চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর হামলায় দায়ী ইসকন: পুলিশ
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : নভেম্বর ০৭, ২০২৪
চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে যৌথবাহিনীর ওপর হামলা ও সংঘাতে ইসকনকে দায়ী করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। হামলায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ১৪ সদস্য আহত হয়। বুধবার যৌথবাহিনী ও পুলিশের আলাদা দুটি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা জয় শ্রীরাম বলে স্লোগান দিয়েছে। আমরা তদন্ত ও গোয়েন্দা তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছি, এ ঘটনায় ইসকন সমর্থকরাই জড়িত। আটক ৮২ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ইসকনের সমর্থক।”
আন্তর্জাতিক শ্রীকৃঞ্চ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন। মঙ্গলবার ইসকনের বিরুদ্ধে ফটোকার্ড সম্বলিত একটি পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন হাজারী গলির মিয়া শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী মো. ওসমান আলী। তাতে তিনি ইসকনকে ভারতীয় জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে এটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ রাতে ওসমানের দোকান ভাঙচুর করে এবং তার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাজারী গলিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গেলে তাদের ওপর এসিড ও ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা করে। এতে ৫ সেনা ও ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ৫৮২ জনের নামে মামলা করে।
পুলিশ কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন বলেন, “ইসকন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওসমান আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, এমন তথ্যে কোতোয়ালি থানার টহল পুলিশ সেখানে যায়। কিন্তু একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক ওসমানকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের ৯ সদস্য আহত হন।”
আহতরা হলেন: কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান, কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম, বিপ্লব ব্যাপারী, আবু সায়েম সেজান, সাইদ হাসান, ফয়েজ, নাহিম আশিকুর এবং শাহাজাহান হোসেন শাওন। এদের মধ্যে কনস্টেবল ফয়েজ এসিড দগ্ধ হন।
অন্যদিকে যৌথবাহিনীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, “মঙ্গলবার রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অবস্থান করলে দুর্বৃত্তরা যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তারা জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড নিক্ষেপ করে এবং বিভিন্ন ভবনের ছাদের ওপর থেকে ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুড়তে শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্য আহত হন। তারা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চিকিৎসাধীন।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্সিল্ড ভেঙে ফেলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক লোককে আমরা আটক করি। তাদের থেকে যাচাই-বাছাই করে ৮২ জনকে রেখেছি। তাদের বেশিরভাগই ইসকন সমর্থক। কয়েকজন মুসলিমও থাকতে পারে। এটিও যাচাই-বাছাই চলছে। হামলায় কানো রাজনৈতিক মদদ রয়েছে কি না, সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।”
মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সারাদিন পুলিশ ও সেনা টহলের কারণে আতঙ্কিত অনেক ব্যবসায়ী দোকান খোলেনি। যেসব দোকান থেকে এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ আসে, সেগুলো ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সিলগালা করে রেখেছেন। ফলে ব্যস্ততম টেরিবাজার ও হাজারী গলিতে গতকাল কোনো ব্যবসা হয়নি।
ধর্মীয় উসকানির কারণে ওসমানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, “ওসমান পুলিশি হেফাজতে আছেন। কেউ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”