এ বছর নোবেলজয়ী ইয়ুন ফসের কবিতা ‘এখানে একটি মানুষ’
ভাষান্তর: নঈম তারিকপ্রকাশিত : অক্টোবর ০৫, ২০২৩
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ৬৪ বছর বয়সি নরওয়েজিয়ান লেখক জন ইয়ুন ফস। আজ বৃহস্পতিবার নোবেল কমিটি এ ঘোষণা দেন। ফসকের উদ্ভাবনী নাটক ও গদ্য অব্যক্তকে ব্যক্ত করতে ভাষা দেয়। তার সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে সেপটোলজি সিরিজের উপন্যাস, অ্যালিস অ্যাট দ্য ফায়ার, মেল্যাঙ্কলি এবং এ শাইনিং।
সাহিত্যের জন্য নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন, “তার বিশাল রচনা বিভিন্ন ধারায় বিস্তৃত। প্রায় ৪০টি নাটক ও উপন্যাস, কবিতার সংকলন, প্রবন্ধ, শিশুদের বই এবং অনুবাদের সম্পদ রয়েছে। ফস আধুনিকতার পরিপ্রেক্ষিতে শৈল্পিক কৌশলগুলির সাথে তার নরওয়েজিয়ান পটভূমির ভাষা এবং প্রকৃতিতে একটি শিকড়কে মিশ্রিত করেছেন।”
ফসের কথাসাহিত্য প্রকাশক জ্যাক টেস্টার্ড খবরটি শুনে বলেছেন, “তিনি ব্যতিক্রমী লেখক, যিনি কথাসাহিত্য লেখার সম্পূর্ণ অনন্য উপায় খুঁজে পেয়েছেন।”
ফসের নরওয়েজিয়ান সম্পাদক সিসিলি সিনেস সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আপনি যদি ফসের কোনও বই খোলেন এবং কয়েকটি লাইন পড়েন তবে বুঝবেন, অন্য কেউ তা লিখতে পারবে না।”
১৯৫৯ সালে নরওয়ের পশ্চিম উপকূলে হাউজসুন্ডে জন ইয়ুন ফস জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে ওঠেন স্ট্র্যান্ডেবার্মে। সাত বছর বয়সে তিনি একটি দুর্ঘটনায় প্রায় মরতে বসেছিলেন, যে ঘটনাকে তিনি বলেছিলেন, শৈশবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। ফস জানা, ওই ঘটনা শিল্পী হিসাবে তাকে সৃষ্টি করেছে। তার কৈশোরে লেখালেখিতে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা চালু করার আগে তিনি রক গিটারিস্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন।
তার প্রথম উপন্যাস Raudt, svart (Red, Black) ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। তার অভিনীত প্রথম নাটক Og aldri skal vi skiljast (And Never Shall We Part), ১৯৯৪ সালে বার্গেনের ন্যাশনাল থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়। তার লেখা প্রথম নাটক Nokon kjem til å komme (কেউ একজন আসতে চলেছে)। ১৯৯৯ সালে যখন তিনি সাফল্য পেতে থাকেন তখন ফরাসি পরিচালক ক্লদ রেজি নান্টেরেতে এটি মঞ্চস্থ করেন।
হেনরিক ইবসেনের পরে ফস সবচেয়ে বেশি অভিনয় করা নরওয়েজিয়ান নাট্যকার। তিনি নামনেট (দ্য নেম), ভিন্টার (শীতকালীন) এবং এইন সোমারস দাগসহ (একটি গ্রীষ্মের দিন) ৩০টির বেশি নাটক লিখেছেন। তার দীর্ঘ কাজগুলির মধ্যে রয়েছে সেপ্টোলজি ট্রিলজি, যার তৃতীয় খণ্ডটি ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছিল।
১৯৮৯ সালে যে বছর ফসের উপন্যাস নস্টেট (বোটহাউস) প্রকাশিত হয়, লেখক তার সহকর্মী নরওয়েজিয়ান লেখক কার্ল ওভ নাউসগার্ডকে পড়ান, যিনি হর্ডাল্যান্ডের একাডেমি অফ রাইটিং-এর ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালে Knausgård লিখেছিলেন, “ফসের কণ্ঠস্বর তিনি যা কিছু লেখেন তাতে দ্ব্যর্থহীন এবং উপস্থিত না থাকলে তা কখনই কিছু নয়।”
এখানে একটি মানুষ
এবং তারপর সে
মিলিয়ে গেছে বাতাসে
যা অন্তর্ধান করে
ভিতরের দিকে
এবং পাথরের নড়াচড়ার সাথে মিলিত হয়
এবং অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে
সবসময় নতুন মিলনে
যা হয়
এবং যা নয়
নীরবতার ভেতর
সেখানে বাতাস
বাতাসে পরিণত হয়
সেখানে অর্থ
অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে
যা কিছু ছিল তার
শেষ আন্দোলনে
এবং একই সময়ে থাকে
একটি উৎস থেকে
যেখানে শব্দ অর্থ বহন করে
শব্দ নিজেকে বিভাজিত করার আগে
এবং তারপর আর আমাদের ছেড়ে যায় না
কিন্তু এটা
সমস্ত অতীতে এবং সমস্ত ভবিষ্যতে
এবং এটা হয়
এমন কিছুতে
যার অস্তিত্ব নেই
এর আপসৃয়মাণ সীমার মধ্যে
যা ছিল এবং যা আসবে তার মধ্যে
এটি অসীম ও দূরত্বহীন
একই আন্দোলনে
এটা মুছে দেয়
এবং অদৃশ্য হয়ে যায়
এবং র’য়ে যায়
যখন তা অদৃশ্য হয়ে যায়
এবং তা আলোকিত করে
তার অন্ধকার
যখন তা তার নীরবতার
কথা বলে
এটা কোথাও নেই
এটা সবখানে আছে
এটা কাছে
এটা দূরে
এবং সেখানে শরীর ও আত্মা মিলিত হয়
যেনবা এক
এবং এটা ক্ষুদ্র
এবং ততটাই বড়
যেন এটাই সবকিছু
এতটাই ক্ষুদ্র যেন বা কিছুই নয়
এবং যেখানে সমস্ত প্রজ্ঞা
এবং কোনো কিছুই জানে না
তার অন্তর্নিহিত সত্তায়
যেখানে কিছুই বিভক্ত করা হয় না
এবং সবকিছু একই সাথে নিজে এবং সবকিছু
বিভক্তির মধ্যে
যা কিছু বিভক্ত নয়
অন্তহীন সীমায় আমি একে অদৃশ্য হতে দেই
স্পষ্ট উপস্থিতিতে
অপসৃয়মাণ গতিতে
এবং দিনের বেলা ঘুরে বেড়ায়
যেখানে গাছ হচ্ছে গাছ
যেখানে পাথর হচ্ছে পাথর
যেখানে বাতাস হচ্ছে বাতাস
এবং যেখানে শব্দগুলো
সবকিছুর এক অবোধ্য ঐক্য
যা ছিল এবং যা হারিয়ে যায়
এবং এভাবে থেকে যায়
মিলনাত্মক শব্দ হিসেবে