এনালাইটিক ও কন্টিনেন্টাল দর্শন: কী হলো, কেন হলো

খন্দকার ওলি

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৫, ২০২০

নামে কী আসে? গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক, একই সুবাস ছড়াবে। উইলিয়াম শেক্সপীয়রের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকের এ রকম একটি সংলাপ বেশ মশহুর। শেক্সপীয়রের সঙ্গে দেখা হয়নি ভিটগেনেস্টাইন, রাসেল কিংবা রাইলের। উপরের প্রশ্ন নিয়ে নাট্যকার যদি এই দার্শনিকদের কাছে হাজির হতেন, কী উত্তর পেতেন?

ভিটগেনস্টাইনের জবাব হতে পারত ‘চিহ্নের ধাঁধা’। রাসেলের মতে ‘কনসেপ্ট বা প্রত্যয়ের একটি ব্যাখ্যা’। আর চাতুরির সাথে রাইল বলতেন ‘অপ্রয়োজনীয় সমস্যা’। একইভাবে জানতে ইচ্ছে করে কী বলতেন হেগেল, হুর্সেল, কিয়ের্কেগার্ড বা নীটশে? তা জানা কখনো সম্ভব হবে না। তবে এই দার্শনিকদের চিন্তার দিকে নজর দিলে কিছু অনুমান করা হয়।

যেমন; উপরে ভিটগেনেস্টাইন বা অন্যদেরটা অনুমান করা হয়েছে। যে কারণে শেক্সপীয়নকে টেনে আনা; আমরা কী উত্তর অনুমান করে নিচ্ছি তা থেকে এই দার্শনিকদের চিন্তা পদ্ধতির ফারাক বোঝা যাবে— এ কথাটা বলাই আমাদের লক্ষ্য। আরেকটু ভাবলে দেখা যাবে, এটা মূলত এনালাইটিক বা বিশ্লেষণী ও কন্টিনেন্টাল ধারার দর্শনের পার্থক্য। বৈসাদৃশ্য ও সাদৃশ্যের মাধ্যমে এই দুই পক্ষকে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারব— অনেকেই এ ভাবনাকে সঙ্গত মনে করবে।

সংজ্ঞায়নের সুবিধা
গতানুগতিক বা আদর্শ সংজ্ঞা থেকে যে কোনো চিন্তার একটা সাধারণ কাঠামো দাঁড় করানো যায়। যদিও অতি সাধারণীকরণ ও অতি সরলীকরণের আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়ের উপর একটি অতিপরিচিত সংকলন সি জি প্রাদোর ‘আ হাউস ডিভাইডেড’। যেখানে দুই ধারার পদ্ধতিগত পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রাদোর মতে, এনালাইসিস বা বিশ্লেষণ ও সিন্থেসিস বা সংশ্লেষণের উপর আলো ফেললে এনালাইটিক ও কন্টিনেন্টাল ধারার পদ্ধতিগত পার্থক্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। এনালাইটিক দার্শনিকরা সাধারণত দার্শনিক সমস্যাকে ভাগ ভাগ করে সমাধান করেন এবং দেখেন কোন সম্পর্কের সূত্রে তারা বাঁধা।

কন্টিনেন্টাল দার্শনিকরা সংশ্লেষণ বা সুসংহতভাবে বড় পরিসরে প্রশ্নগুলোকে পরিচিত করান এবং বিশেষ কোনো বিষয়কে ‘বৃহত্তর কোনো ঐক্য বা ইউনিটির অংশ’ বিবেচনা করেন। আর প্রশ্নগুলো যদি ওই ঐক্যের মধ্যে মানানসই হয়, তবে তাদের ঠিকভাবে বোঝা যাবে, মোকাবেলা করা যাবে। সুতরাং, এনালাইটিক দর্শন বিশ্লেষণের সঙ্গে যুক্ত— এটা হতে পারে চিন্তা, ভাষা, যুক্তি, জ্ঞান, মন ইত্যাদির বিশ্লেষণ। যেখানে কন্টিনেন্টাল দর্শনের চিন্তার বিষয় হলো সংশ্লেষণ। ইতিহাসের সঙ্গে আধুনিকতার সংশ্লেষণ, ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের ও চিন্তার সঙ্গে প্রয়োগের।

নেইল লেভি এনালাইটিক দর্শনকে বর্ণনা করেছেন ‘সমস্যা-সমাধানের কার্যকলাপ’ আর কন্টিনেন্টাল ধারাকে দেখেন, ‘মানবিক ঐতিহ্যের জন্য, সাহিত্যের জন্য, শিল্পের জন্য… এটা রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি জড়িত।’ হ্যানস-জোহান গ্লকের ‘দ্য রাইজ অব এনালাইটিক ফিলোসফি’র মতে, এনালাইটিক দর্শন হলো মর্যাদাসম্পন্ন বিজ্ঞান বা নৈপুণ্য; এটা আলাদা আলাদা সমস্যা মোকাবেলায় নির্দিষ্ট কৌশল ব্যবহার করে যার ফলাফল সুনির্দিষ্ট।

