গণযুদ্ধের সর্বজনীনতা
শাহেরীন আরাফাতপ্রকাশিত : মে ০৫, ২০১৯
আজ মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রধান পথপ্রদর্শক কার্ল মার্ক্সের জন্মদিন। বিভিন্নজন তাকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন নিজেদের পোস্টে, লেখায়। তা তারা করতেই পারেন। তবে প্রশ্ন হলো, আমরা কেন এমন একজনকে স্মরণ করবো, যাকে আমরা চোখে দেখা তো দূরের কথা, যিনি আমাদের সময়ের বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রশ্নের মাঝেই লুকিয়ে থাকে উত্তর। এ প্রশ্নটাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের সময়ের মানুষ না হয়েও যিনি আমাদের সময়কালেরই শুধু নয়, আমাদের পরবর্তীকালের কথাও বলে গেছেন। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে মানবমুক্তির পথ ও শ্রেণিসংগ্রামে সর্বহারা শ্রেণির জয়গানের বাস্তবতা বাতলে গেছেন। এমন একজনের কথা ব্যাপক নিপীড়িত জনগণের একজন হিসেবেই আমরা স্মরণ করি ও করবো। যার ভিত্তি ওই শ্রেণিসংগ্রাম।
আবার মার্ক্সবাদের মহান শিক্ষক কার্ল মার্ক্সকে কে কিভাবে স্মরণ করছেন, তার মাঝেও নিহিত রয়েছে শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রশ্নটি। বুর্জোয়া, পাতি-বুর্জোয়ারা মার্ক্সকে একজন দার্শনিক হিসেবেই উপস্থাপন করে থাকে। তাকে স্মরণ করার নামে সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব বা শ্রেণিসংগ্রামের প্রশ্নটিকে বিচ্ছিন্ন করে উপস্থাপন করা হয়। মার্ক্স উপস্থাপনের এই খণ্ডিত রূপ, মার্ক্স থেকে মার্ক্সবাদের বিকাশমান তত্ত্বকে পৃথক করে দেখানোরই অপতৎপরতার অংশ।
কার্যত কার্ল মার্ক্স ও ফেদরিখ এঙ্গেলসের চিন্তার সম্মিলন যে মতাদর্শিক ভিত গড়ে তুলেছিল, তা-ই মার্ক্সবাদ, যেখানে মার্ক্স-এঙ্গেলস এক অখণ্ড সত্তা। তাই মার্ক্সের জন্মদিনে এঙ্গেলসের কথা চলে আসে অবধারিতভাবেই। যে তত্ত্ব বর্ণনা করে, মানব ইতিহাস হলো শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়েই মানবমুক্তির পথ এগিয়ে যাবে। যেখানে নেতৃত্ব দেবে সবচেয়ে অগ্রসর অংশ, সর্বহারা শ্রেণি।
মানবমুক্তির এই বিকাশমান তত্ত্ব ধারণের মধ্য দিয়েই কার্ল মার্ক্সকে সবচেয়ে গভীরভাবে আমরা স্মরণ করতে পারি। সমাজ বাস্তবতায় এই তত্ত্ব বিকশিত হয়ে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদে পরিণত হয়েছে, যা এ সময়ের মার্ক্সবাদ। যেখানে সামনে এসেছে গণযুদ্ধের সর্বজনীনতা, যার ভিত্তি অবশ্যই শ্রেণিসংগ্রাম।
উল্লেখ্য, গণযুদ্ধের সর্বজনীনতার মানে শুধু সশস্ত্র সংগ্রাম নয়, বরং সশস্ত্রতার বিষয়টিও শ্রেণির অধীন। কোন শ্রেণির পক্ষে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে, সেটিই মূল বিষয়। যখন কেউ বিপ্লবের পক্ষে, বিপ্লবী শক্তির পক্ষে, সর্বহারা শ্রেণির নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রাম করছেন, মিছিলে স্লোগান তুলছেন, কেউ গান গাইছেন, কবিতা লিখছেন, প্রবন্ধ লিখছেন, বিপ্লবকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যশ্রেণিসহ মেহনতি মানুষের অধিকারের কথা বলছেন, তাদের সংগঠিত করছেন, এসবই গণযুদ্ধের অংশ- যা মোটা দাগে গণযুদ্ধের সর্বজনীনতাকেই প্রকাশ করে।
এই বিকাশমান তত্ত্ব ধারণের মাধ্যমেই প্রকৃত অর্থে কার্ল মার্ক্সকে স্মরণ করা যেতে পারে। মহান শিক্ষক কার্ল মার্ক্স, লাল সালাম! মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ জিন্দাবাদ!