
গাজায় ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করে ইজরায়েলের গণহত্যা: অ্যামনেস্টি
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : এপ্রিল ২৯, ২০২৫
‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করে গাজায় ইজরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি আজ মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইজরায়েল নিখুঁত পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজাবাসীদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা সামাজিক মাধ্যমে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ও গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। ইজরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে, যা গণহত্যার সমতুল্য।
অ্যামনেস্টি, অন্যান্য অধিকার সংস্থা ও কয়েকটি দেশ একই অভিযোগ আনলেও গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ইজরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালায়। হামলায় ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ।
পাশাপাশি, হামাসের হাতে বন্দি হয় ২৫১ ব্যক্তি, যাদের ৫৮ জন এখনো গাজায় আছে বলে ধারণা করা হয়। ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভাষ্য, তাদের মধ্যে ৩৪ জন এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে।
এই হামলার প্রতিশোধ নিতে সেদিনই গাজায় নির্বিচার ও গণহত্যামূলক হামলা শুরু করে ইজরায়েল। মাঝে দুই দফায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি চালু থাকলেও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এই হামলায় ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলেন, “২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইজরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ করে এবং ২৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিম্মি করে। এরপর থেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ে প্রচারিত (ইজরায়েলি) গণহত্যার দর্শক হতে বাধ্য হচ্ছে সারা বিশ্ব।”
তিনি আরও বলেন, “ইজরায়েল যখন হাজারো ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, কয়েক প্রজন্মের মানুষসহ সমগ্র পরিবারকে নির্মূল করছে, বাড়িঘর, জীবন-জীবিকা, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস করছে, তখন গোটা বিশ্ব ক্ষমতাহীন হয়ে তা চেয়ে চেয়ে দেখেছে।”
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইজরায়েলি সামরিক অভিযান গাজার বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত, গৃহহীন, ক্ষুধার্ত করেছে এবং প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে ফেলেছে। তাদেরকে চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ ও খাওয়ার পানি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের পুরো সময়টায় ইজরায়েলের একাধিক যুদ্ধাপরাধের বিস্তারিত তথ্য নথিবদ্ধ করেছে, যার মধ্যে আছে বেসামরিক মানুষ ও স্থাপনায় সরাসরি হামলা এবং সার্বিকভাবে, নির্বিচার ও মাত্রা ছাড়ানো হামলা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইজরায়েলের অভিযান ১৯ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে, যা গাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের সমান। তারা জেনেবুঝে এক নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।