এ ধরনের প্রভেদে অতি সাধারণীকরণ থাকলেও বড় একটা ছবি আঁকতে সাহায্য করে। যেমন, কোনো এনালাইটিক দার্শনিক পলিটিক্যাল ফিলোসফি লেখেননি। কিন্তু এর মধ্যে ভুল আছে। জন রলস লিখেছেন ‘থিওরি অব জাস্টিস’, রাসেল লিখেছেন ‘দ্য হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি’। আবার এমন নয় যে, যুক্তি ও ভাষা নিয়ে কন্টিনেন্টাল ফিলোসফিতে কোনো অবদান নেই। হেগেল বিস্তৃতভাবে লিখেছেন যুক্তিবিদ্যা নিয়ে, হাইডেগার লিখেছেন ভাষা সম্পর্কে। যদি সব দার্শনিককে বিস্তুতভাবে দেখা যায়, দেখা যাবে পার্থক্যের জায়গাটি কোথাও কোথাও অনেক ঝাপসা। সে দিক থেকে ভাবলে, আমাদের সুর্নিদিষ্ট দাবিগুলো আসলে সম্ভাব্য কিছু।

সতর্কতা হিসেবে মনে রাখা দরকার, সাধারণীকরণের মধ্যে থাকে আংশিক সত্য। যেমন, ফিলোসফি অব মাইন্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন হিলারি পুটনাম, ড্যানিয়েল ডেনেট, ডেভিড শালমার্স, জে জে সি স্মার্টের মতো এনালাইটিক দার্শনিকরা। আবার একই ধারার দার্শনিকদের মধ্যে ফেনমেনোলজির আলোচনা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এটা বলে দিচ্ছে দুই ধারার ভাবুকদের চিন্তার তফাত স্পষ্ট এবং দর্শনে তাদের জন্য আলাদা আলাদা স্থান রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, হাতিয়ার, আলোচনার সীমা রয়েছে— যাকে বুঝতে হবে তাদের স্বাধীন চিন্তাশীলতা ও ট্র্যাডিশনের আলোকে। প্রশ্ন হলো, ভিন্ন ভিন্ন ধারা কীভাবে এলো?

গতানুগতিক সংজ্ঞা থেকে বিচ্ছেদ
পুরনো সংজ্ঞা থেকে বিচ্ছেদের জন্য আমরা প্রথমে শরণ নিতে পারি কোনিংসবার্গের ইমানুয়েল কান্টের (১৭২৪-১৮০৪)। তার জ্ঞানতত্ত্বে ‘সংশ্লেষণী জ্ঞান পূর্বতসিদ্ধ হওয়া সম্ভব’ ধারণার ব্যাখ্যা পাই। তার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো বাস্তবতার দ্বিখণ্ডন— নোমেনাল বা বস্তু নিজে যা ও ফেনোমেনাল বা যেমন দেখায়। কান্টের মতে, যা আমরা দেখি ও তার সম্ভাব্য অভিজ্ঞতার অন্তরালে যা আছে তাদের মধ্যে তফাৎ আছে। সে হিসেবে ঈশ্বর, অমরত্ব, স্বাধীনতা আমাদের কাছে অজ্ঞেয়। তবে কান্টের এমন তত্ত্বের বিপরীতে প্রধান দুটি সমালোচনা এসেছে জর্জ উইলহেম ফ্রেডরিক হেগেল (১৭৭০-১৮৩১) ও ভিয়েনা সার্কেলের তরফে।

হেগেলের আলোচনা থেকে বিশ শতকের অনেক কন্টিনেন্টাল দার্শনিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। হেগেলের সমালোচনা প্রথমত ফেনোমেনাল থেকে নোমেনালের পৃথকীকরণ। এর মানে হলো যা দেখা যায় তার বিপরীতে বাস্তব হলো— যা থেকে তাকে পাওয়া যায়। কিন্তু হেগেলের কাছে কোনো বিভক্তি নেই, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন একই আইডিয়ার মধ্যে সকল বাস্তবতা একাট্টা হয়ে আছে। জ্ঞেয় ও অজ্ঞেয়ের মধ্যে কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক ফারাক নেই, তাই আইডিয়ার বাইরে অজ্ঞেয় কিছু নাই। কন্টিনেন্টাল ধারায় অগ্রগণ্য পুরুষ বলা যায় হেগেলকে। তার কাছ থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ধারণাটি এবং যা সাহিত্য, ইতিহাস, শিল্পকলাসহ সবকিছুকে দর্শনের আগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যার কারণে মিশেল ফুঁকো বলেন, হেগেল থেকে সার্ত্রে (কন্টিনেন্টাল ফিলোসফি) মূলত একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্যোগ।

