কাজী নাসির মামুনের কবিতা ‘শবে বরাত’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪

শবে বরাতের এই রাতে
মনপোড়া সময়কে নিজের ভিতরে নিয়ে
মানুষ কাঁদছে। ভালোবাসা
ঊর্ধ্বমুখী একটা নিশ্চল পাখি, যাকে
সচল করতে কান্নাভরা
হৃদয় রক্তাক্ত বিচ্ছেদের উপমায়
সজাগ রাখতে হবে। রাতভর উন্নাসিক
        জীবনের দায়ভার
চাপিয়ে রাখতে হবে নিজের ওপর;
পীড়ন একটা স্তম্ভ। তার নিচে গ্লানির অধ্যায়।
পাপতীর্থে বহুবর্ণ ধূম্রল জীবন
খুলে খুলে পড়বে সবাই।
দেখবে, আকীর্ণ এক মধুনাম
        `আল্লাহ` `আল্লাহ` বলে কতবার
জপতে চেয়েছি, পারি নাই।
পৃথিবীর বহুতল বিলাস-নির্ঝর
কানের কুহরে বসে দুর্বার সঙ্গীতে
যে-ফসল শুনিয়েছে, তাকে
ভেবেছি মৌলিক; ধান শালিকের অপূর্ব পল্লব
আজান ধ্বনিত হলে নুয়ে পড়ে, আমরা দেখিনি।
আজান একটা তর্কাতীত নম্র প্রবেশের পথ।
যেখানে ঘুমিয়ে আছে বঞ্চিত আত্মার
রাহবার, ক্ষুব্ধ মানবতা, অন্ধ পথিক, দলিত
মায়ের বিবর্ণ ছায়াঘোর, বোন, যার
গলিত শরীরে নির্মমতা, মহাতাপে
        শূন্যে
        কেঁপে কেঁপে আরশ ঘনায়।
বিষণ্ণ মিনার শীর্ষ বাতায়নে
        নমিত আয়াত হয়ে কতবার
এইসব সঙ্কট-মাধুর্যে ভুলে থাকা
জীবনের দিকে বেদনায় ঝরে
পড়েছে; আমরা বিমুখতা
        সুহৃদ সঞ্চয়ে রেখে ওদিকে যাইনি।

আজ স্পর্শ নাই; সমাবেশ
সেজদার বিকল্প নীতির
        ঘরে ঘরে একা একা একজন।
মসজিদ
        এক মর্মরিত অভিমান।
দুয়ার আঁটছে: ফিরে যাও! ফিরে যাও!
এই মহিমান্বিত রাতের
জঠরে বিদীর্ণ হৃদয়ের গান
        তবু
        গাইছে ডাহুক।
প্লাবন-প্রার্থনা জুড়ে সেই মহাস্রোত;
ধন্য অনুতাপে ঘরে ঘরে
অঝোর ঝরছে: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

যেন শবে বরাত একটা ইরেজার
গহীন মর্মের দিকে একদিন
        সব আঁকিবুকি মুছে দিয়ে যায়।