কাজী জহিরুল ইসলাম
কাজী জহিরুল ইসলামের ৫ কবিতা
প্রকাশিত : মে ১৯, ২০২৪
বুকের বোতাম
বুকের বোতাম দিলাম খুলে, আয়
পড়িস যদি ঝুঁকির সমস্যায়,
এইখানে খুব নিরাপদ এক ঘর,
রুখে দেবে অশুভ সব ঝড়।
দেখ চেয়ে তুই বোতাম খোলা সব,
বুকের ঘরে মিলনের উৎসব।
বাতাস তোকে উড়িয়ে নেয় যদি
গাছ আছে এক আজন্ম দরদি।
ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ার ভয়?
রাস্তা এখন ফাঁকা নিঃসংশয়।
বসতে দেব ভালোবাসার পিঁড়ি,
দুয়ার খুলে হাসছে ঘরের সিঁড়ি।
এখানে নেই শুক্র, রবি-সোম
সারাক্ষণই ভালোবাসার ওম।
এখনও তোর পা বাড়াতে দ্বিধা?
নেই বুঝি তোর ভালোবাসার খিদা!
রাবেয়ারা উড়তে শিখেছে
কানে কানে মাকে বলেছে রাবেয়া,
উড়বো আকাশে, পাখি হয়ে যাব ওই দূর নীলে,
বাবা রেগে বলে, ডানা কেটে তোকে খাঁচায় পুরবো,
কী সাহস দেখো, পুরুষের মাথা পদতলে রেখে,
মেয়ে নাকি দেবে আকাশে উড়াল!
বাবা তো বোঝেনি জেদি এই মেয়ে, উড়ে যাবে ঠিক;
একদিন মেয়ে রঘুনাথপুর লাফিয়ে পেরোয়,
পা রাখে দূরের বড় স্কুলঘরে,
এরপরে ছুটে যায় সে অনেক দূর...
কলেজের পরে সেরা ভার্সিটি,
লাফিয়ে লাফিয়ে পার হয়ে মেয়ে
বসে গিয়ে একা বিমানের ককপিটে;
রাবেয়া এখন উড়ন্ত পাখি...
পায়ের তলায় পাথুরে পাহাড় দম্ভের আহাজারি...
মাথার ওপরে অনেক উঁচুতে, রক্তাভ গ্রহে উড়ে যাবে বলে,
ঘোষণা দিয়েছে কে প্রথম বলো,
পৃথিবীর কোনো যুবক পুরুষ?
না, না, সেও নারী, তন্বী তরুণী, সাহসী এলিসা,
কার্সন যাবে মঙ্গলে উড়ে, না ফেরার লাল গ্রহে।
এদেশের মেয়ে রাবেয়ারা যদি না জাগে এমন
দ্রোহে,
না যদি তীব্র প্রতিবাদে হয় স্বপ্নপুরণে ক্ষেপা
এলিসার পথে তাহলে রাখবে কে পা?
বুকের শোকেসে
বক্ষ আমার ভরা শূন্যতা দিয়ে,
একদিন এই শূন্যেই আমি নীরবে যাব মিলিয়ে;
সকলে যখন বিত্ত কুড়ায়, খ্যাতি, যশ, সম্মানও
কাউকে বলিনি আমার জন্যে কুড়িয়ে কিছুটা আনো,
বরং গভীর অভিনিবেশেই কুড়িয়েছি ভালোবাসা
বুকের মাটিতে ভালোবাসা বুনে
হয়েছি প্রেমের চাষা।
বক্ষ-শোকেসে সারি সারি প্রেম রাখা,
ভাঁজ খুলে দেখো কত ফরহাদ, জুলেখার ছবি আঁকা।
ওখানে রাখিনি হীরে-মতি-সোনা কোনো,
বিত্তের সাথে রাখিনি গোপন স্বপ্নের বন্ধনও।
বসন্তের শুরু
নীল-বেগুনি ক্রকাশ ফুল, গুচ্ছ কিছু শাদা
স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে গৃহের বাড়ালো মর্যাদা।
মেঘের নিচে ছায়া-মায়ার আদুরে মার্চ হাসে
বিহঙ্গেরা এ-মাসটিকে ভীষণ ভালোবাসে।
ঘাসের মাঠে কালো ডানার অচেনা ঝাঁক নামে
ঋতুর লেখা কৃষ্ণ চিঠি গাঢ় সবুজ খামে।
দুলছে চেরি, ওক বৃক্ষ, বসন্ত বাতাসে
কাঠবেড়ালি ডাল-কাণ্ডে ক্ষিপ্ত সন্ত্রাসে।
পূর্ণীলারা শিষ বাজালে ম্যাগনোলিয়া ফোটে
সোনালি ফিঞ্চ খুঁটছে আলো হলুদ মাখা ঠোঁটে।
রোদের মাঠে
রোদের মাঠে ঘাসের গালিচায়
সটান শুয়ে থাকতে মন চায়
রোদের রেণু দেহের কোষে কোষে
বেঁচে থাকার নতুন প্রাণ পোষে
নতুন দেহে ঢুকে নির্বিবাদে
সবুজ ঘাস খাদ্যকণা সাধে।
প্রেইরি থেকে বাতাস ছুটে আসে
বুকে লুটায় দারুণ উচ্ছ্বাসে।
চিরহরিৎ ঝাউ-বৃক্ষ সারি
খুশিতে তার দোলায় ঘন দাড়ি।
ডানার মালা গুচ্ছ কালো পাখি
ঘাসের মাঠে পরায় ঋতু-রাখি।
দুরন্ত ওই শুভ্র মেঘ চেনো?
সদ্যজাত গাভী-শাবক যেন।
চড়ে স্বাধীন নীলাভ-ঘাস মাঠে
আলো-ছায়ার পথিক বিভ্রাটে।
সটান শুয়ে রোদের মাঠে একা
স্বপ্ন আঁকি, আঁকি জীবন-রেখা।