
গদ্যটা বাজারে বসেও লিখতে পারব
পর্ব ১০
প্রকাশিত : মে ১৩, ২০১৮
মেহেদী উল্লাহ বর্তমান প্রজন্মের একজন মেধাবী গল্পকার। তার ভাষা যেমন কারুকাজময়, তেমনই চিন্তায় রয়েছে প্রথা ভেঙে নতুন কিছু তৈরির আয়োজন। গেল মেলায় প্রকাশিত হয়েছে প্রথম উপন্যাস গোসলের পুকুরসমূহ। প্রকাশিত গল্পের বই চারটি। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৩। কবি ও কথাসাহিত্যিক আবু তাহের সরফরাজ তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গপসপ করেছেন। প্রতি শনিবার ধারাবাহিকভাবে সেসব কথামালা প্রকাশ করা হবে:
সরফরাজ: লেখার জন্যে নোট নেয়ার দরকার পড়ে কখনও?
মেহেদী: হু। তবে লেখার আগে নিই না। লিখতে লিখতে নিই। লেখার কোনো একটা অংশে এসে যদি মনে হয় এই অংশটা ইনফরমেটিভ হয়ে ওঠা দাবি করতেছে, তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে নোট নিই। এক্ষেত্রে গুগলের নির্ভরযোগ্য লিংক, বই, সিনেমা ইত্যাদি থেকে নিই। লেখা বন্ধ করে দিয়ে আলাদা ওয়ার্ড ফাইল খুলে সেখানে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন জমাই। তারপর এডিট করে মূল লেখায় পেস্ট করি।
সরফরাজ: একটা প্রসঙ্গে থামাতেই হচ্ছে, পরে মিস হয়ে যেতে পারে। ফিকশনের চরিত্রদের নাম কি আশপাশের চেনাজানা মানুষের নাম থেকেই বেছে নেন, না অন্য কোনো পন্থা?
মেহেদী: চেনাজানা তো অবশ্যই। তবে পদ্ধতিটা ভিন্ন। ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে চরিত্রের নাম নিই। হুবহু না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে, দুইটা নামকে একটা বানাই। যেমন, একটা নাম হয়তো সেভ করা আছে `জামাল আহমেদ` নামে, আরেকটা `শরীফ হাসান`। ফলে দুটি মিলিয়ে হতে পারে কয়েকটি নাম, `হাসান জামাল`, `শরীফ আহমেদ` অথবা ` হাসান আহমেদ`। আবার শুধু প্রথম বা শেষ অংশ থেকেও নিই। যেমন, শুধু `ফারিয়া`। আগে-পরে আর কিছু নাই। গোসলের পুকুরসমূহ উপন্যাসের বেশিরভাগ চরিত্রের নাম এক শব্দের। দুই শব্দের নাম নেই বললেই চলে।
সরফরাজ: চরিত্রের নামের গুরুত্ব কতটা আপনার কাছে?
মেহেদী: আসলে চরিত্রের নামই চরিত্রকে অর্ধেক প্রতিষ্ঠা করে দেয়। এছাড়া কোন সময়ের ঘটনা, কোন এলাকা, প্রতিবেশ কেমন- তার উপর নির্ভর করে নাম নির্দিষ্ট করি। নামের বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারাও লেখকের বড় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। পৃথিবীর সেরা গল্প-উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ চরিত্রগুলোর নাম মনে করে দেখুন, চরিত্রগুলোর নামও প্রভাব ফেলেছে। যেন, ওই নামের কারণেই কন্টেন্ট আরো জমে গেছে। রবীন্দ্রনাথের `নন্দিনী`, `বিনোদিনী`, `গোরা`, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের `হাড্ডি খিজির`, হুমায়ূন আহমেদের `হিমু`, মিসির আলি`, সুনীলের `নীরা`, শহীদুল জহিরের `আবু ইব্রাহীম` এমন অসংখ্য চরিত্র আছে, যেগুলোর নামের এসেন্সও যুক্ত হয়েছে কন্টেন্টের সাথে। নাম নির্বাচন করা হয়েছে বিষয় ও প্রেক্ষাপট বুঝে। সবাইকেই তাই করতে হয়। তবে ঐতিহাসিক চরিত্র হলে ভিন্ন কথা। সেসব বদলে দেয়া যায় না। যেমন, `মীরজাফর` কত সুন্দর একটা নাম, অথচ আজ সেটা বেঈমানের সমার্থক শব্দ। আবার, ইতিহাসে `গোপাল` নামে রাজাও আছে, ভাড়ও আছে। চাইলেই তা বদলানো যাবে না। গোপাল ভাড়ের গল্প পড়ে রাজা গোপালের নাম মনে পড়লেও কিছুই করার নাই।
সরফরাজ: আপনার লেখালেখি কী রুটিন মেনে চনে, নাকি যখন এলো তখন লেখা, এ ধরনের?
মেহেদী: কয়েক বছর আগে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা এক বসায় একটা গল্প লিখে শেষ করতাম। কয়েক বছর হলো, রাতে লিখি। উপন্যাসটি রাতেই লেখা, প্রায়ই বারোটা থেকে ভোররাত পর্যন্ত। এখন রাতেই সময় ফিক্সড হয়ে গেছে। দিনে ক্লাস নেয়া ও একাডেমিক কাজের ব্যস্ততা থাকায় পারি না। তবে চাইলে ছুটির দিনে লেখা যায়। কিন্তু ছুটির দিনে আবার নানা কাজ থাকে। সুস্থ থাকা সাপেক্ষে রাতই উত্তম, নীরবতা বজায় রেখে লেখা যায়। তবে আমি হট্টগোলের মধ্যেও লিখতে পারি। আমার কয়েকটি গল্প চায়ের দোকানে প্রচণ্ড কথাবার্তা আর গ্যাঞ্জামের মধ্যে বসে লেখা, জাহাঙ্গীরনগরে বটতলার চা দোকানে বসে লিখিত। মোটেও অসুবিধা হয়নি। পত্রিকায় কাজের সুবাদে এই অভ্যাস হয়ে গেছিল। সাত বছর অনেক সময়। অফিসে অন্যরা কথা বলছে, কাজ নিয়ে এই ডেস্ক থেকে ওই ডেস্কে জোরে আলাপ হচ্ছে, আর আমি নিজের ডেস্কে বসে দিব্যি ফিচার লিখেছি। অভ্যাস হয়ে গেছে। গদ্যটা বাজারে বসেও লিখতে পারব। চলন্ত বাসে ফোনেও লিখি মাঝেমধ্যে।
চলবে