কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দীনের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দীনের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৮৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় তিনি মারা যান। ১৯১৮ সালে  ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) পাবনার সুজানগর উপজেলার কামারহাটিতে কৃষক পরিবারে তার জন্ম। আসল নাম মুহম্মদ জয়েনউদ্দীন বিশ্বাস।

জয়েনউদ্দীন ১৯৩৯ সালে খলিলপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে আইএ পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। কর্মজীবনের প্রথমে তিনি সেনাবাহিনীতে হাবিলদার কেরানি পদে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি এই চাকরি ছেড়ে দেন।

১৯৪৮ সালে ঢাকায় এসে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদে বিজ্ঞাপন বিভাগে ম্যানেজার পদে নিয়োগ পান। এরপর তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন। ১৯৫৫-৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান কোঅপারেটিভ বুক সোসাইটির শিশুকিশোর ম্যাগাজিন `সেতারা` ও `শাহীন`-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬২ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সহকারী প্রকাশনা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। সে সময় গ্রন্থমেলা আয়োজনের ব্যাপারে তিনি চিন্তা-ভাবনা করেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৬৪ সালে ন্যাশনাল বুক সেন্টারে (বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র) গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান ও পরে পরিচালক হন।

পরিচালক হওয়ার পর তিনি ইউনেস্কোর শিশুসাহিত্য বিষয়ক উপকরণ সংগ্রহের কাজ করছিলেন। সেই সংগৃহীত উপকরণগুলো প্রদর্শনীর লক্ষ্যে তিনি ১৯৬৫ সালে সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরিতে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার) শিশুগ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। এটাই ছিল বাংলাদেশের গ্রন্থমেলার সূচনা।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে আরেকটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। ১৯৭২ সালকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ ঘোষণা করলে ডিসেম্বর মাসের ২০-২৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমির বাইরে প্রগতি প্রকাশনী, মুক্তধারা ও বর্ণমিছিলের প্রকাশকরা স্টল বসিয়ে অনানুষ্ঠানিক বইমেলার স্থাপন করেন।

পরে মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহার নেতৃত্বে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই অনানুষ্ঠানিক বইমেলা চলতে থাকে। ১৯৮৪ সাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হয়ে আসছে। সেইদিক থেকে সরদার জয়েনউদ্দীন বাংলাদেশে গ্রন্থমেলার প্রবর্তক। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ পদে যোগ দেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি ১৯৮০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

জয়েনউদ্দীন ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তার লেখনিতে তিনি গ্রামীণ সমাজের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছেন। ১৯৫২ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নয়ান ঢুলী’ প্রকাশিত হয়। এতে তিনি সমকালীন সামাজিক সংকট, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, গ্রামের অবহেলিত মানুষের সুখ-দুঃখের চিত্র, জমিদার-জোতদারদের শোষণ-নিপীড়ন তুলে ধরেন। গল্পগ্রন্থটি তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এরপর তার রচিত অন্যান্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে বীর কণ্ঠীর বিয়ে, খরস্রোত, বেলা ব্যানার্জীর প্রেম ও অষ্টপ্রহর উল্লেখযোগ্য।

তার রচিত প্রথম উপন্যাস ‘আদিগন্ত’ ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ উপন্যাসে তিনি তৎকালীন হিন্দুসমাজের দুরবস্তার কথা তুলে ধরেন। তার অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে পান্নামতি, নীল রং রক্ত, অনেক সূর্যের আশা, বিধ্বস্ত রোদের ঢেউ উল্লেখযোগ্য। অনেক সূর্যের আশা উপন্যাসের পটভূমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত। কবি রহমতের স্মৃতিকথায় দেশবিভাগ ও তার পর বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি চিত্রায়িত হয়েছে। তিনি দেখিছেন কিভাবে দেশবিভাগের পর বাংলার বাঙালি মুসলমানেরা তাদের স্বপ্ন ও আবেগ থেকে বারবার বিচ্যুত হয়েছে।

তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৭ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৯৪ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন।