানর। এছাড়া রয়েছে বনরুই। বানরের মধ্যে মুখপোড়া বানর, পিগটেল বানর ও হনুমান রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও এরা সখ্যায় খুবই অল্প। সাইক্লোসিস ডেনটাটা নামের বিরল প্রজাতির একটি কাছিমও পাওয়া যায় এ ক্যাম্পাসে। প্রশাসনের উদাসীনতায় স্থানীয় শিকারিদের অত্যাচারে প্রতিনিয়ত কমে আসছে হরিণ, বন্য শুকর, বানর, বনরুই ও সাপসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী। রাতের ক্যাম্পাসে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ রাস্তা কেটে চলে যাওয়া সজারু কিংবা দুপুরে হঠাৎ ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের পেছনে ঘাস খেতে আসা হরিণ মুগ্ধ করে যে কাউকে। হঠাৎ হরিণের চিৎকার উৎসুক চোখের দৃষ্টিকে চঞ্চল করে তোলে। একবার দেখার আশায় সকলেই দৃষ্টি ফেরায় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে, যতদূর চোখ যায়।
ছায়া ঘেরা সুশীতল এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অসংখ্য বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ। বাঁশপাতা নামের বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে চ.বির কাটাপাহাড়ে। বিলুপ্তপ্রায় এ উদ্ভিত উন্নত মানের পেন্সিল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, গর্জন গাছ, গামার, গরিয়াল, সিবিট ইত্যাদি বৃক্ষ। দেশি প্রজাতির বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষের সমারোহও লক্ষ্য করা যায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। অসংখ্য জানা-অজানা ফুলে সারা বছরই উৎসব বিরাজ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাণী জগতের সোপার হটস্পট এ ক্যাম্পাস প্রাণী গবেষণার এক তীর্থ স্থান হতে পারে প্রাণী গবেষকদের জন্য। পৃথিবীর আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে এত প্রাণীর সমারোহ লক্ষ্য করা যায় না। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয়, অপার এ সম্পদের অনেকটাই এখন অবহেলিত ও অরক্ষিত। সরকার ও প্রশাসনের উদাসীনতায় এ সম্পদের অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। অরক্ষিত অবস্থায় থাকার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার জীব-বৈচিত্র্য। স্থানীয় শিকারিদের নির্বিচারে প্রাণী হত্যা ও বৃক্ষ নিধনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচুর্যতা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অংশটিকে অভয়ারণ্য ঘোষণার দাবি সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও সাধারণ জনগণের। যদিও আগের তুলনায় প্রশাসন এখন অনেকটাই সচেতন। সঠিক লোকবল নিয়োগ এবং পরিচর্যার মাধ্যমে এই সোপার হটস্পট রক্ষাই সকলের কাম্য।

লেখক: শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদ, চ.বি