করোনাকে নয়, ভয় পাওয়া উচিত বিশ্ব ব্যবস্থাকে
পর্ব ১
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : জুন ১৮, ২০২০
লেখাটা পাঠ করলে হয়তো আপনার মনের সাহস বাড়তে পারে। নানারকম প্রশ্নও মনে উদয় হতে পারে। কিন্তু লেখাটা আপনা মনে ভয় উৎপাদন করবে না। করোনা ভাইরাসকে আমাদের আদৌ ভয় পাওয়ার খুব বেশি কিছু ছিল কি? হয়তো শুরুতে আমরা আতঙ্কে হিসাননিকাশ করে দেখিনি ভয়টা আসলে কেন পেয়েছিলাম। বরং সবরকম হিসাব-নিকাশ অভিজ্ঞতা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবস্থা দেখার পর মনে হচ্ছে, আসলে করোনাকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। যা ভয় পাওয়ার সেটা আসলে বিশ্ব ব্যবস্থাকে, হয়তো বা বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে। কিন্তু ভয় পেয়েছি আমরা করোনাকেই। কারণ বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভয়টা সুকৌশলে আমাদের মনে তৈরি করে দিয়েছে। বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আমাদের গৃহবন্দি করেছে। ঠিকমতো বুঝেশুনে সঠিক অঙ্কটা মেলাতে পারিনি বলেই করোনাকে আমরা ভয় পেয়েছি। করোনা ভাইরাসের আগে মহামারি আকারে আরো নানারকম ভাইরাসের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান শতকে তার মধ্যে আছে সার্স, মার্স, ইবোলা ইত্যাদি। বর্তমান ভাইরাসকে বলা হয় নভেল করোনা ভাইরাস। মানে অভিনব করোনা ভাইরাস বা অদ্ভুত করোনা ভাইরাস। কিন্তু কতটা অভিনব বা সত্যিই তা কিনা, সেটা বিচার বিবেচনা করে দেখা যাক।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশ্ব জ্ঞানবিজ্ঞান ও ধন সম্পদে বহু অগ্রগতি লাভ করলেও, ভাইরাস রোগের চিকিৎসায় সেভাবে অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। কথিত বিভিন্ন ভাইরাসের রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসাবিজ্ঞান ‘স্পেনিশ ফ্ল’র সময় যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, বর্তমানে বলতে গেলে প্রায় সেখানে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বহুক্ষেত্রে বিশ-একুশ শতক নানারকম বিস্ময়কর অবদান রাখলেও, ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নতুন কোনো অবদান লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বলা যায়, ভাইরাস রোগ প্রতিরোধে উনিশ শতকের শেষপাদে যতটুকু সাফল্য অর্জিত হয়েছিল তার উপর ভিত্তি করেই বর্তমান বিশ্ব চলছে। সার্স, মার্স সব ক্ষেত্রেই এটা প্রমাণিত হয়েছে। সার্স যুদ্ধে লড়াই করেছেন এমন একজন ব্যক্তি ব্রেইন ডোবারস্ট্রাইন বলেন, সত্যি বলতে একুশ শতক সার্স ভাইরাস প্রতিরোধে কম ভূমিকা রেখেছে, সার্স নিয়ন্ত্রণে উনিশ শতকের চিন্তা-ভাবনা বা প্রযুক্তি যথেষ্ট মূল্যবান হয়ে উঠেছিল। কিছুতেই এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, উনিশ শতকের আবিষ্কার দিয়েই আমরা একুশ শতকে লড়ছি। বিভিন্ন বড় বড় অষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলি ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী নয়, কথাটা বহুজনই বলেছেন। কবে ভাইরাসের আক্রমণ হবে তার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলি টাকা ঢালতে চায় না, কারণ মুনাফা তাদের কাছে প্রধান কথা। স্বল্পকালীর সময় বা এককালীন সময়ে জন্য অষুধ বিক্রিতে তেমন মুনাফা নেই। ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলিও পরিচালিত হয় ধনীদের স্বার্থ দ্বারা। ফলে ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধে সেসব দেশের সরকারগুলিও খুব উৎসাহ দেখায়নি। স্মরণ রাখতে হবে, পৃথিবীর বেশির ভাগ ধনী দেশগুলি চিকিৎসাসেবা দেয় না, চিকিৎসা বিক্রি করে।