ঊনিশ শতকের শেষদিকে হেগেলের ভাববাদী চিন্তা ইউরোপ ও এমনকি ব্রিটেনের এফএইচ ব্র্যাডলি, জেএমসি ম্যাটটাগের্ট ও টমাস হিল গ্রিনের মতো নেতৃত্বস্থানীয় দার্শনিকদের প্রভাবিত করে। তাদের হেগেলিয়ানও বলা হয়। অন্যদিকে ওই শতক যেতেই কান্টের বিরুদ্ধে ফেনিয়ে ওঠে কেমব্রিজ ও ভিয়েনার চিন্তকরা। যেখানে দোতলা জ্ঞানতাত্ত্বিক বাস্তবতা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন হেগেল, অন্যদের আপত্তির জায়গা ছিল সংশ্লেষণী পূর্বতসিদ্ধ। কেমব্রিজের আক্রমণ শুরু হয় জি ই মুরের নেতৃত্বে, দ্রুতই দলে টানেন সহকর্মী বাট্রান্ড রাসেলকে। যিনি ছিলেন গণিতের দার্শনিক, তিনি জ্ঞানের রিডাকশনিস্ট ধারার চালু করেন যা লজিক্যাল অটমিজম নামে পরিচিত। এবং ক্ষেত্রে বিশেষে তার মনোযোগ ছিল বিরোধিদের লজিক্যাল সমস্যাগুলো নিয়ে। দুটো বিষয়কে এক করলে দেখা যায়, এগুলো তাকে হেগেলিয়ানদের থেকে দূরে নিয়ে গেছে।

এরই মধ্যে নেতৃত্বস্থানীয় পদার্থবিদ ও দার্শনিক অ্যার্নস্ট ম্যাখ দেখলেন, অধিবিদ্যা ও জ্ঞানতত্ত্বের সঙ্গে কান্টের জড়িয়ে যাওয়া বিজ্ঞানের জন্য বিপজ্জনক। তিনি কান্টের জ্ঞানতত্ত্বকে বিকটমূর্তি বলে উল্লেখ করেন। এদিকে মরিস স্লিককে কেন্দ্র করে ভিয়েনায় একদল দার্শনিক একত্রিত হয়েছিলেন। তাদের অভিপ্রায় ছিল মাখের দর্শনের পরবর্তী পর্যায়। যারা নিজেদের প্রথমে ডাকতেন আর্নস্ট মাখ সোসাইটি নামে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে তারা পরিচিত হন ভিয়েনা সার্কেল হিসেবে। এই সার্কেলের অনেক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— অধিবিদ্যার মূলোৎপাঠন (কারনাপ), দর্শনে যুক্তিবিদ্যার শ্রেষ্টত্ব উদ্ধার করা (গোডেল), লিঙ্গুয়েজস্টিক কনভেনশনালিজম (ওয়াইজম্যান) এবং কান্টের সংশ্লেষণী পূর্বতসিদ্ধের ভ্রান্ততা প্রমাণ। এছাড়া পূর্বতসিদ্ধ (অপর্যবেক্ষণযোগ্য) ও পরতসিদ্ধ (প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভরশীল) সম্পর্কে ডেভিড হিউমের দৃষ্টিভঙ্গির আদলে তারা বলেন, সত্য হলো দ্বিরুক্ত (সংজ্ঞাগতভাবেই সত্য বা টটোলজি) অথবা অভিজ্ঞতাভিত্তিক (প্রত্যক্ষণ দ্বারা বিচার্য)।

সুতরাং কান্টের দর্শনের এই দুই প্রতিক্রিয়া দর্শনের ভিন্ন দুটি স্কুল নির্দেশ করে। অধিবিদ্যা ও জ্ঞানতত্ত্ব নিয়ে তাদের আচরণও ভিন্ন, দার্শনিক পদ্ধতি ও বিচরণের সীমার দিক থেকেও।

