কামরুজ্জামান কামুর ৭ কবিতা

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪

অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কামরুজ্জামান কামুর কবিতার বই এখানে শিয়ালমুখী ফুল হয়ে ফুটে আছো। প্রকাশনা সংস্থা বৈতরণী নিয়ে এসেছে বইটি। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় কালী মন্দির গেট সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৈতরণীর স্টলে ৬২১। এখানে শিয়ালমুখী ফুল হয়ে ফুটে আছো থেকে সাতটি কবিতা

এখানে

এখানে আসার ছিল, এসেছি—
যাওয়া লাগে বলে মোরা যাই—

এখানে গগনজোড়া পাখি ছিল

আহা!

এখানে দিগন্ত ছিল বলে
আকাশ ছোঁয়ার তরে কিশোরের
হৃদয়ের ছুটে চলা ছিল—

এখানে তো রক্ত ছিল, ছোরা ছিল
ভাবাবেগ, বুভুক্ষুর কান্না ছিল
চিতার চিৎকার ছিল, কিন্তু—

ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে
লিপস্টিকও ছিল
ডান হাতের সম্পর্ক ছিল বাঁ-হাতের সঙ্গে
ছিল ছিল ছিল শুধু
ছিল তো সকলই, তবু

অশেষ নদীর এই তীরে কেন হায়
মুছে যাওয়া মানুষেরা গান গেয়ে যায়

আহা! ভব যা সংসারও তাই—
নিত্য পারাপার

তুমি কাঁদো আমি কাঁদি
কাঁদে রে নিগার

ঢলাঢলি

ছিল রামধনে সূর্যাস্ত, ঝিঁঝি—
পোকারা সকলে মিলে
সমস্বরে উঠিয়াছে ডাকি—

আকাশের তারাপুঞ্জ যেন
একেকটি খচিত হয়ে থাকা
সাদা ফুল প্রকৃতিতে। সিঁটি দিয়ে
উড়ে যাওয়া পাখিটির মতো
এখনই তোমার কথা
মনে পড়ল। নিমের পাতার

ফাঁক দিয়ে রোদ এসে
স্যাঁতসেঁতে ঘরের দেওয়ালে
করে ঢলাঢলি—

হাতির ঝিলের পাড়ে

হাতির ঝিলের পাড়ে বসে আছি বিকালে;

গুলশান অভিমুখী ইঞ্জিরে বোট
গণবোঝাই, লাল রং বোটগুলি ওই
এফডিসির ঘাট থেকে মহাকালে ঢেউ তুলে
চলে যাচ্ছে;

যৌবনের উচ্ছ্বাসের অনুরণনের মতো
যেন কোনো গান হয়ে বাজিতেছো;

ওগো ঢেউ, পাড়ে এসে আছড়ে-পড়া
ডুকরে ওঠা ঢেউ, মানুষের হৃদয়ের মতো
তুমি কেন বিরহ-কাতর?

তুমি কেন অবিরাম বোবা-ধরা কান্না হয়ে
বেজে উঠে ভেঙে পড়ো
হাতির ঝিলের এই পাড়ে
প্রতিদিন?

ধৈর্যহীন বালকের প্রায়?

বিলাপ

জ্বরের ঘোরের বিলাপের মতো
হৃদয়ের কথা বলি মনে মনে
বাতাস বহিছে ব্যাকুল বিষাদে
যদি আসো তুমি সন্তর্পণে

যদি হে আমার চূড়ায় বসিয়া
তব অবসাদে সিক্ত করিয়া
গাহো কোনো গান রাতের বক্ষ
উঠিবে যেন গো তারায় ভরিয়া

সামান্য লতার পানে

আজি একা বসে কফি খাই
বিকালে। কে যেন কবে দিনক্ষণ মনে নাই
কিন্তু এক এরকমই তিতা ছিল
ছিল এক আরও কালো সুগভীর;

সে-গভীরে বসে এই বিকালের
আলোয় বিমলতম সামান্য লতার
পানে চেয়ে কফি খাই—

এত তিতা কেন, প্রিয়?

তো সেই ধান

ধান যখন পাকে
মনে হয় দিগন্ত পর্যন্ত সব ধান নয়
কে যেন আঁচল থেকে কত সোনা ছিটায়ে দিয়েছে

তো সেই— সেই সোনালি দুপুরে আমি
এয়ারগানের শব্দে উড়ে যাওয়া
চকিত ঘুঘুর কথা ভাবিতেছি

‘ভাবিতেছি’ শব্দটা লিখতে গিয়া
আমার জীবনানন্দের কথা মনে পড়ে

মনে পড়ে শীত নয়, বর্ষা নয়
কেন হেমন্ত কালেই কবি
জ্যোৎস্নারাতে ইঁদুরের
জীবিকায় বিস্মিত হলেন!