কাওসার মাহমুদ

কাওসার মাহমুদ

কাউসার মাহমুদের কবিতা ‘দুরুদ’

প্রকাশিত : মে ১৮, ২০২১

হে আমার প্রিয়তম
বন্ধু মুমিনের
হৃদয়ে বইছে—
ঝড়
তোমারও সাক্ষাৎ
পরমের।

আমি কী উন্মাদ!
বিগত কতকাল
ভাবছি তোমারে
ডাকছি কী নিনাদ

সুতোতে গাঁথা ওই
ঐশী যে বাণী—
আমারও ভাষা আছে
কুসুম ও মঞ্জরি।

তোমাকে ডাকি গো
বিবিধ ভাবনায়
দৃষ্টি হেঁটে যায়
নিশুতি প্রহরায়
 
প্রহরও শেষ হলো
ফুলেরা নির্বাক
কলিরা ফুটে এলো
নামাজে ইশরাক

তোমাকে দেখার এই
নিত্য আরাধনা
জাগে কী নিশিদিন
কোমল এ বেদনা

তোমারই জিয়ারতে
এসেছি হে রাসূল
দ্যাখো না অধমেরে!
ডাকছে কী আকুল।

তুমি কী অশ্রুর
দীর্ঘ মোনাজাত
বিনীত আরজিতে
অঝোর এ প্রভাত

তোমাকে ডাকি গো
মিনতি মর্সিয়ায়
রাত্রি কেটে গেছে
এমনই বেদনায়

আজকে দেখা দাও
ক্লান্ত পাখিটিরে
সারা দাও মোনাজাতে
আমারে দয়া করে

চোখেতে কতদূর
মিনারে বীতশোক
সুস্থির ধীরপায়ে
কাছে এ পরলোক

তুমি তো মহারাজ
মনিবও হে রাসূল
অন্ত মোনাজাতে
ডাকছি গো ব্যাকুল

তুমি কি শুনছো
পাগলের এই ডাক
তোমাকে ডাকছি
পুরনো সে নিনাদ

আমাকে টেনে লও
তোমারও অন্তরে
ক্ষমাটি ঝুলে আছে
নির্মেঘ প্রান্তরে।

ওই তো ডাকছে
পাখি ও ভ্রমরী
তোমাকে জপে যায়
মুগ্ধ করবী।

আমি তো সেখানেই
কাঁদছি সেজদায়
আখিরাত ভেবে মোর
ভীত এ দেহ লয়।

কী ভীষণ ভয়াবহ
হাশরে সারাদিন
অশ্রু বিগলিত
আরশের ও জমিন

আহা কী সেইদিন
ভীতরব মানুষের
নিমীলিত চোখ ওই
তোমারও বারিশের

তোমারই চোখে জল
দীর্ঘ সেজদায়
ডাকবে প্রভুরে; ক্লান্ত
নবিদের আখেরে

আমি কী ক্ষমা পাব
ভীত সে দুর্দিনে
আহত পাখিটিরে
তুলে নেবে—
জামাটির আস্তিনে

উড়ছে কবুতর
নীল গম্বুজে সাদামেঘ
এখানে পাশ থেকে
দুরুদ ও সালামে
জাগছে এ  আবেগ

কাঁপছে আলোটি
টুপ শিশিরের
চারদিক সমাহিত
শান্তি প্রভাতের

গম্ভীর পাহাড়ে
বাজছে ভায়োলিন
ইমামের কণ্ঠে
ফজরে সূরা ত্বীন

আহা কী আয়াতে
ভিজছে পুরো বুক
কোথাও রুকুতে
আয়োজিত ধুকপুক

এই ব্যথা গোলামের
ফুলেল কার্পাসে
সমস্ত চুরমার
সেজদার বিন্যাসে

তসবিহর গুটিতে
স্বচ্ছ হীমজল
এ কোথা পুড়ছি
হৃদয়ে কোন অনল!

আমারও মন বলে
এই লও সালামের
আনত চোখজুড়ে
বিরহ আরামের

তোমাকে দেখি গো
এ চোখে হে রাসূল
রওজা ভিজে যায়;
আমারও চোখে ফুল

সবুজে ছায়াপাটি
সন্ধ্যা কাঁপছে
তীর্থে পাখিরা
ডানা মেলে হাসছে

ওই তো গম্বুজ
মিনারও আজানের
সমস্ত বিধূনন
সাহাবি বেলালের

আমি তো ভাবছি
পরাজিত মুসাফির
গভীর পরলোকে
বে`খুদি কি আঁখির

পাকা ঘুম রোদটিতে
উড়ছে ধূলিমেঘ
চেতন ও মূর্ছায়
ছুটছে ভাবাবেগ

ছায়াতে নতজানু
বিহঙ্গ সে কুলীন
আধা শোক বিত্রস্ত
জমাট ও বায়ুবেগ
চিবুকে খুনসুটি
খুশিতে  যে মুমিন

করুণা বর্ষায়
তিরতির মৃদুঠোঁট
আসরে নামছে
বিনম্র ছায়ালোক

জমছে মধুবনে
আনত যে পলক
বিষণ্ণ আয়ুতে
হাঁটছে কত লোক

তুমি কি মায়া তিল
নীরদ ঝুমকায়
ফুটছে জবাফুল
বহুদূর পাতাটায়

হামদে নিহারিল
তামাম কায়েনাত
পারস্য ইরানে
থমকে ওই আঘাত

কোথা কোন পাহাড়ে
এখনো বাজে তান
নিরন্দ্র ছায়াঘেরা
নিরিবিলি কি আজান

সমস্ত বর্ণিল
চমকানো মায়াবিল
এখনও চারপাশে
জেগে ওঠে
সূরা ফিল

ঘনঘোর আন্ধারে
কুঁজো পথ বিরামে
বিনীত আরজিতে
পড়ে আছি হারেমে

সাফা কি মারওয়াতে
দৌড়ি যাতনায়
স্মরণে, শান্তিতে;  
তোমারও মদিনায়

সান্ধ্য দরুদে
আঙুলে কাঁপে কর
বলছি সালামে;
সালাতে ভরা ঘর।

এত কি প্রেম দিলে
কোথা হে তুমি গো
গুনাহরও বাগডোরে
 কাঁপছে দেহ মোর।