এলিজা খাতুন
এলিজা খাতুনের তিনটি কবিতা
প্রকাশিত : জুন ২৭, ২০২১
বর্ষায় প্রোথিত পা
এত উপেক্ষা জড়াই অনুভবে,
তবু ছাড়তে পারি না তাকে
সকাল সন্ধ্যা স্বজনরূপে এসে ওঠা বর্ষাকে
আলিঙ্গন করি শিশু গাছের মতো
এ কথা জানার পর তুমিও কি বৃষ্টি হতে চাইবে!
স্নায়ু নিংড়ে নেমে আসে চৈত্রের স্মৃতি
কেননা তখনই অকৃপণভাবে খরা দিয়েছিলে খুব,
ভালোবাসার এলাকায় দাঁড়িয়ে ত্রাণস্বরূপ
বঞ্চনা দিয়েছো, আমাকে অন্ত্যজ শ্রেণির লোক জেনে
এই বর্ষায়
দহনেরও অধিক এক দগ্ধতা এনে দিতে পারে;
তোমার হৃদয়ে পুনরায় বৃষ্টির প্রতি টান
জন্ম নেবার সংবাদ
কাগজের নৌকা
এমনই বরষায় কাগজের নৌকায় চড়ে যেতাম
তোমার প্রিয় নদীতে;
বুকের মাটি খুঁড়ে গাঢ় অন্ধকারে দ্যাখো
নিদারুণ একা ছিলে তুমি
চারপাশে তখনও ছিল প্রসাধনী-বন্দি
শত শত মুখোশের কামার্ত জীবন
জমজমাট শতক ও সভ্যতা, ক্ষয়িষ্ণু নগর
প্রতারিত উদ্বাস্তু মানুষ, সংশয়, সংহার
সব মাড়িয়ে পেছনে ফেলে
উঠে যেতাম কাগজের নৌকায়
নিশ্চিন্ত পাটাতনে হেলেদুলে যেত
রক্তময় ঘামে ভেজা জীবনের ক্লান্ত দেহ
বহুবার এমনি করে তোমার গ্রামে গেছি
সবুজ এলাকা দেখে এসেছি, ওখানে অঘ্রাণ ছিল,
অবিকল ধান রঙের মতো তোমাকেও দেখেছি
তুমি তা জানোনি
সেইসব দিন ডুবে গেছে
যাত্রী ভরা জাহাজডুবির মতো
অথচ আমার কাগজের নৌকাটি ভেসেই চলেছে
বিপুল স্বপ্ন বোঝাই করে নিয়ে;
এত ভারে তবু নৌকাডুবি হয় না
তোমাকে এখনও বৃষ্টির মতো মনে হয়
ইদানীং মনে হয়
বৃষ্টির কথা ভাবলে
তোমার কথা ভাবলে
ইথার আমার আজ্ঞাবহ হয়ে ওঠে
অনুভূতি পৌঁছে দেবার উদ্বেগে
যদিও জীবিকার দুরন্ত জিজ্ঞাসা
হে জীবন, তুমি কি ভুগছো নৈরাশ্যের জ্বরে?
নির্ভাবনায় বুকের ওপর পড়ে থাকে যখন
নিরুপায় বিশ্বাস; একান্ত আশায়
মেঘে মেঘে নেমে আসা বিশুদ্ধ জল কাঁধে করে
বর্ষা হঠাৎই এসে গেল কচুপাতার পরে
কচুপাতার টালমাটাল দশা ছেড়ে
গড়িয়ে যেতে যেতে সমস্ত ধুলোমাটি, গাছগাছালি,
শেকড়, পাতা, কচি ডগায় হাত বুলিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে
নির্ভেজাল এগিয়ে চলে বর্ষা! এরা যেন বাধ না সাধে
বৃষ্টি যখন আসবে আমার ঘরে; কেননা
তোমাকে এখনও বৃষ্টির মতো মনে হয়
তোমাকে এখনও প্রেমের মতো মনে হয়