করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা ‘জীবনভিক্ষা’
প্রকাশিত : নভেম্বর ১৯, ২০২০
বুদ্ধদেবের প্রতি কিসা গৌতমী
দেউলে দেউলে কাঁদিয়া ফিরি গো, দুলালে আগলি বক্ষে
উষ্ণ বিয়োগ-উৎস-সরিৎ দরবিগলিত চক্ষে
শত চুম্বনে মেলে না নয়ন, চুরি গেছে মোর আঁচলের ধন;
অভাগী বিহগী আজিকে আহত মরণশ্যেনের পক্ষে।
স্তনক্ষীরধার অধরে বাছার আজি কি লেগেছে তিক্ত?
রসনা-প্রসূন কোন্ পরসাদ-মধুরসে পরিষিক্ত?
মুখচম্পকে মরুর বর্ণ, শুষ্ক অধরকমলপর্ণ
কী পাপেয়ামার প্রাণের ইন্দু পীযূষবিন্দুরিক্ত?
কোথা সে মাধুরী আধো আধো বোলে? কুন্দ বৃন্তছিন্ন
দন্তরুচিতে কই সে কান্তি পুণ্যহাসির চিহ্ন?
জানি প্রভু, তব পাণির পরশে ননীর পুতুল জাগিবে হরষে।
কোন পাষাণের বিষবাণে তার নয়নের মণি ভিন্ন?
অবনীর এই পদ্মবেদীতে হরিলে ত্রিতাপদুঃখ,
যাত্রা করেছ দুরগম পথ ক্ষুরধারসম সূক্ষ্ম।
দিয়ে তপোবল, মহানির্বাণ, কুমারে আমার করো প্রাণদান।
লুটায় যুবতী বুদ্ধ-চরণে, আলুথালু কেশ রুক্ষ।
কহেন বুদ্ধ, তনয় তোমার নীরব-সমাধি-মগ্ন,
বরণ করেছে চিরসুন্দর মরণের মহালগ্ন।
থাকে যদি কোথা অশোকনিলয়ভিখ মাগি আনো সর্ষপচয়,
পরশে তাহার দুলিয়া উঠিবে পরাণ-মৃণাল ভগ্ন।
বিশাল পুরীর দ্বারে দ্বারে ঘুরে, কেহ নাহি দেয় ভিক্ষা
নিবেদিল শেষে গুরুপদে এসে, শিখাইলে শেষ শিক্ষা,
জীয়াতে চাহি না তময় আমার, ভবনে ভবনে ওঠে হাহাকার
হরো জগতের বিরহ-আঁধার, দাও গো অমৃতদীক্ষা।