কার্যকারণ খুঁজতে হবে

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : মার্চ ৩০, ২০১৯

কড়াইল বস্তির আগুনে নিজেদের ঘর পুড়ে যেতে দেখা স্কুল পড়ুয়া কিশোর ছেলেটি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিজের শ্রেণীরই পরিচয় দিয়েছে। অনেকেই তার ছবি দেখে আনন্দিত। আমরাও তাই, আশাজনক ঘটনা। কিন্তু আমরা কি তার শ্রেণী আর তার শ্রেণীসংগ্রামের প্রতি রাজনৈতিক সম্মান দেখায়?- এই প্রশ্ন নিজেই নিজেকে করতে হবে বারবার।

 

কই সেখানে তো মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তদের সন্তানদের এভাবে দেখা যায় না। কারণ শ্রেণী চরিত্রই এখানে মূখ্য.... অনেকে বলবে "শিশুদের নিয়ে রাজনৈতিক নাটক করা উচিত না!"- ঘটনার কার্যকারণ দেখতে না পাওয়ার চোখই আমাদের অন্ধ করেছে....

 

নানা তরিকায় মার্ক্সের দর্শনকে ভুয়া বলে উড়িয়ে না দিয়ে আরেকবার ভাবা উচিত। শ্রেণী বৈষম্য আর শ্রেণীসংগ্রাম যে একটা বাস্তব বস্তু সেইটা আগে বোঝা উচিত। এই শিশু সম্পর্কে পত্রিকা জানাচ্ছে-

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নি নির্বাপণের কাজে ব্যবহৃত একটি পাইপের ফাটা অংশ দুহাতে চেপে ধরে থাকা একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নাঈম ইসলাম নামের ছেলেটি রীতিমতো বীর বনে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাঈম ইসলাম নামের কিশোর ছেলেটি রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। ডাব বিক্রেতা বাবা ও কর্মজীবী মায়ের এই ছেলেটি ব্র্যাকের আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। নাঈম জানায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আগে মা নাজমা বেগম টিভি ছাড়তে বলেন তাকে। পরে টিভিতে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার খবর দেখে মায়ের অনুমতি নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।

 

তারপর সেখানে পানির পাইপ ফাটা দেখে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখে। কেন পাইপ চেপে ধরেছিলে- জানতে চাইলে নাঈম বলে, মানুষ বাঁচাতে পাইপ চেপে ধরেছিলাম। পাইপ ফাটা থাকলে তো পানি সব অন্য দিকে পড়ে যায়। কথা প্রসঙ্গে নাঈম জানায়, এর আগেও গুলশানে এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং উদ্ধারকাজে সে অংশ নিয়েছিল। আগুন থেকে মানুষ বাঁচাতে ছুটে আসা ছোট্ট নাঈমের নিজেরই রয়েছে কড়াইল বস্তিতে চোখের সামনে নিজেদের ঘর পুড়ে যেতে দেখার দুঃসহ স্মৃতি। এফআর টাওয়ারের আগুন দেখে হয়তো তার সেই স্মৃতি কথায় মনে পড়ে গিয়েছিল। তাইতো নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে চেপে ধরেছিল ফাটা পাইপটি।

 

নাঈম জানায়, ভালোভাবে পড়াশোনা করে বড় হয়ে সরকারি চাকরি করতে চায়। নিজের সংসারের হাল ধরতে চায় নাঈম। প্রতিটি শিশুর জন্যই ভাবতে হবে....