কথাসাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরুর আজ জন্মদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৫
কথাসাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরুর আজ জন্মদিন। ১৯২২ সালের ২৬ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার গোপমারি গ্রামে তার জন্ম। পিতা মণীন্দ্রনাথ ছিলেন মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের পোস্টমাস্টার।
শক্তিপদর স্কুলজীবন কাটে মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপি টিএন ইন্সটিটিউশন স্কুলে। পরে বহরমপুর কৃষ্ণনগর কলেজ ও কলকাতা রিপন কলেজ পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পরিণত বয়সে কলকাতায় আবাস গড়েন।
কলকাতার সিঁথিতে তার বাড়ির সামনের রাস্তার নাম রাখা হয়েছে শক্তিপদ রাজগুরু সরণি। ছোটো থেকেই অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল তাল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘ কবিতাগুলিও মুখস্থ আবৃত্তি করতেন তিনি। পড়াশুনোর পাশাপাশি তিনি বেড়াতে ভালোবাসতেন।
ছোটোনাগপুরের জঙ্গল ও দণ্ডকারণ্যের বনানী তাকে গভীরভাবে আকর্ষণ করতো। অবসর পেলেই ভ্রমণে যেতেন এই জায়গাগুলিতে। তার লেখালেখির সূচনা ১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে। ১৯৪২ সালে দেশ পত্রিকায় প্রথম গল্প ‘আবর্তন’ লিখে তিনি সকলের নজর কাড়েন।
১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস দিনগুলি মোর। আদ্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হয়ে ছিন্নমূল পূর্ববঙ্গীয়দের সুখ-দুঃখ-বেদনা-যন্ত্রণা উপলব্ধি করার জন্য ঘুরেছেন `তবু বিহঙ্গ` উপন্যাসের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য। গল্প-উপন্যাস ও বিবিধ রচনার সমগ্র সম্ভার প্রায় তিনশতাধিক।
উল্টোরথ পত্রিকায় ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তার একটি বড়গল্প, চেনামুখ। এ গল্পের আখ্যান ছিল উদ্বাত্তদের অসহনীয় জীবন সংগ্রাম। বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক এ গল্পের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করেন চলচ্চিত্র, মেঘে ঢাকা তারা। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং শক্তিপদ রাজগুরুকে জনসাধারণ্যে পরিচিত করে তোলে।
ঋত্বিক ঘটকের প্রশিক্ষণে এ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন শক্তিপদ নিজেই। তার ‘নয়া বসত’ গল্পের কাহিনী অবলম্বনে থেকে শক্তি সামন্ত নির্মাণ তৈরি করেন ‘অমানুষ’ ছবিটি যা ১৯৭৫ সালে মুক্তি লাভ করে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৮১ সালে শক্তি সামান্ত তার আরেকটি গল্প নিয়ে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, অমানুষ। বিখ্যাত হয়ে আছে উত্তম কুমারের অভিনয়ে।
হিন্দিতে হয়েছে `বরসাত কি এক রাত`। একই সঙ্গে ছবিটির বাংলা সংস্করণ বের হয় এবং তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অন্যায় অবিচার শক্তিপদ রাজগুরুর উপন্যাস নিয়ে তৈরি আরেকটি চলচ্চিত্র। ছোটদের জন্য তিনি অনেক উপন্যাস লিখেছেন। এ সবের কেন্দ্রীয় নায়ক ‘পটলা’ বেশ খ্যাতি লাভ করেছিল।
উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে: মেঘে ঢাকা তারা, মনি বেগম, অন্তরে অন্তরে, জীবন কাহিনী, অনুসন্ধান, অমানুষ, জনপদ, অধিগ্রহণ, স্বপ্নের শেষ নেই, আজ-কাল-পরশু, মাশুল, স্মৃতিটুকু থাক, অচিন পাখি, ভাঙাগড়ার পালা, দিনের প্রথম আলো এবং শেষ প্রহর।
তার প্রধান স্বীকৃতি পাঠকপ্রিয়তা। সম্মানিত হয়েছেন সারা জীবনের সাহিত্যকীর্তির জন্য `সাহিত্যব্রহ্ম` পুরস্কারে। পেয়েছেন `বিভূতিভূষণ পুরস্কার` ও সর্বভারতীয় সায়ন্স পুরস্কারও। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে নিয়ে ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ, কথাসাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে শক্তিপদ রাজগুরু: স্রষ্টা ও সৃষ্টি। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন নিতাই নাগ।
তার অনেক লেখা হিন্দি, তামিল, মলয়ালম ও মারাঠি ইত্যাদি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রাবন্ধিক মানস চক্রবর্তী রচিত জীবনী গ্রন্থ ‘প্রসঙ্গ: শক্তিপদ রাজগুরু’ প্রকাশিত হয়। ২০১৪ সালের ১২ জুন তিনি মারা যান।