এহসান হাবীবের কবিতা ‘শিরোনামহীন বৃষ্টি’
প্রকাশিত : অক্টোবর ২৪, ২০২০
কত কুঠুরির গল্প মনে পড়ে যায়।
এই ভর সন্ধ্যায়।
বৃষ্টি খুব করে এলো। গাছেরা ভিজে চুপসে আছে
লোডশেডিংয়ের ভেতর বাড়ি ফেরা মানুষেরা
ঘরের ভেতর জবুথুবু হয়ে আসর বসায়।
কারো গল্পের ভেতর চালভাজার স্মৃতি ভেসে ওঠে
কেউ কেউ আবার নতুন রাষ্ট্রনীতির শলা পরামর্শ করে।
এসবের ভেতর কারো কারো পুরনো কত কুঠুরির গল্প মনে পড়ে যায়
রক্ত, পুঁজ, ক্লেদবীর্য জীবনের স্মৃতি
মহামায়া জীবনের অন্তিম অভিসার
তারা তবু জীবনে ফিরে ফিরে আসে
এককেটা ঘাই হরিণীর মতো
বুকের ভেতর জিয়ল মাছের মতো
আচমকা একেকটা ঝাপটা দিয়ে
বুকের কোথায় কোথায় যে শূন্য করে দিয়ে যায়!
মানুষের জীবনের থেকে এই গল্পগুলো অনেক দূরত্বে থাকে
অতি নিকটের এইসব গল্প।
ধরুন, আজকের যে বৃষ্টি
সাধারণত মানুষের মনে আছে
প্রতিমা বোধনের লগ্ন।
লোকে ভাবে, বৃষ্টির সাথে তার প্রাগৈতিহাসিক সম্পর্ক
বিসর্জনের দিন হয়তো এই সন্ধ্যাও আর এরকম থাকবে না।
তখন বৃষ্টি থেমে যাবে।
লোডশেডিংয়ের জমাট অন্ধকার থেমে যাবে
মানুষের জড়াজড়ি করে ঘরে ফেরা থেমে যাবে
জীবনের এইসব বৃষ্টিজনিত কাতরতা থেমে যাবে।
তবু সেদিনও অনেক কুঠুরির গল্প বাকি থেকে যাবে
মানুষের কর্মচঞ্চল দিনের ভেতর হানা দেবে
জীর্ণ প্রাসাদের রুগ্ন কুঠুরির গল্প।
এসবই আমাদের জীবন
খুব জোরে বাতাস বইতে থাকলে অনেক কুঠুরির দরোজা বন্ধ হয়ে যায়
জানালা বন্ধ হয়ে যায়
চুম্বন, আলিঙ্গন, সম্ভোগ
আহ্লাদ, ভালোবাসা বিনিময়ের মুহূর্তের স্মৃতি
টুপ করে উঁকি মারে আকাশে আকাশে।
তবু অনেক কুঠুরিতে মানুষের জীবন বিবর্ণ হয়ে পড়ে থাকে।
মৃত্যুর খুব কাছাকাছি মানুষেরা থাকে
ঘুমের ভেতর
গুমের মধ্যে
পলাতক জীবনের আড়ালে।
অনেক বৃষ্টি নেমে এলে
শহরের সড়কগুলো ডুবে গেলে
মানুষের যাতায়াত নিষিদ্ধ হয়ে গেলে
ঘরে ঘন জমাটবদ্ধ হয়ে গেলে মানুষের জীবন
যত গল্প মনে পড়ে, যত বেদনা উছলিয়ে ওঠে
তার সব হয়তো ব্যক্ত করা কঠিন।
তবু বুকের ভেতর ঘাই মারা ঝাপটা
শূন্যতার উঁকি মারা আকাশ
পৃথিবীর দুই প্রান্তে বসে থাকা
দুটো নিঃসঙ্গ মানুষের অসীম বেদনার গল্প নিয়ে
হাজারো কুঠুরি বেঁচে থাকে মানুষের পলাতক জীবনে।
এই কুঠুরির গল্পগুলো অনেক দূরত্বে থাকে
জীবনের এইসব অতি নিকটের গল্প।