কাজী বর্ণাঢ্য

কাজী বর্ণাঢ্য

কাজী বর্ণাঢ্যর চারটি কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ০২, ২০২০

ডাস্টবিন

সম্মানিত সুধি,
অনুগ্রহপূর্বক কিছু সময়ের জন্য দাঁড়ান
আপনার যত নষ্ট চিন্তার ভ্রুণ এইখানে রাখুন
রঙ-বেরঙের ভাওতাবাজি যত কারসাজি সব
বমি করে এইখানে ঢালুন।

আপনার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে
একদল স্বপ্নচাষা-সূর্যকিশোর
আমাকে জীবাণুমুক্ত করে
রেখে গেছে এইখানে
এই চৌরাস্তার মোড়ে।

আমাকে ব্যবহার করুন।

জন্মসত্য

বের হতে হতে ভিতর ভুলে গেছি
ভিতরে রন্ধনশালা
মা রান্না করছেন জন্মসত্য।
বাইরে হাঁটতে হাঁটতে ভুলে গেছি
পায়ের নিচে শৈশবমাটি।

নদীর ধারায় মা রান্না করছেন ভুবনযন্ত্রনা
পেঁয়াজ বাটা আর ধোঁয়া তাড়ানোর ভান করে
চোখের স্নেহে নিভাচ্ছেন চুলো।
মা জানেন না
আগুন কখনো নেভে না
আগুনের দৃশ্য নিভে যায়।

আর্তনাদ

কে থামাবে এত মানুষের আর্তনাদ
প্রেম!
প্রেম, কোথায় তুমি বেড়াতে গিয়েছো
নগরে আগুনের মিছিল ফুসে উঠেছে!

তোমাকে আজ কোথাও যেতে দেব না

তোমার হাস্যোজ্বল চোখে কেন কান্নার চিহ্ন!
প্রাণবন্ত চঞ্চলতা কেন থমকে গেল হঠাৎ!
নীরব প্রেমময় নিঃশ্বাসে কেন তপ্ত বিরহের স্রোত!
তোমাকে আজ কোথাও যেতে দেব না
বুকে জড়িয়ে কাটিয়ে দেব অনন্তকাল।

নিজেকে একা কেন ভাবছো!
আমি তো আছি।
যত দূরেই থাকি না কেন
ছায়া হয়ে স্নেহ ঢালবো নিবিড় যতনে।

আমি জানি, পৃথিবীতে নেমে এসেছে করোনা রাক্ষস
কোনো সামাজিকতা ছাড়াই বিদায় নিচ্ছে
লাখ লাখ প্রাণ।
তবুও—
তবুও যেতে দেব না তোমায়
লড়াই করবো জ্ঞান-বিজ্ঞানের যাবতীয় অস্ত্র
আর পবিত্র ভালোবাসার শক্তি দিয়ে।

টোলপরা গালে হেসে ওঠো সোনা
আমরা পাহাড়ে যাব মুছে দেব পাহাড়ির দুঃখঘাম
সৈকতে যাব
তুমি হাসবে বাতাসে উড়িয়ে চুল
তোমার হাসির কাছে হেরে যাবে সমুদ্রের ঢেউ
হাওরে যাব তুমি উড়বে শান্ত আদিগন্ত বকের ঝাঁকে
যাব অচেনা কোনো গাঁয়ের পথে
মিশে যাব সবুজে শৈশবে।

আমি জানি, করোনা কেবল মৃত্যুই উপহার দেয়নি
ভেঙে দিয়েছে অগণিত মন
মানুষকে উপহার দিয়েছে ক্ষুধা
মুছে দিয়েছে স্বপ্নের যত ছবি।
ঝড়ের কবলে পড়া বৃক্ষের মতো
মানুষ ভেঙে যাচ্ছে মাঝখান দিয়ে
এমন ভয়ানক রাক্ষস পৃথিবীতে আর আসেনি।

এ রাক্ষস মানুষ থেকে মানুষকে সরিয়ে দিয়েছে দূরে
তোমাকে দূরে যেতে দেব না
আমার বুকের পাটাতনে মাথা রেখে
তুমি আমৃত্যু হাসবে
প্রাণ খুলে ভালোবাসবো তুমিও বাসবে
তোমাকে আজ কোথাও যেতে দেব না।