এহসান হাবীব

এহসান হাবীব

এহসান হাবীবের কবিতা ‘সুইসাইড নোট’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২

পড়ুন পরম করুণাময়ের নামে।

দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণে
এই ঘোর কালি সন্ধ্যায়
যদি এক বর্ণও মিথ্যে বলি—
আমার ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকার কসম
দিনশেষে আমাকে পাবে না বলে
যে বারবার মরে যেতে চেয়েছে
তার নাম করে আর কিছুক্ষণ পরেই
গলায় নরেম গামছা পেঁচিয়ে ঝুলে পড়বো সিলিংয়ে
ঝুলতে ঝুলতে আমার হাত লম্বা হয়ে গেলে
তাকে একবার শেষবার ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করবো।

অথবা আমি আমার মায়ের নামেও আত্মহত্যা করতে পারি
যার অতৃপ্ত বাসনার নিষ্ঠুর নিয়তি আমি
মায়ের নাম করে ঝাপিয়ে পড়বো কোন দ্রুতগামী ট্রেনের নিচে
আমার অসুখী বাবা, যিনি বুড়ো হয়ে গেছেন
বিছানায় লেপ্টে থেকে তিনি আর কোনো স্বপ্ন দেখেন না
বাবার স্বপ্নহীন যন্ত্রণায় আমি উঁচু কোনো দালান থেকে লাফিয়ে পড়বো
পাখির মতো উড়তে উড়তে পৌঁছে যাব মৃত্যু অবধি।

আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।

কতবার মরবো আমি?
কতবার আমার মরা উচিত?
ওই যে, পেয়ারা বাগানের মালকিন
বসে আছে সরু হাত নিয়ে।
চাঁদের সন্ধ্যায় যে আমাকে গভীর আলিঙ্গন করেছিল
বলেছিল, ভালোবাসি।
তার চলে যাওয়ার দৃশ্যপট দেখতে দেখতে
আমি নিপুণ ব্লেড দিয়ে কেটে দেব শিরা
রক্ত তড়পানো যন্ত্রণা মাড়িয়ে মাড়িয়ে সে চলে যাবে
মৃত্যু তাকে বাধা দিতে পারবে না।

ঘরে অমন লক্ষ্মী স্ত্রী রেখে
প্রত্যেক কবির মতো
পরনারী সঙ্গলোভি আজন্ম লুম্পেন আমি।
তবু আমারও রয়েছে আত্মহত্যার অধিকার
আমারও বলার অধিকার আছে
রাষ্ট্র, তুমি যতই আমার জিহ্বায় পেরেক ঠুকে দাও
তবু আমি লিখে যেতে পারি এই অন্তিম সুইসাইড নোট।
গড় আয়ুর নিচে মারা যাওয়া
যত স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক
গুলির মুখে
ক্রসফায়ারে
গুমে হারিয়ে যাওয়া মানুষ
রাষ্ট্রের সমূহ ইতরামির বিপরীতে
প্রতিটি মৃত্যুই আত্মহত্যা
আমাকে বলতে দাও রাষ্ট্র
এই তো শেষবার
ফ্যাসিবাদের এই বুড়ি সুন্দরীকালে
তোমার ছেনালিপনার ইতিবৃত্ত আমাকে বলে যেতে দাও।

আমার ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকা
লুম্পেন যুবকের হাত ধরে চলে যাওয়া পেয়ারা বাগান
মায়ের অতৃপ্ত বাসনা, বাবার অসুখী জীবন
এরা কেউ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়।
মূলত, এরা সকলেই আত্মহত্যার দিকে ধাবমান।

নিগূঢ় সন্ধ্যার কসম!
মনোরোগ চিকিৎসার সান্ধ্য্যকালী ডোজ পূর্ণ করেছি
এখন এই অচঞ্চল চিত্তে
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আত্মহত্যা করবো আমি।
সম্ভাব্য সবগুলো উপায় রেখে
আমি নিরাপদ প্রস্থানে যাব
বারান্দায় ইজি চেয়ারে শুয়ে কফিতে মিশিয়ে দেব একশো ঘুমের বড়ি
তারপর পুরো একটা সিগারেট শেষ করবো।
রাত ঘন হয়ে এলে আমি আমার কন্যাদ্বয়কে
জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাব
আর জেগে উঠবো না।

আমার এই মৃত্যুর জন্য তোমরা কেউ দায়ী নয়।

আমার মৃত্যুর জন্য তোমরা রাষ্ট্রের ফাঁসী দাবি করো।