ফলে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা বন্ধই ছিল বলা যায়। ভাইরাসের আক্রমণ হলে তখন কিছুটা তাৎক্ষণিক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায় মাত্র সরকারগুলির মনোভাবে। কিন্তু সুদূর লক্ষ্য নিয়ে ভাইরাস প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্বের কর্তাব্যক্তিদের। ফলে সার্স রোগের আক্রমণেও বিশ্ব দিশেহারা হয়েছিল। সার্স রোগ মানে ‘সিভিয়ার একিউট রেসপাইরেটোরি সিনড্রোম’ বা সার্স রোগের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় দুই হাজার দুই সালের নভেম্বর মাসের ষোল তারিখে। চীনের গুয়ানজং প্রদেশের ফসহান শহরে সেদিন পঁয়তাল্লিশ বছরের এক যুবকের শরীরে এই রোগ শনাক্ত হয়। খুব উচ্চমাত্রার জ্বর, শুকনা কাশি আর সেইসঙ্গে তার শ্বাসতন্ত্রকে অকার্যকর করে তোলে। দুঃখজনকভাবে তার শ্বসনযন্ত্র দ্রুত বিকল হয়ে পড়ে। চীন কিন্তু তখন রোগটি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবগত করে না। যখন রোগটি প্রথম আরম্ভ হয় দেখা গেল খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কৃষক, দোকানদার বা রান্নার সঙ্গে যুক্তরা সংক্রামিত হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে তা স্বাস্থকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ আক্রান্তরা যখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান তা ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকদের আক্রান্ত করে। যখন রোগটি চীনে ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন গুয়াজং প্রাদেশিক সরকার এগারোই জানুয়ারি স্থানীয়ভাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করে এই রোগটির কথা ঘোষণা করে। দুই হাজার তিন সালের একত্রিশে জানুয়ারি দেখা যায় সার্স ভাইরাস দ্বারা গুয়ানজংয়ের সান ইয়াৎ সেন চিকিৎলয়ের ত্রিশ জন স্বাস্থ্যসেবিকা সংক্রামিত হয়ে পড়েছেন। পরে গুয়াজংয়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা রোগটি নানাভাবে ছড়াতে থাকে। বিভিন্ন কারণে পরে মনে করা হয় প্রাণী থেকে এই রোগ মানুষের দেহে ছড়িয়েছিল, যা ছিল মানুষের ফুসফুসের প্রদাহ ঘটিত গুরুতর রোগ।
চীন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে রোগটি সম্পর্কে জানায় দুই হাজার তিন সালের দশই ফেব্রুয়ারি। চীনে তখন ১০৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট ৩০৫ জন আক্রান্ত আর তার মধ্যে মারা গিয়েছে পাঁচজন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তা আরো বেড়ে যায়। দুই হাজার তিন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই রোগটি চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তারপরেই চীনের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করে। চীনে প্রথম রোগটি সনাক্ত হবার স্বল্পদিন পরেই গুয়ানজংয়ের সান ইয়াৎ সেন হাসপাতালের বয়স্ক একজন চিকিৎসক লিউ হংকং ভ্রমণে যান তাঁর এক আত্মীয়র বিয়েতে। তিনি কাউলনের মেট্রোপল হোটেলের নবম তলায় অবস্থান করেন যেখানে সেইসময়ে বিভিন্ন দেশের আরো অনেক ভ্রমণকারী ছিলেন। বৃদ্ধ এই চিকিৎসক নিজে তখন সার্স রোগে আক্রান্ত ছিলেন যা তিনি জানতে পারেননি। কাউলন হোটেলে অবস্থানকালে লিউ নবম তলার সাতজনসহ মোট ২৩ জনের মধ্যে রোগটিকে নিজের অজান্তেই সংক্রমিত করেন। বাইশে ফেব্রুয়ারি যখন তার নিজের রোগ ধরা পরে, লিউকে হংকংয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লিউ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সাবধান করে দিয়ে বলেন যে তাকে যেন সকলের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়। তিনি মার্চের ৪ তারিখে সেখানে মারা যান। লিউর মাধ্যমে তাঁর ভগ্নিপতি আক্রান্ত হন পহেলা মার্চ, তিনিও হংকংয়ের একটি হাসপাতালে মারা মার্চের ১৯ তারিখে।