হাইডেগার ও ভিটগেনস্টাইনের বিচ্ছেদ
হেগেল পরবর্তী কন্টিনেন্টালে নানান ধরনের দ্বান্দ্বিক অধিবিদ্যা সূত্রবদ্ধ হয়েছে, অন্যদিকে ভিয়েনা সার্কেলে পাই যুক্তিবিদ্যা ভিত্তিক জ্ঞানের তত্ত্ব। মার্টিন হাইডেগার (১৮৮৯-১৯৭৬) গড়লেন তত্ত্ববিদ্যা বিষয়ক তত্ত্বসমূহ, যেখানে অনটোলজি মানে স্টাডি অব বিয়িং। তিনি বিয়িংকে অভিজাত দার্শনিক বর্গে পরিণত করেন। কারণ এটি সব অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত। উল্টোদিকে ভিয়েনা সার্কেল বলছে, দর্শন মূলত একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রকল্প, হাইডেগার তর্ক তুললেন— বিয়িং হলো জ্ঞানের অগ্রগামী। এবং ফেনোমেনা (অভিজ্ঞতার বিষয়বস্তু) অবশ্য যৌক্তিক বর্গীকরণ বা ব্যাখ্যার আগেই পঠিত হয়ে থাকে।

এর মাধ্যমে ফেনোনেমোলজি বা অবভাসবিদ্যায় দার্শনিক সমস্যার যৌক্তিক বিশ্লেষণে অরুচি তৈরি করেন হাইডেগার। রিচার্ড ম্যাথুর মতে, এভাবে হাইডেগার ‘যুক্তিবিদ্যায় সীমারোপের চেষ্টা করেন’ এবং পথ তালাশ করেছেন ‘দর্শনকে যুক্তিবিদ্যা মুক্ত করতে’। এমনকি আরেকটু এগিয়ে কেউ কেউ বলেন, প্রি-লজিক্যাল ফেনোমেনোলজির প্রশ্রয় নিয়ে যুক্তিবিদ্যাকে বাতিল করেন তিনি। এরই মধ্যে এনালাইটিক দর্শনে অনেক বদল হয়ে গেছে। রাসেলের ছাত্র লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন লিখেছেন বৈপ্লবিক ‘ট্রাকটাটাস লজিকো-ফিলোসফিকাস’, যা ভাষা দর্শনের দিকে জোর দেয়। ভিটগেনস্টাইন যে তত্ত্ব দাঁড় করালেন, তাতে দেখা যায় দুনিয়ায় বচনগুলো হলো বিদ্যমান যৌক্তিক ছবি। যার মানে হলো— বাক্য তখনই অর্থপূর্ণ হবে যদি তারা ছবির মতো হয়। এভাবে কারনাপ ও ভিয়েনা সার্কেলের সাথে ভিটগেনস্টাইন অধিবিদ্যা ও আল্লাহ বিষয়ক আলাপ ধ্বংসে মাতলেন। (অবশ্য ‘ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশন’ নামের ভিটগেনস্টাইনের পরবর্তীকালের বই এখানে আলোচ্য নয়।)

১৯২৯ সালের এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, নৈতিক ও ধর্মীয় ভাষায় প্রতিনিয়ত রূপকের ব্যবহার হয়। কিন্তু রূপক হলো কোনো কিছুর রূপক। এবং আমি যদি রূপকের মাধ্যমে কোনো ফ্যাক্ট বা প্রকৃত বাস্তব বর্ণনা করতে পারি তবে ওই রূপক বাদ দিয়েই আমি ফ্যাক্টটিকে বর্ণনা করতে পারব। এক্ষেত্রে, যত তাড়াতাড়ি রূপকটি বাদ দেয়ার চেষ্টা করব এবং তার পেছনে কোনো ফ্যাক্ট আছে কিনা দেখতে চাইলে আমরা দেখতে পাবো তেমন কোনো ফ্যাক্ট নেই। তাহলে প্রথমে যা কিছু রূপক হিসেবে দেখা গিয়েছিল, তা এখন নিরর্থকই প্রতীয়মান হবে। এনালাইটিকের দীর্ঘ ট্র্যাডিশনে ভিটগেনস্টাইন শুধু আল্লাহ-বিরোধী-আলাপের ধারাই তৈরি করেন নাই, তিনি এমন এক মানসিকতা তৈরি করেন যেখানে ভাষার বিশ্লেষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ‘ছদ্ম দার্শনিক সমস্যা’ চিহ্নিত করা যায়। ভিটগেনস্টাইনের মতে, ধারণাগত বা যৌক্তিক সমস্যাগুলো নিছকই ভাষার ভুল। ভাষার সীমাবদ্ধ থেকে সমস্যার সৃষ্টি। সিমান্টিক্যালি বা শব্দার্থগতভাবে ভুল পথে চালিত বাক্য ভাষার যুক্তিকে বিভ্রান্ত করে, প্রশ্নের মধ্যে যে প্রস্তাবনা থাকে তার বিশ্লেষণ করে এর অবসান সম্ভব।