কোটা সংস্কার সংবিধান পরিপন্থী নয়

নাজিম মৃধা

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৩, ২০১৮

কোটা সংস্কার বা বাতিলের সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থী নয়। অনুচ্ছেদ ২৯, যার শিরোনামাই হচ্ছে, সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে ঢোকার আগে ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদ পাঠ প্রয়োজন। সংবিধানে ২৯ (১) অনুচ্ছেদের সারমর্ম হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের জন্য সুযোগের সমতা নীতি অবলম্বন করতে হবে। অনুচ্ছেদে ২৯ (২) এর সারমর্ম হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের জন্য ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানভেদের কারণে বৈষম্য করা যাবে না। অনুচ্ছেদ ২৯ (১) ও ২৯ (২) এর পরবর্তী অনুচ্ছেদ ২৯ (৩) এ দেশের অনগ্রসর অংশের জন্য বিশেষ বিধান করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে ক্ষমতাবান করা হয়েছে। একটি দেশের জনগণের অভিপ্রায় ও ক্ষমতায়নের ব্যবহারিক রূপই রাষ্ট্রের ক্ষমতা। সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে মূলত দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সুযোগের সমতা এবং বৈষম্য না করা নীতির বাইরে গিয়ে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাষ্ট্রকে দেয়া হয়েছে। এমন বিধান সংযোজন করার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যে আমাদের রয়েছে, তা কারো অজানা নয়। রাষ্ট্রের বিধি-বিধানের রূপরেখা একটি রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সমান্তরাল।

 

একটি রাষ্ট্রের নীতি নাগরিকের স্বার্থের অনুকূলেই হবে, এটাই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যাই হোক, সংবিধানে ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে বিশেষ বিধান করার এখতিয়ার সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের, আদালতের নয়। প্রয়োজনে রাষ্ট্র উপযুক্ত মনে করলে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তই সর্বেসর্বা, যদি না তা সংবিধান ও মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। এখানে মহামান্য আদালত সরকারি চাকরিতে কোটার হার বা কাকে কোটা দেয়া হবে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বাইরে তা নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। তাই কেউ রিট দায়ের করলে প্রতিকার পেতে পারেন না। কারণ কোটা বাতিল বা সংস্কারে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত দ্বারা কারো মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয় না। সংবিধান রাষ্ট্রকে বিশেষ বিধান করার ক্ষমতা দিয়েছে, তা অবশ্যই করতে হবে বা কিভাবে করতে হবে তা বাধ্যকর করে দেয়নি। তবে মহামান্য আদালতের সামনে এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসলে রাষ্ট্রকে আইনানুযায়ী নিষ্পত্তি বা বিধান করার নির্দেশ প্রদান করার নজির রয়েছে। সেক্ষেত্রেও বিধি-বিধান করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার রাষ্ট্রের, আদালতের নয়। বৃহত্তর জনস্বার্থে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এবং দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদের চেয়ে ২৯ (১) এবং ২৯ (২) অনুচ্ছেদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি শক্তিশালী, যেখানে সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা এবং বৈষম্য না করা নীতির কথা বলা হয়েছে। আমি কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের পক্ষে।

লেখক: আইনজীবী