চিকিৎসক লিউর এই ভ্রমণের ঘটনা থেকে রোগ চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে হংকং থেকে আরো অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভ্রমণকারীরা তখনো কেউই জানতেন না যে, তারা রোগটি বহন করছেন। কাউলনের মেট্রোপল হোটেলে অবস্থানকালীন অতিথিদের মধ্যে তিনজন ফিরে যান সিঙ্গাপুরে, একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, একজন আয়ারল্যাণ্ডে আর একজন ভিয়েতনামে, দুজন কানাডায় এবং সকলেই তারা রোগটিকে বহন করে নিয়ে যান। কাউলন হোটেলের বিদেশি অতিথিদের বাকি কয়েকজনকে সার্স ভাইরাসে আক্রান্তের কারণে হংকংয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেট্রোপল হোটেলের সাতাশ বছরের এক অতিথি রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হংকংয়ের প্রিন্স অব ওয়েলস হাসপাতালের নিরানব্বই জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হন। ভিয়েতনামে রোগটিকে বহন করে নিয়ে যান একজন চীনা-আমেরিকান নাগরিক তার নাম জনি চেন। তিনি ছিলেন মূলত সাংহাইয়ের অধিবাসী। তিনি রোগটি ধরা পড়লে ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি হ্যানয়ের ‘ফেন্স হসপিটাল অব হ্যানয়’-এ ভর্তি হন এবং সে হাসপাতালের ৩৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে সংক্রমিত করেন। তিনি ১৩ মার্চ মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা কার্লো ছিলেন সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি চেনকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হন এবং ২৯ মার্চ মারা যান।
কানাডার একজন বয়স্ক মহিলা যিনি হংকংয়ে মেট্রোপল হোটেলের অতিথি ছিলেন, তিনি কানাডাতে ফিরে এসে সার্স রোগের আক্রমণে ৫ মার্চ মারা যান। তার ছেলে সংক্রামিত হয়ে মারা যান ১৩ মার্চ। বিভিন্ন ঘটনার ভিতর দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে রোগটির খবর পৌঁছে যায়। এরই মধ্যে অনেকেই জেনে গেছে, রোগটি প্রথম চীন দেশে শনাক্ত হয়েছে আর তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সঙ্গে সঙ্গে অবগত না করার জন্য চীন সমালোচিত হন। যদিও দুই হাজার তিন সালের জানুয়ারি মাসে গুয়ানজং প্রাদেশিক সরকার সাংবাদিক সম্মেলনে রোগটির কথা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু দুই হাজার তিন সালের পনেরোই ফেব্রুয়ারি চীন সরকার নিজে তাদের তথ্য প্রকাশ করে এবং ততদিনে চীনে তিনশো পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছে। চীন আরো আগে তথ্যটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে না জানাবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিয়ে বলে, বিশ্বকে এ ব্যাপারে আগে সতর্ক না করাতে রোগটির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। মার্চের বারো তারিখের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ রোগটি সম্পর্কে সারা পৃথিবীকে সতর্ক করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে হু সারা বিশ্বের নাগরিকদের পরামর্শ দেয় আক্রান্ত দেশ বা অঞ্চলগুলি ভ্রমণ না করতে। দুই হাজার তিন সালের ফিফার মহিলা বিশ্বকাপ সে কারণে চীন থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। আইচ হকির মহিলা চ্যাম্পিয়নশীপ বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়। বিভিন্ন আক্রান্ত দেশগুলি সভা-সেমিনার ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন স্থগিত করে। চীনসহ সংক্রান্ত অঞ্চলের খাবারের দোকানের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছিল। হংকংয়ের পর্যটন ব্যবসায় বিপর্যয় ঘটেছিল।
