নাসিম শাফায়ি
কাশ্মিরী কবি নাসিম শাফায়ির দুটি কবিতা
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
নাসিম শাফায়ির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তিনি কোশার (কাশ্মিরী) ভাষী কবি, স্নাতক পর্যায়ে কোশার ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক এবং প্রথম কাশ্মিরী নারী সাহিত্যিক, যিনি ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ পেয়েছেন ২০১১ সালে। এ যাবত দুটি কাব্য প্রকাশিত হয়েছে: উন্মুক্ত জানালা (১৯৯৯) এবং না-ছায়া না-প্রতিফলন (২০০৯)। শাফায়ির কবিতা উর্দু, কন্নর, তামিল, মারাঠি ও তেলেগু ভাষা ছাড়াও বহির্বিশ্বে ইংরেজি, জার্মান, ইতালিয়ান ও কোরিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার জন্ম ও বসবাস কাশ্মিরের শ্রীনগরে। ‘বাগান’ ও ‘এক নগরের শ্রী’ কবিতা দুটি কোশার থেকে ইংরেজি করেছেন নিয়তি ভাট। ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন রহমান হেনরী।
বাগান
গোলাপকে প্রশ্ন করলাম, কোথায় তোমার সুবাস?
বললো, শরৎ কেড়ে নিয়েছে।
বসন্ত ঋতুকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কপালে দাগ কেন?
বললো, কেননা, আমার জখমগুলোতে নুন জমেছে।
অতএব, একদা ফুলেভরা বাগান ছেড়ে এলাম
আর তখন থেকেই,
এলোমেলো হাঁটছি, গন্তব্যহীন।
এক নগরের শ্রী
ঝিলাম নদীতীরে যারা বাস করতো, তারা এখন বেআব্রু,
নিমজ্জমান আজ আপন লজ্জার অতলে।
এরাই তারা, যারা শাহতুশ আর পশমিনায় জড়িয়ে রাখতো নিজেদের
আর প্রতিদিনই পরিধান করতো আজানু রেশমি জরিন।
সেই অহমবোধের সূক্ষ্ম সুতা
খসে পড়ছে ধীরে ধীরে।
আকাশমণ্ডলও, একটু একটু করে, আগল-আলগা হয়ে পড়ছে।
রাজা নমরুদও পালিয়ে যেতেন
দর্শনীয়ের এই হতশ্রী দেখে।
গোটা নগরটাকে মুছে ফেলতে
এক মুহূর্ত লাগলো, মাত্র এক মুহূর্ত।
যারা বাস করতো ঝিলামতীরে, তারা এখন নিবস্ত্র,
স্তম্ভিত হয়ে পড়লো।
একটাও স্তম্ভ নাই, নাই মাটির কোনও ধারক পাঁচিল,
জানালার ফাঁকফোকরে কেউ বাড়িয়ে ধরলো না উদ্ধারের হাত,
তাদের তৃষ্ণা নিবারণে দুয়ারে দাঁড়ালো না কেউ।
বন্যার প্লাবনজল তলিয়ে দিলো ওদের মাথাগুলোকে,
পুরো নগর একটা নদী হয়ে উঠলো—
কূল পাওয়া মুশকিল।
শূন্য হাত ফাঁকা পকেট ওরা,
পারের পাটনিকে দেবার
কানাকড়িও নাই।
পরস্পরকে সান্ত্বনা দিতে কোনও বিড়বিড় আওয়াজও নেই।
ঝিলামতীরে যারা বাস করতো তারা এখন নিরাভরণ,
গতকাল অব্দি যারা যাপন করতো সমৃদ্ধ জীবন।
ঝিলামতীরে যারা বাস করতো, তারা এখন সর্বস্বান্ত,
গতকালও যারা বাস করতো প্রাসাদে প্রাসাদে।