গাজী মাজহারুল আনোয়ার
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পাঁচটি গান
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
আজ সকালে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার। অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা তিনি। একটা সময়ে তার লেখা গান বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফিরত। আজকের ইউটিউব যুগের প্রজন্ম তার গানের সঙ্গে তেমনভাবে পরিচিত নয়। তার প্রয়াণে ছাড়পত্র পরিবার শোকাহত। তার স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার লেখা পাঁচটি গান পুনর্মুদ্রণ করা হলো:
তুমি কাছে এসো বন্ধু
তুমি কাছে এসো বন্ধু
আমি ভালোবাসা পেতে চাই
আমি মনের মানুষ হতে চাই।
আমার মনের আশা ওগো দাও না মিটিয়ে
ধন্য করো আমারে প্রেমের পরশও দিয়ে।
তোমার চলার পথে সাথি হতে যে চাই
আমি মনের মানুষ হতে চাই।
আমায় একাকী ফেলে দূরে যেও না চলে
দুঃখ নিয়ে জীবনে ভাসি চোখেরই জলে।
ভেঙে পায়ের শিকল হারিয়ে যেতে যে চাই
আমি মনের মানুষ হতে চাই।
একতারা তুই দেশের কথা
একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল
আমাকে তুই বাউল করে সঙ্গে নিয়ে চল।
জীবন মরণ মাঝে
তোর সুর যেন বাজে।
একটি কথা আমি শুধু বলে যেতে চাই
বাংলা আমার সুখে-দুখে হয় যেন গো ঠাঁই।
একটি গান আমি শুধু গেয়ে যেতে চাই
বাংলা আমার আমি যে তার আর তো চাওয়া নাই।
প্রাণের প্রিয় তুমি
মোর সাধের জন্মভূমি
তোমায় বরণ করে
যেন যেতে পারি মরে।।
হয় যদি বদনাম
হয় যদি বদনাম হোক আরও
আমি তো এখন আর নই কারও।
অন্ধ গলির এই যে আঁধার
বন্ধু হলো আজ আমার।
জীবন ভরে ছিল শুধু হাসি শুধু গান
কোথা যে হারালো কেঁদে কেঁদে বলে প্রাণ।
বকুল শুকালো সুবাস হারালো
আর কিছু বাকি নেই হারাবার।
দুখের আগুনে পুড়ে গেছে অন্তর
ঝড়ে ভেঙে গেছে বালুচরে বাঁধা ঘর।
এখন মরণ এলে
কাছে ডেকে নিলে
ছুটে যাব ভেঙে পারাপার।
কারো আপন হইতে পারলি না অন্তর
কারো আপন হইতে পারলি না অন্তর
আমার ভালোবাসার শূন্য ভিটায়
কেউ বাঁধল না ঘর।
ব্যথা দেয়ার মানুষ আছে, কথা দেয়ার নাই
আশার পাখি খাঁচায় বাইন্ধ্যা আশায় দিন কাটাই।
আমি কাঁদিতেও পারতাম যদি
চোখের জলে পাইতাম নদী
পাইলাম বালুচর
কারো আপন হইতে পারলি না অন্তর।
জ্বালা হইল গলার মালা অঙ্গার হইল মন
বাহিরে বসন্ত আসে ভিতরে শ্রাবণ।
কেউ সোহাগেরই চন্দন দিয়া
ভালবাসার বন্ধন দিয়া
নিলো না খবর
কারো আপন হইতে পারলি না অন্তর।
চোক্ষের নজর এমনি কইরা
চোক্ষের নজর এমনি কইরা
একদিন ক্ষইয়া যাবে
জোয়ার ভাটায় পইড়া দুই চোখ
নদী হইয়া যাবে
পোড়া চোখে যা দেখিলাম
তাই রইয়া যাবে।
সকল কথার মরণ হইলে
হৃদয় কথা কয়
সেই কথাও চোখের কাছে
নয়রে গোপন নয়।
চোখেরই নাম আরশিনগর
একে একে মনের খবর
সে তো কইয়া যাবে।
এই চক্ষুতেই রোদ্রে ওঠে
আবার ওঠে ঝড়
এই চক্ষুই আপন করে
আবার করে পর।
চোক্ষে যদি কেউ না তাকায়
দুঃখ দিয়া যায় চইলা যায়
সেও সইয়া যাবে।