চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে কী ঘটবে?

সাইফুল্লাহ আল মানসুর

প্রকাশিত : মার্চ ০৮, ২০২২

কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশি মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে, চীন কী তাইওয়ানে হামলা করে তাইওয়ান দখল করে নেবে? এই আলোচনা এখন হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে। এর আগে ক্রিমিয়া দখল করেছিল এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের দুটি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাকে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউক্রেনের সাহায্যে কোনো দেশ এগিয়ে আসেনি। যদিও ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাশে থাকবে বলে কথা দিয়েছিল। এখন চীনও কী তাইওয়ান দখল করে নিতে পারে? যার ওপর চীন ৭৩ বছর ধরে সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে। চীনে তাইওয়ানে হামলা করবে, এটি আলোচনা হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, চীন তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে মনে করে থাকে। তাইওয়ানও চীনকে নিজের অংশ মনে করে থাকে। চীন তাইওয়ানের চেয়ে অনেকগুণ বড়। আয়তনের শতকরা হিসেবে তাইওয়ান চীনের আয়তনের ০.৩৭ শতাংশ আয়তন বিশিষ্ট একটি দ্বীপ। চীনের জনসংখ্যা ১৪৪ কোটি। অন্যদিকে তাইওয়ানের জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৮ লক্ষ। এই হিসেবে চীনের জন্য তাইওয়ানকে দখল করা খুব সহজ। তাইওয়ানের ওপর চীনের ৭৩ বছর ধরে দাবিও আছে।

১৯৪৯ সালে চীন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি চিয়াং কাই শেককে Chiang Kai-shek পরাজিত করে মাও সে তুং Mao Zedong চীনে শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তখন চিয়াং কাই শেক তার অনুসারীদের নিয়ে তাইওয়ানে পালিয়ে যায়। তখন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত চীন তাইওয়ানকে নিজের অংশ মনে করে থাকে এবং তাইওয়ান দখল করার জন্য চেষ্টাও করে থাকে। কিন্তু এসব চেষ্টা সফল হয়নি। তাইওয়ানের সাথে এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমেরিকার সমর্থন রয়েছে। এরকম সমর্থন তো ইউক্রেনের সাথেও ছিল। কিন্তু ইউক্রেনকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই এখন এই প্রশ্নটি বারবার করা হচ্ছে। তাইওয়ানে চীন আক্রমণ করলে কী ঘটবে কিংবা চীন কেন তাইওয়ানে আক্রমণ করবে না, এর উত্তর জানার জন্য ১৯৯৪ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের আমেরিকায় অবতরণ এবং পুরো রাত বিমানে কাটিয়ে দেওয়ার ঘটনাটা জানতে হবে। পূর্বে আমরা জেনেছি যে, তাইওয়ান নিজেকে আসল চীন মনে করে এবং চীনকে নিজের অংশ মনে করে। অন্যদিকে চীনও নিজেকে একমাত্র চীন মনে করে এবং তাইওয়ানকে নিজের অংশ মনে করে। চীন ও তাইওয়ান উভয়েই এক চীন নীতির One China Policy ওপর একমত। এই নীতি অনুসারে, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না তথা মূল চীনকে স্বীকৃতি দেয় এবং তাইওয়ানকে দক্ষিণ আমেরিকার কিছু ছোট দেশ স্বীকৃতি দেয়। খোদ আমেরিকাও তাইওয়ানকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। যদিও তাইওয়ান একটি ধনী দেশ, তার নিজস্ব সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থাও রয়েছে।

১৯৯৪ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লি তেং হুই Lee Teng-hui মধ্য আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তার বিমানের জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হলো। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের বিমান আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপের হনলুলু Honolulu শহরে অবতরণ করে। প্রেসিডেন্ট লি বিমান থেকে নামতে চাচ্ছিলেন। কারণ তিনি সাধারণ এই অযুহাতেই আমেরিকা ভ্রমণ করে থাকেন। কিন্তু আমেরিকা তাকে ভিসা দেয়নি৷ ফলে প্রেসিডেন্ট লিকে সারা রাত তার বিমানেই কাটাতে হয়। প্রেসিডেন্ট লি আমেরিকার এই আচরণে চরম অসম্মান বোধ করেন। তিনি পরবর্তীতে বলেছিলেন, আমেরিকা আমার সাথে দ্বিতীয় শ্রেণির নেতার মতো আচরণ করেছে। যদিও আমরা আমেরিকার পক্ষেই থাকি। আমেরিকার সিনেটেও আমেরিকার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। সিনেটররা বলেন তাইওয়ান আমাদের বন্ধু, আমরা এক চীন নীতি অনুযায়ী তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ না মানলেও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে ভিসা দেওয়া উচিত ছিল। এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন যাবৎ আমেরিকা ও তাইওয়ানের সম্পর্ক কিছুটা শীতল ছিল। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছিল, আপনারা তাইওয়ানের বিমান অবতরণ করার অনুমতি দিয়ে ঠিক করেননি। ১৯৯৫ সালেও এই ঘটনা তাদের মনে ছিল। ১৯৯৫ সালের জুন মাসে আমেরিকার কর্নিল বিশ্ববিদ্যালয় Cornell University তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে লেকচার দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। প্রেসিডেন্ট লি কর্নিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

আমেরিকার নিয়মানুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালে আমেরিকা তাকে ভিসা দিতো। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের ভিসা না পাওয়ার তেমন কোন কারণ ছিল না। কিন্তু একটি বড় কারণ ছিল। আমেরিকা চীনের অসন্তোষ থেকে বাঁচতে চাচ্ছিল। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিল ক্লিন্টন। তিনি চীনের অন্তোষ থেকে বাঁচার জন্য কংগ্রেসে ভোটিং করান। ভোটিংয়ে প্রেসিডেন্ট লিকে ভিসা দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টে লিকে ভিসা দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট লি ১৯৯৫ সালের ৯ এবং ১০ জুন কর্নিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেন এবং উচ্চ পদস্থ আমেরিকান কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। চীন প্রেসিডেন্ট লি এর এই সফরে প্রচণ্ড অসন্তুষ্ট হয়। চীন প্রতিক্রিয়ায় বলে, আপনারা এরকম করতে থাকলে হয়তো কোনদিন তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়ে দেবেন। চীন এতটা অসন্তুষ্ট হয় যে, প্রেসিডেন্ট লিকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করে পত্রিকায় বিভিন্ন লেখা ছাপা হয় এবং ১৯৯৫ সালেই চীন ফুজিয়ান প্রদেশে Fujian তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করে। এই সামরিক মহড়া তাইওয়ানকে বুঝাচ্ছিল, যে কোনো মুহূর্তে চীন তাইওয়ানে হামলা করতে পারে। চীনের বিশাল সামরিক মহড়ার খবর পেয়ে আমেরিকা দ্রুতই প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন দক্ষিণ চীন সাগরে থাকা আমেরিকান নৌবহরকে তাইওয়ান প্রণালিতে Taiwan Strait মোতায়েন করার আদেশ দেন। আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ ও বিমামবাহী রণতরী সব সময়ই আমেরিকার সুপার পাওয়ার শক্তি দেখানোর জন্য দক্ষিণ চীন সাগরে থাকতো ও থাকে।

প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের আদেশের পর আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ ও বিমানবাহী রণতরী ১৩০ কি. মি দৈর্ঘ্যের তাইওয়ান প্রণালিতে তাইওয়ানকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করা শুরু করলো। এটা আমেরিকার পক্ষ থেকে চীনের প্রতি তাইওয়ানে হামলা না করার বার্তা ছিল। আমেরিকা চীনকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকার সাথে তাকে যুদ্ধ করতে হবে। আমেরিকার এই বার্তা পাওয়ার পরও চীন তার সামরিক মহড়া জারি রাখে। এই সংকট ১৯৯৫ সালের ২১ জুলাই থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। চীন পিছু হটছে না দেখে আমেরিকা তার সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস ইন্ডিপেন্ডেন্সকে USS Independence CV-62 তাইওয়ান প্রাণালিতে মোতায়েন করে৷ এরপর চীন পিছু হটতে শুরু করে। চীন তার সামরিক মহড়া শেষ করে দেয়। এর ফলে চীন প্রকাশ্যে আমেরিকাকে পৃথিবীর সুপার পাওয়ার হিসেবে স্বীকার করে নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দ্বিতীয়বার আমেরিকা পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার প্রমাণিত হয়। এই ঘটনাকে তৃতীয় তাইওয়ান প্রণালি সংকট Third Taiwan Strait Crisis বলা হয়। ১৯৯৬ সালে আমেরিকা তাইওয়ানকে বাঁচানোর জন্য এতদূর পর্যন্ত এসেছিল এবং এর আগে ১৯৫৫ এবং ১৯৫৮ সালে আমেরিকা তাইওয়ানকে বাঁচাতে এসেছিল। কিন্তু ২০২২ সাল। এই ঘটনার ২৬ বছর পার হয়ে গেছে। আজ আমেরিকা ততটা শক্তিশালী নেই, চীন আগের মতো দূর্বল নেই এবং তাইওয়ানও আগের তাইওয়ান নেই। তাইওয়ান তার চারিদিকে আকাশসীমায় এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিটি ফিকেশন জোন Air Defence Identification Zone বানিয়েছে।

তাইওয়ানের আকাশ সীমায় কোনো বিমান আসতে হলে আগে তাকে পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু চীন তাইওয়ানের এই এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিটি ফিকেশন জোনকে পাত্তা দেয় না। চীন ২০২১ সাল থেকে লাগাতারভাবে তার যুদ্ধবিমান দিয়ে তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিটি ফিকেশন জোনের লঙ্ঘন করেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে ৫৬টি বিমান পাঠিয়েছিল চীন। এটা তাইওয়ানের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কারণ চীনা বিমান এখন কয়েক দিন পর তাইওয়ানের আকাশে ঢুকে চলে গেলেও হতে পারে কোনো দিন সে আক্রমণ করবে। তাই তাইওয়ানকে প্রতি মুহূর্তে সজাগ থাকতে হয় না জানি কখন চীন আক্রমণ করে। তাইওয়ানকে প্রতি মুহূর্তে নিজের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সজাগ রাখতে হয় এবং এর জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। যা ছোট দেশগুলো সাধরণত বহন করতে পারে না। ফলে বড় দেশগুলো ছোট দেশগুলোর ওপর খবরদারি করতে পারে। চীনের তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা তার নৌবহর তাইওয়ান প্রণালিতে পাঠায়। কিন্তু এবার চীন পিছু হটেনি। কারণ চীন এখন অনেক শক্তিশালী। চীন আমেরিকান নৌবহর আসার প্রতিক্রিয়ার তাইওয়ানের আকাশসীমার লঙ্ঘন আরও বেশ কয়েকবার করে। ফলে আমেরিকাকে তার নৌবহর পিছু হটাতে হয়।

আমেরিকার সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনা নৌবাহিনীর নৌযানের সংখ্যা আমেরিকার নৌবাহিনীর নৌযানের চেয়ে বেশি এবং চীন এখন সাধারণত মহড়াতেই ভয় পাবে না। বর্তমান সময়ে চীন এত শক্তিশালী এবং ইউক্রেনের উদাহরণও রয়েছে। তাও চীন তাইওয়ানে হামলা করবে না। এর ৪টি বড় কারণ রয়েছে।

