গ্লোবালাইজেশনের চশমা খুলতে হবে

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৫, ২০২০

ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের মোটাদাগের তফাৎ সম্ভবত এটাই যে, ট্রাম্প সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়েও ওবামার চেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন। মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে লাভজনক অস্ত্রের চুক্তিও ট্রাম্পের দখলে। ট্রাম্পের অস্ত্র নীতির ফলাফল বর্তমানে দৃশ্যমান না হলেও ভবিষ্যতে অবশ্যই সামনে আসবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রশ্নে `ট্রাম্প কতটা গণতান্ত্রিক` এই আলাপ পুরোটাই নির্ভর করছে মার্কিন নাগরিকদের উপর। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র কিম্বা নাগরিকদের কাছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়ী। অস্ত্র ব্যবসা এবং যুদ্ধ বাণিজ্যই যার রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি।

ট্রাম্পের একমাত্র কৃতিত্ব হলো, কোনো ধরনের বড় যুদ্ধ ছাড়াই অস্ত্রের বাজার নিজেদের দখলে রাখা। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অস্ত্র বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রই শীর্ষে অবস্থান করেছে বলে জানিয়েছে ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (এসআইপিআরআই)। ২০১৩-১৭ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ৯৮টি দেশে অস্ত্র রফতানি করেছে।

অস্ত্র বিক্রির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত ওবামা প্রশাসনের ধারাবাহিকতায় অস্ত্র রফতানিকে আরো গতিশীল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অস্ত্র রফতানিতে তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো আপাতত কেউ নেই বলেছেন আর্মস অ্যান্ড মিলিটারি এক্সপেন্ডিচার প্রোগ্রাম।

শুধু আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারও হাতছাড়া করেতে চায়নি ট্রাম্প। ২০১৭ সালের সুইজারল্যান্ডের ‘গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ এর গবেষণা মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা ৩২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৪ হাজার। আর মোট ব্যক্তিগত অস্ত্রের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার।

এ হিসাবে প্রতিজন একটির বেশি অস্ত্র বহন করে। অতএব এই লাভজনক ব্যবসা হাতছাড়া না করার জন্য ওবামার ২০১৩ সালে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় ট্রাম্প। এতে অন্তত সাত হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বাণিজ্যে আবারো আধিপত্য ফিরে পায় আমেরিকা।

২০১৭ সালের মে মাসে ট্রাম্প তার প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়ে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করে। ১০ বছরে অস্ত্র চুক্তির আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ অর্থের অস্ত্র চুক্তি।

ট্রাম্পের কমিক প্রেজেন্টেশন হাস্যকর হলেও ট্রাম্প ওবামার মতোই দানব। এই প্রেজেন্টেশন শেষ পর্যন্ত একটা মার্কেটিং পলিসি, পিআর পলিসি। কিন্তু ইয়েমেন গণহত্যার মতো ভবিষ্যতের অনেক গণহত্যায় ট্রাম্পের বিক্রি করা অস্ত্রই ব্যবহৃত হবে।

কে ভালো মার্কিন নেতা, আলাপ বাদ দিয়ে নিজ রাষ্ট্রের নেতা নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এখন। গ্লোবালাইজেশনের চশমা খুলতে হবে।

লেখক: কবি ও কার্টুনিস্ট