এত সন্তুষ্টি আসে কোথা থেকে, অ্যাঁ!
সৈকত হাবিবপ্রকাশিত : এপ্রিল ৩০, ২০১৯
সম্প্রতি স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাসন-কোসন উপহার দিতে নিষেধ করে চিঠি দিয়েছে সরকারি অধিদপ্তর। বরং এসবের বদলে বই-শিক্ষাসামগ্রী দিতে বলেছে। আমরা অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এসবের বিরুদ্ধে আমাদের শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকতা, ইউএনও, ডিসি বন্ধুদের বলে আসছিলাম। তাদের বক্তব্য ছিল, অভিভাবকরা বই নিতে চায় না, বরং ঘটি-বাটিই তাদের কাছে বেশি লোভনীয়। আর আমরা বলেছি, সংসারের ঘটি-বাটি তো তারা সারা জীবনই ঘাটাঘাটি করবে। বরং যদি এ বয়সে তাদের মেধা, সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক পাঠ্যবহির্ভূত ভালো কিছু বই পড়িয়ে নেয়া যায়, সেটি তাদের প্রতিভা বিকাশে যেমন, তেমনি জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রেও প্রেরণা হতে পারে। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্য সরকার, শিক্ষা দফতর ও উদ্যোক্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ বিলম্বে হলেও তারা সবাই মিলে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আশা করি, আমাদের বন্ধুরাও এবার ‘অভিভাবকদের চাপ’ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন।
তবে দুঃখের কথা হলো, আমাদের শিক্ষক ও কর্মকর্তা বন্ধুদের অনেকেই মনে করেন, এসব ‘আউট বই’ পড়া ‘সময়ের অপচয়’ ও কাজের কিছু নয়। কাজেই শরষের ভেতরের ভূতটাকেও মনে রাখতে হবে। তাই নিয়মিত ফলোআপও রাখতে হবে, যাতে এটি সত্যিই পালিত হয়।
আমাদের শিক্ষার মান ও হাল যে কী, বাস্তব জীবনে পদে পদে টের পেতে হয়। এই যে গ্রামে গ্রামে এত ইংলিশ মিডিয়ম, আর শহরে-বন্দরে এত সব আংরেজি পড়ানো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু ক’জন ছেলেমেয়ে শুদ্ধবাক্যে ইংরেজি লিখতে ও বলতে পারে? ব্রিটিশরা যে কেরানি-তৈরির গোয়ালঘর হিসেবে এই শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, সেটি তো আজকের দিনে এমনকি যোগ্য কেরানিও তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার ফলে প্রতি বছর করপোরেট-ম্যানেজার জাতীয় পদবিধারী বিদেশিরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর আমাদের ছেলেমেয়েদের অনেকেই বড় ডিগ্রি নিয়েও ঘাস কাটছে; বিদেশি গিয়ে নিম্নমানের শ্রমিক হচ্ছে। কারণ খুব সামান্য ব্যতিক্রম বাদে, আমাদের শিক্ষায় কী জীবন, কী চাকরি, কী ব্যবসায় সঠিক ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না; তাদের সৃষ্টিশীল বোধ ও কল্পনাপ্রতিভার যত্ন নেয়া হচ্ছে না। ফলে বিদেশিরা বড় বড় পদ ও পদবি আর ততোধিক বড় অর্থ নিয়ে নিজেদের দেশকে সমৃদ্ধ করছে, আর আমরা!
ব্যাংকে অনেক রিজার্ভ, বড় বড় দালান-কোঠা আর রাস্তাঘাট নির্মাণ, আমদানি আর রেমিটেন্স-গারমেন্টস উন্নয়ন সন্দেহ নেই, কিন্তু আজকের দিনে প্রযুক্তিদক্ষ, ক্রিয়েটিভ, উদ্ভাবনী ও বহুমাত্রিক সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া আমাদের সত্যিকারের উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব? কিন্তু এই পৃথিবীর বাজারে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বাজারদর কতটা? কেবল আর্থিক নয়, আত্মিক ও বৈশ্বিক জ্ঞানগত উন্নয়ন হলেই আসলে পুরোপুরি একটি জাতির উন্নয়ন হয়— এ কথা বোঝার মতো জ্ঞানীর তো অভাব নেই! তবে কেন এই পরিস্থিতি ও বাস্তবতা?
উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পাস না করেই যদি বিল গেটস, স্টিভ জবস জন্মাতে পারে, আমাদের কেন এত উচ্চমার্গী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও কাজের কাজ হচ্ছে না? আমাদের এত সন্তুষ্টি আসে কোথা থেকে, অ্যাঁ!
লেখক: কবি