সার্সের লক্ষণ ছিল অন্যান্য ফ্লুর মতোই। উচ্চমাত্রার জ্বর, শুকনা কাশি, মাথাব্যথা, ডায়ারিয়া, চামড়ায় র্যাশ হওয়া, ক্ষুধামন্দা, শ্বাসকষ্ট। কিন্তু রোগটা কীভাবে ছড়াতো প্রথম বিজ্ঞানীরা খুব একটা নিশ্চিত হতে পারেনি, কিন্তু এটা নিশ্চিত ছিল রোগীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এটা ছড়ায়। সার্সের মৃত্যুর হার ছিল শতকরা প্রায় দশজন। কিন্তু সার্স ভাইরাসের লক্ষণ দুতিন দিনের মধ্যেই ধরা পড়তো। ফলে সার্স ভাইরাস খুব লম্বা সময় ধরে নীরবে সাধারণ মানুষের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারতো না বলে, খুব বেশি মানুষ এর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও একত্রিশটি দেশে এ রোগের সংক্রমণ ঘটেছিল। সবচেয়ে বড় সংক্রমণ ঘটে চীন আর হংকংয়ে। চীনে মোট আক্রান্ত হয়ে ৫০২৭ আর মারা যায় ৩৪ জন। হংকংয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ আর মারা যায় ২৯ জন। তাইওয়ানে আক্রান্ত হয় ২৪৬ জন মারা যায় ৭ জন। সিঙ্গাপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩৮ মারা যায় ৩ জন। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৭ কিন্তু কেউ মারা যায়নি। সকল দেশ মিলিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৮০৯৬ জন মারা যায় ৭৭৪ জন। বিভিন্ন দেশ আক্রান্ত হলে যখন মাস্ক পরার কথা বলা হয়, কোয়ারেন্টাইনে যাবার সিদ্ধান্ত আসে ঠিক তখনি হঠাৎ রহস্যময়ভাবে ভাইরাসটির আক্রমণ কমতে থাকে। মাত্র আটমাস এই ভাইরাস তার প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল। দুই হাজার তিন সালের পাঁচ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করে যে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণের ভয় দূর হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছিলো। দুই হাজার চার সালের মে মাসের পর আর সার্স আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় না। সার্স ভাইরাসের রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যাওয়ার কারণ এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি। সার্স আক্রমণের সময় সংক্রমণ রোধে যে টিকা আবিষ্কারের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল তা তখন স্থগিত হয়ে যায়।
সার্স যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা মিলিতভাবে এটা প্রতিরোধ করার জন্য সমন্বিতভাবে কাজে নেমেছিলেন। ব্রেইন ডোবারস্টাইন তাদের একজন। তিনি এ ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখে রেখে গেছেন। তিনি মনে করেন, এধরনের ভাইরাসের আক্রমণকালে ‘স্বচ্ছতা হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নীতি রোগটিকে প্রতিরোধ করার জন্য’। তিনি লিখেছেন, প্রথমদিকে বহু দেশই সঠিক তথ্য দিতে চাইতো না। তিনি এ কারণে বলেছেন যে, এই ধরনের সর্বগ্রাসী মহামারীর ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো একটি দেশের খোলাখুলি নিজেকে প্রকাশ না করা বা দায়িত্বহীনতার পরিচয় শুধু তার নিজের দেশকেই নয়, সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে।’ যদিও সার্স ভাইরাসটি রহস্যজনকভাবে দুর্বল হয়ে যায়, কিন্তু ডোবারস্ট্রাইন পরে খুশি মনেই লিখেছেন, সার্স ভাইরাস রুখতে নজীরবিহীনভাবে সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা এক হয়েছিল। সকলে খোলামনে এবং সদিচ্ছা নিয়ে অন্যদের কাজে সাহায্য করেছে, যত দ্রুত সম্ভব তাদের বৈজ্ঞানিক তথ্য জানাতে কার্পণ্য করেনি। ফলে দ্রুত ভাইরাসটির চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে, বলতে গেলে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার এক সপ্তাহের মধ্যে। বিজ্ঞানের জগতে ভাইরাস রুখবার প্রচেষ্টায় সেবার প্রত্যেকে তাদের সেরাটাই দিয়েছিল। পারস্পরিক সহযোগিতা এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। তিনি আরো বলেছিলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্য হবে যদি আমার দুই হাজার তিন সালের অভিজ্ঞতা থেকে না শিখি এবং তাকে কাজে না লাগাই। সার্স বুঝিয়ে দিয়েছে যদি আমরা সকলে যথেষ্ট ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করি তাহলে যুদ্ধটা সহজ হবে আর তখনই আমরা সংক্রমণকারী রোগগুলির বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়তে পারবো। বিশ্বে এমন কোনো দেশই নেই যে সম্পূর্ণ একা এই ভয়াবহরকম সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। চলবে