প্রথম কারণ, তাইওয়ানকে আমেরিকা একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও আমেরিকা বারবার বলেছে আমরা তাইওয়ানকে রক্ষা করতে আসবো। ইতিহাসে আমেরিকা বেশ কয়েকবার তাইওয়ানকে রক্ষা করতে এসেছে। এছাড়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দুইবার বলেছেন, আমেরিকা অবশ্যই তাইওয়ানকে রক্ষা করবে। অন্যদিকে আমেরিকা ইউক্রেনের ব্যাপারে কখনোই ইউক্রেনকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তাইওয়ান আমেরিকার জন্য ইউক্রেনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় কারণ হলো, তাইওয়ানের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আমেরিকা যখন আসার তখন আসবে। কিন্তু এর আগে তাইওয়ানকে নিজের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি অত্যাধুনিক সামরিক ও সাইবার দুর্গের মতো। যাকে পরাজিত করা এত সহজ নয়। চীনকে যদি তাইওয়ানে হামলা করতে হয় তাহলে ২০ লক্ষ পদাতিক সৈন্যের প্রয়োজন হবে। এছাড়া দরকার হবে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী। তাইওয়ানের সক্রিয় সৈন্য ১ লাখ ৭০ হাজার। রিজার্ভে আছে ১৫ লক্ষ সৈন্য। কোনো দেশে আক্রমণ করতে হলে সেই দেশের সেনাবাহিনীর কয়েকগুণ সৈন্য দিয়ে আক্রমণ করতে হয়। তাই চীনের তাইওয়ান আক্রমণ করতে হলে ২০ লক্ষের অধিক সৈন্য প্রয়োজন হবে। তাইওয়ানের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকেজো করার জন্যও প্রচুর সৈন্যের প্রয়োজন হবে। যুদ্ধের জন্য বিশাল সেনাবাহিনী মানে বিশাল খরচ। এছাড়া ভারতের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত এবং জিনজিয়াংকে অরক্ষিত রেখে চীন কখনোই তাইওয়ানকে আক্রমণ করার জন্য এত বিশাল সেনাবাহিনী পাঠাবে না।

তৃতীয় কারণ হলো, তাইওয়ান শুধু আমেরিকা নয়, দক্ষিণ চীন সাগরের সকল দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ চীন সাগরের সকল দেশ তার নিজের নিরাপত্তার জন্য চীনকে তাঁর মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে তাইওয়ানকে সাহায্য করবে। অর্থ্যাৎ তাইওয়ানকে চীনের মোকাবিলা একা করতে হবে না। তাইওয়ানকে চীনের মোকাবিলা ততক্ষণ পর্যন্ত করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের সাহায্য না এসে যায়। এটা তাইওয়ান খুব ভালোভাবেই করতে পারবে। চতুর্থ কারণ, চীনের তাইওয়ানে আক্রমণ করার প্রয়োজন নেই। তাইওয়ানকে পৃথিবীর কোনো শক্তিশালী দেশ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তাইওয়ান চীনের মূল ভূখণ্ডে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী। তাইওয়ান চীনে ১৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তাইওয়ান ও চীনের বাৎসরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৪৯ বিলিয়ন ডলার। যা ভারত ও চীনের বাৎসরিক বাণিজ্যের চেয়েও বেশি। ভারত ও চীনের বাৎসরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১২৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া তাইওয়ান ও চীনের নাগরিকরা একে অন্যকে ঘৃণা করে না। তারা একে অন্যের চেয়ে বেশি নিজেকে চাইনিজ প্রমাণ করার চেষ্টা করে। তাই তাইওয়ানকে চীন দখল করার জন্য আক্রমণ করবে না। হংকং ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো।
তাইওয়ান চীন থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু হংকং চীনের মূল ভূখণ্ডে সমুদ্র তীরবর্তী। চীন হংকং দখল করার জন্য সামরিক অভিযান পরিচালনা করে নি। চীন হংকং আইনগতভাবে তার হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। আজও হংকং চীনের স্বায়ত্তশাসিত এলাকা। চীন হংকংকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপ এখনো করেনি।

এছাড়া তাইওয়ানের একটি দ্বীপ কিনমেন Kinmen যা চীন থেকে মাত্র ১০ বা ১৫ কিলোমিটার দূরে। যেখানে কোনো সামরিক স্থাপনাও নেই। চীন আজ পর্যন্ত সেখানে হামলা করেনি। চীনের একটি নীতি হলো, নিজের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য চীন যতটা সম্ভব যুদ্ধ এড়িয়ে চলা। তাছাড়া তাইওয়ানকে যখন কোন শক্তিশালী দেশ স্বীকৃতি দিচ্ছে না তখন কেন চীন নিজের অর্থনীতির ক্ষতি করে তাইওয়ান আক্রমণ করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সৃষ্টি করবে? সব মিলিয়ে বলা যায়, তাইওয়ানকে চীন আক্রমণ করবে না।