গান্ধী নন, ‘ভারত ছাড়ো’ স্লোগান প্রথম দেন মেহের আলি

ছায়াবীথি শ্যামলিমা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ৩০, ২০১৯

ইতিহাস কথা বলে। বিশেষ করে প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে দেশের ইতিহাস নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। কিন্তু জানেন কি, ‘ভারত ছাড়ো’ (Quit India) স্লোগানটি প্রথম কে দিয়েছেন? এই দুটি শব্দ প্রথম ব্যবহার করেছিলেন কংগ্রেস নেতা ইউসুফ মেহের আলি। এই স্লোগান পরবর্তী কালে ইংরেজের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।

এটা ঠিক যে, ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট গান্ধাজি মুম্বইয়ের গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। সেই আন্দোলনের সময়ই তিনি ডাক দেন, ‘‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’। শুধু তাই নয়, গান্ধাজির গ্রেফতারের পরেও কয়েক মাস ধরে গোটা ভারতরবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল।  কিন্তু এই ‘ভারত ছাড়ো’ স্লোগানটি ইউসুফ মেহের আলি নামের এক কংগ্রেস নেতার উদ্ভাবন।

‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন শুরুর বেশ কিছু দিন আগে মুম্বইতে গান্ধাজির ঘনিষ্ঠদের নিয়ে কংগ্রসের এক বৈঠকে এই শব্দ দুটি ব্যবহার করেছিলেন মেহের আলি, তিনি সেই সময় মুম্বইয়ের মেয়র ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য এই ইউসুফ মেহার আলী আটবার জেলে যান। গান্ধীজির সঙ্গে মেহের আলিও ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে ১৯৪৬ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান এবং স্বাধীন ভারতে এমএলও হয়েছিলেন। তিনিই কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৫০ সালে মুম্বইতে তার মৃত্যু হয়।

কে. গোপাল স্বামীর বই ‘Gandhi and Bombay’তে উল্লেখ রয়েছে, একেবারে পরাধীন ভারতের শেষ কয়েকটা বছর এই ‘ভারত ছাড়ো’ স্লোগানটি দেশজুড়ে আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছিল। সেখানে বলা হয়েছে, শান্তিকুমার মোরারজির রেকর্ড অনুসারে গান্ধীজি তার সহকর্মীদের বলেছিলেন স্বাধীনতার জন্য শ্রেষ্ঠ স্লোগান তৈরি করতে। প্রথমে একজন করেছিলেন ‘বেরিয়ে যাও’ ( ‘Get out’)। কিন্তু সেটা গান্ধাজির পছন্দ হয়নি।

রাজা গোপালাচারি বলেছিলেন, ‘অপসারণ অথবা প্রত্যাহার’ (Retreat’ or ‘Withdraw)। কিন্তু সেটাও গান্ধীজির মনমতো হয়নি। অবশেষে ইউসুফ মেহের আলি দিয়েছিলেন ‘ভারত ছাড়ো’, সেটা গান্ধীজি অনুমোদন করেন।

মেহের আলির জীবনীকার মধু দণ্ডপত ১৯৪২ সালে আন্দোলন শুরুর আগে ‘ভারত ছাড়ো’ নামে একটি বুকলেট প্রকাশ করেন, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ৭ আগস্ট কংগ্রেস কমিটি বৈঠক শুরুর আগেই এই স্লোগানকে জনপ্রিয় করতে ‘ভারত ছাড়ো’ ব্যাচ ছাপানো হয়েছিল। একথা জানিয়েছেন ইউসুফ মেহের আলি সেন্টারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জিসি পারেখ। এই জিসি পারেখও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর।