গীতিকার মাসুদ করিমের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৬, ২০২৪

গীতিকার মাসুদ করিমের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কানাডার মন্ট্রিয়ালে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।

মাসুদ করিম ১৯৩৬ সালের ২৭ জুন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর কাজীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেজাউল করিম সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা নাহার ছিলেন গৃহিনী।

মাসুদ করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন। ঢাকা ও চট্রগ্রাম বেতার কেন্দ্রে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তার। পরে তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দান করেন।

মাসুদ করিম ১৯৬০ সালে ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার হিসেবে যোগ দেন। একসময় তিনি চলচ্চিত্রের জন্যও গান রচনা করেন। তিনি যেসব চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখেছেন তারমধ্যে রূপবান, মধুমিলন, ইয়ে করে বিয়ে, তানসেন, কে আসল কে নকল, অনেক দিন আগে, যাদুর বাঁশি, রজনীগন্ধা, মায়া মৃগ, দুই পয়সার আলতা, লালু ভুলু, পুত্রবধূ, ঘরণী, ওয়াদা, অনুরাগ, রাজদুলারী, অগ্নি কন্যা, ঝুমুর, আওয়ারা, অবদান, টাকার অহংকার, নিয়তি, আকর্ষণ, সাজানো বাগান, সবার উপরে, প্রায়শ্চিত, ভাঙ্গাগড়া, বিসর্জন, মহানায়ক, রামের সুমতি, আগমন, ব্যাথার দান, গরীবের বউ, দরবার-এ খাজা, চোরের বউ, প্রিয় তুমি, শিল্পী, হৃদয় থেকে হৃদয়, দেনমোহর, সত্যের মৃত্যু নেই উল্লেখযোগ্য ।

কাব্যিক গানের অসম্ভব মেধাবী এই গীতিকার অসংখ্য জনপ্রিয় ও শ্রুতিমধুরবাণীসমৃদ্ধ গান লিখে গেছেন। মাসুদ করিমের লেখা কিছু জনপ্রিয় কালজয়ী গান– শক্র তুমি বন্ধু তুমি, সজনী গো ভালোবেসে এত জ্বালা কেন বল না, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যেই, সন্ধ্যারও ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়া, তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছো মানুষ কিনা, যখন থামবে কোলাহল নিঝুম চারিদিক, দুটি চোখে চোখ রেখে আমারে তুমি শুধালে, আমি তোমার মনের মতো কিনা, জোনাক জোনাক রাত, তন্দ্রা হারা নয়ন আমার, শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো, নেই নিঃশ্বাসের বিশ্বাস, মনে কি পড়ে একদিন আমিও ছিলাম, মন তো নয় আর আয়না ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।

মাসুদ করিম ইউনিক নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি কয়েকটি সিনেমাও প্রযোজনা করেন। তার প্রযোজিত বাংলা ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, অচেনা অতিথি, ওয়াদা এবং ভালো মানুষ।

সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। ১৯৮২ সালে ‘রজনীগন্ধা’ এবং ১৯৯৪ সালে ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবির জন্য, শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন মাসুদ করিম। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনেক সম্মাননা স্মারক পেয়েছেন।

ব্যক্তিজীবনে মাসুদ করিম ১৯৬৫ সালে দিলারা আলোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দিলারা আলো একজন স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী। এই দম্পতির এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মেয়েরা হলো: কনক, কান্তা ও সিনথিয়া। আর ছেলে সোহেল।

জানা যায়, প্রথম জীবনে মাসুদ করিমের ভাবের ঘোর ছিল কবিতায়, পরের জীবনে গানে। ষাটের দশক থেকে ঢাকা শহরে যে সুদ্ধ সংগীতের জগৎ তৈরি হয়েছিল, মাসুদ করিম ছিলেন সেজগতের একজন উল্লেখযোগ্য সদস্য। নিজের সৃজনশীল কর্ম দিয়ে তিনি, নিজেকে নিয়ে গেছেন সংগীতের এক অনন্য উচ্চতায়।

জনপ্রিয় এই গীতিকার- রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, আধুনিক, দেশাত্ববোধক, পল্লীগীতিসহ বাংলা গানের বিভিন্ন শাখায় সহস্রাধিকের মতো গান লিখেছেন। তার লেখা ৮০০ গান নিয়ে ‘৮০০ গানের সংকলন: মাসুদ করিম’ নামে একটি গ্রন্থ, কণ্ঠশিল্পী দিলারা আলোর সম্পাদনায়, অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

একজন খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় গীতিকার ছিলেন মাসুদ করিম । দেশ-বিদেশের অনেক নামকরা সুরকারেরা তার রচিত গানে সুর দিয়েছেন এবং বিখ্যাত সব কণ্ঠশিল্পীরা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। কাব্যিক গানের অসম্ভব মেধাবী এই গীতিকার, আমাদের দেশের বাংলা গানের জগতকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তার প্রতিভা দিয়ে । বিশেষ করে তার শ্রুতিমধুর বাণীসমৃদ্ধ গান, বাংলা সিনেমাকে করেছে সমৃদ্ধ।

নম্র স্বভাবের ভদ্র একজন সাদা মনের ভালো মানুষ ছিলেন মাসুদ করিম। ফর্সা রঙের, বড় কালো চোখের, বিনয়ী স্বভাবের এই মানষটি সকলের কাছেই অতি প্রিয় ছিলেন। কানাডার মন্ট্রিয়ালে এক কবরস্থানে একটি গাছের নিচে চিরনিদ্রায় শায়ীত আছেন, অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের গীতিকবি, বাংলাদেশের গানের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র- মাসুদ করিম।

বাংলা গানের কিংবদন্তী গীতিকার মাসুদ করিম, শারীরিকভাবে এই পৃথিবীতে বেচেঁ নেই। কিন্তু আছে তার অমর সৃষ্টি গান, যা থাকবে অনন্তকাল। তার এই গানের মোহনীয় বাণীতে, সুরের মূর্ছনায়, তিনি বেচেঁ থাকবেন অনন্তকাল।