কৃষি বিল ২০২০, কিছু তথ্য ও ভারতীয় রাজনীতির স্বরূপ

পর্ব-১

শঙ্খচিল

প্রকাশিত : নভেম্বর ০২, ২০২০

সদ্য মোদী সরকারের পেশ করা তিনটি কৃষি বিল লোকসভায় পাশ হয়েছে। এই তিনটি বিল হল-

১) ফারমার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) বিল ২০২০ (কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন।)

২) এসেনশিয়াল কমোডিটিজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২০ (অত্যাবশ্যক পণ্য আইন।)

৩) ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাসিওরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল, ২০২০ (কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ণ চুক্তি`।)

বিল তিনটি লোকসভায় পেশ হলেও, রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে `কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন` ও `কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ণ চুক্তি` বিল দুটি পাশ হয়েছে। সংসদের ভিতরে ও বাইরে দেশ জোড়া প্রতিবাদের মধ্যে বিলগুলি পাশ হয়।

 

এই বিলগুলির পক্ষে সরকারি দাবি কি?

সরকারের দাবি সরকার নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে কৃষকদের মুক্ত করে কৃষি বাণিজ্যের উদারিকরণের পথে প্রান্তিক চাষিদের ফসলের দরদাম করার সুবিধা ছাড়াও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কৃষি ও ২০২২ সালে প্রতিটি কৃষকের আয় দ্বিগুণ করা।

 

এখন প্রশ্ন হলো বহুল চর্চিত উদারিকরণের কি ফল হয়েছে দুনিয়া সহ আমাদের জনগণের? গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো এরপর কৃষির উদারিকরণের ফল কি হতে পারে? সরকারি বাজার থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের হতগরীব কৃষকরা কোন বাজারে গিয়ে পরবে? টিকে থাকার তীব্র প্রতিযোগিতায় ক্ষমতাহীন আমাদের প্রান্তিক কৃষকদের সেই বাজারে দরদাম করার সাধ্য বা সুযোগ আছে তো?

সম্ভাবনা ও বাস্তব চিত্র

 

কৃষকদের নির্মম পরিণতি... কৃষিজীবী মানুষের হাজারো বছরের আত্মত্যাগী শ্রমদান ও অভিজ্ঞতা, প্রায় সহযোগী জলবায়ু, নদীমাতৃক উর্বর মাটির উজার আশির্বাদ সহ সীমাহীন প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতার সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গণ-প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবহারে যে দেশ হতে পারত সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা, সে দেশের বাস্তব ছবিটা কি?

 

আমাদের দেশে এখনো প্রায় ৭০% জনগণ কৃষিকে অক্ষ করে বেঁচে আছে। প্রায় ১৩০ কোটি জনগণের এই বিপুল পরিমাণ মানুষের অসহায় কৃষি নির্ভরশীলতার সুযোগ নিচ্ছে সমাজে গেঁড়ে বসে থাকা অপশক্তি মাতব্বরেরা। ফলত প্রতি ৪৬ মিনিটে একজন কৃষক আত্মহত্যা করেন। যদিও ২০১৬ সাল থেকে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য আটকে বহু ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার মতো কৃষকদেরও আত্মহত্যার খবর বন্ধ করে দিতে চেয়েছে।

 

তথাপি জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্টে স্পষ্ট যে খোদ মোদির আমলে প্রথম বছর ৫%, দ্বিতীয় বছর ২% কৃষক আত্মহত্যা বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি বেহাল হওয়ার আগেই ২০১৯ সালে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (NCRB)-র পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট আত্মহত্যাকারীর ৭.৪ শতাংশই দেশের কৃষকরা। কৃষি ক্ষেত্রে মোট আত্মঘাতীর মধ্যে চাষির সংখ্যা ৫৯৫৭ জন। যার মধ্যে ৫৫৬৩ পুরুষ ও ৩৯৪ জন নারী কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। অপরদিকে, খেতমজুরদের মধ্যে ৩,৭৪৯ জন পুরুষ ও ৫৭৫ জন নারী খেতমজুর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও ভারতে কৃষিক্ষেত্রে নারীদের কৃষক হিসেবে ধরাই হয়না। দিনমজুদের আত্মহত্যা ৮ শতাংশ বেড়ে দেশের ৪২,৪৮০ জন কৃষক ও দিনমজুর আত্মহত্যা করেছে। যার মধ্যে ২০১৮ সালের ৩০,১৩২ জনের তুলনায় ২০১৯-এর ৩২,৫৫৯ জন দিনমজুরের আত্মহত্যার সংখ্যাটা উর্দ্ধমুখি।