গাজী লতিফ
গাজী লতিফের একগুচ্ছ কবিতা
প্রকাশিত : নভেম্বর ১৯, ২০২১
প্রেমান্ধ পঙক্তিমালা
১.
সাগর বা নদী তীরে বালুকা বেলায়
সকাল বিকাল কিম্বা গোধূলিতে চন্দ্রারাতে
ভরা জ্যোছনায়
আমাদের প্রাত্যহিক পদচ্ছাপগুলো
পলাশ-প্রণয়মাখা হীরেমোতি স্বর্ণচুর্ণ-ধুলো
বিস্মৃতির ঢেউ এসে মুছে নিয়ে যায়
লেলিহান আগুনের সর্বগ্রাসী ঝাপটায়
ইন্দ্রিয় ভোঁতা হয়, অনুভূতি লোপ পায়
তবুও তো শিহরণ জেগে থাকে মেধা ও মননে
যে পারে সে পারঙ্গম; তুলে আনে বিনম্র খননে
চিকচিক চমকায় ছলকায় মরীচিকা
আমি কি ভুলেছি অনামিকা...!
না-চেনার ভান করে প্রতিবারই তুমি কিন্তু ভোলো বাহানায়!
নিরুদ্দেশ প্রণয়-সাম্পান ভেসে ভেসে কালের গলিত গর্ভে অকূলে হারায়...!
২.
সেই সব হৃদ্য-ঋদ্ধ প্রেমঘন দিনগুলো
পড়ে আছে অলকানন্দায়
তারপর শাখাচারী সংগ্রামী মানুষ
লড়াই-সংগ্রাম-যুদ্ধে কষ্টে কেটেছে দিন প্রত্নগুহায়
সেদিনের সব স্মৃতি যুগপৎ লেপ্টে আছে অনেকের মননের গায়
সময়ের পাথুরে প্রমাণ আজও জেগে আছে হৃদয়ের আলতামিরায়!
পরশ পাথরে আঁকা ছবিরা কি কখনও হারায়!
যেতে চাও সোজা চলে যাও; কেন যাবে ছল করে! মিছে বাহানায়...
ফলাফল
শেষবেলায় এসে
সকল রংখেলা শেষে
বিস্ময়ে বিস্ফারিত দেখি
ফলাফল একই
শূন্য, শূন্য এবং শূন্য...
এরই মাঝে ঘটে যায় কত পাপ!
দুঃখতাপ পরিতাপ—
অশ্রুতে ধুয়ে গেলে জোটে কিছু পুণ্য
বাদবাকি সব ফাঁকি! শূন্য... মহাশূন্য...
শীতার্ত পঙক্তিমালা
কুকড়েছে শীতার্ত-উদ্ভিদ
শীত!
তাও দখিনার গীত!
কে গায়!
কোন অজানায়!
বেলা যে ফুরায়...
এসো গুণ টানি
ঘুরিয়ে কালের ঘানি
দখিনাকে ধরে বেঁধে কাছে টেনে আনি
ছাইলিপি
ভেতরের তোলপাড় দিশেহারা হলে
উদগিরিত ভিসুভিয়াসের লাভা
স্রোত এসে থামে প্রগাঢ় নীলোৎপলে
চোখ ঝলসানো তরল অনল আভা...
বিভায় বেকুব! নিকষ আঁধার কালো
টগবগ করে চারপাশে এ কী আলো!
এ কোন আলোক ঘুমঘোরে চমকালো!
বাপরে কী তেজ! লাভার করাল থাবা!
লাভার দহন জল হয়ে গেলে নিভে
বিফল জনম যাওয়া আর আসা সার
কথারাও থামে মাঝপথে এসে জিভে
প্রস্থানকালে ঘনালে অন্ধকার!
রূপনারাণের জলে ডোবে রোসনাই
পড়ে থাকে ছাইলিপি ছাইভাষা— ছাই!