ফাইল ফটো
এই বালের মেধাবীদের দিয়ে আমি কী করিব!
তরিক রহমানপ্রকাশিত : জুলাই ০৩, ২০১৮
একজন কোটা সংস্কারকারীর সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, সরকারের ধৃষ্টতা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে না। সরকার চাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের সোনা দিয়ে মুড়ায় দিক। আমি বললাম, তাহলে? সমস্যা কোথায়? তিনি বললেন, কিন্তু তার সন্তান আর নাতিপুতিরা কেন এই সুবিধা পাবেন?
আমি জানতে চাইলাম, আচ্ছা বলোতো, তোমার বাবা যে সম্পত্তি রেখে যাচ্ছেন, সেটা কি তার বংশ পরম্পরায় ভোগ করবে? নাকি এক জেনারেশন পরে বাতিল হয়ে যাবে? সামান্য টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি যদি তোমরা বংশ পরম্পরায় ভোগ করো; তাহলে জীবন দিয়ে অর্জন করা মুক্তিযোদ্ধাদের এই বাংলাদেশে কেন তার সন্তানদের অগ্রাধিকার থাকবে না?
মুক্তিযুদ্ধে আমার মামা যখন শহিদ হন তখন তার পাঁচ সন্তান। সকলেই আয় রোজগারে অসমর্থ, শিশু-কিশোর। তারা বাবার জীবনের বিনিময়ে যে দেশ পেল, তার অধিকার তো বংশ পরম্পরায় পাওয়া উচিৎ বলে মনে করি। বাংলাদেশের এমন অসংখ্য পরিবার আছে। যারা পিতার, ভাইয়ের, বোনের রক্তের বিনিময়ে দেশপ্রেম অনুভব করেছে। তারা ব্যক্তি সুবিধায় প্রতিবেশী নারীকে ভীনদেশি ধর্ষকের হাতে তুলে দেয়ার সংস্কৃতির নয়। তারা সময়ের সাহসীদের সন্তান।
শেখ মুজিবের ছবি নিয়ে আন্দোলনে নামা মেধাবীরা শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেন না। তিনি বারবার বলছেন, প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। কমিটি হয়েছে, তারা পদ্ধতি বের করছেন। কিন্তু মেধাবীদের নাম নিয়ে বাঁশের কেল্লার চরিত্রের আচরণ ট্রল করে যাচ্ছেন। ইউটিউব আর ফেসবুকে সেগুলো স্পষ্ট। ফেসবুকে ধর্মপ্রচারকারীদের কোটা বিষয়ে বেশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন আট-দশজনকে চিনি যাদের ফেসবুকে পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ঘৃণা ছড়ানোর মালমশলায় ভরা।
আরও প্রমাণ পাবেন কয়েক দিনের বিবিসির প্রবাহের অনলাইন পেজের নিচের কমেন্টে। উস্কানিমূলক পোস্টে ভরা। যারা এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়েও বিভিন্ন কটাক্ষ করেই যাচ্ছেন। আর বিষয়টা এমন যেন, মুক্তিযোদ্ধারা কোনও ব্যাপারই না। আর কিছু বুদ্ধিজীবি দেখছি বিপ্লবের উস্কানিদাতা হিসেবে।
একজনতো পোস্ট দিয়েছেন, বাপের কোটায় শেখ হাসিনা দলনেত্রী। আমি তাকে বললাম, ভায়া, বাংলাদেশে আপনার বয়সী লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা আপনার মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে নাই। আপনি পারছেন কারণ, এটা আপনার বাবার কোটায় মানে বাবার অর্জিত টাকার বিনিময়ে, তাই না? তাহলে আপনার প্রধানমন্ত্রীকে এই যুক্তিতে কী আপনি টিজ করতে পারেন? চাচ্ছেন কোটা আবার এসব টিজ কেন? তিনি তো দেবেনই বলেছেন, নাকি?
কথা হচ্ছে, রাজনীতির মাঠে শিবির রগ কাটে। ছাত্রদলও কম যায় না, ছাত্রলীগও লাথি মারে, এই তো সংস্কৃতি। আর টিজ করা তো লাথির চেয়েও কম নয়। ফলে বিশ্বকাপের মতো এখানেও খেলা হচ্ছে। যারা মারছে এবং যারা মার খাচ্ছে, এটা খেলারই নামান্তর আমার কাছে। আমিও মনে করি, কোটা সংস্কার প্রয়োজনীয়। এবং এ দাবির পক্ষে প্রথমেই ছিলাম। আমি আশাবাদী, প্রধানমন্ত্রী বারবার সংসদে জানাচ্ছেন, কাজ এগোচ্ছে। তারপরও আলু পুড়িয়ে নিতে চাচ্ছেন যারা, তাতে তাদের হাত পুড়লে কী আর করা। শুধুই দুঃখিত ওই সকল মেধাবীদের জন্য।
আরও কথা হচ্ছে, গড়পরতায় যারা কোটা ওঠায় দিয়ে সরকারি চাকরি পেতে চাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগেরই উদ্দেশ্য অসৎ। কেননা সরকারি সেবায় আমি সন্তুষ্ট নই। সেই সেবাকে এসকল গড়পরতার মনমানসিকতার মেধাবীরা যে পাল্টাতে পারবেন বলে অনুভব করছি না। আর কোড ব্রেকার যারা তারা ওইসব কোটাফোটা অতিক্রম করে যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এ কেবল লুটেরভাগী হওয়াদের অভিলাষ। যারা মরিয়া হয়ে আন্দোলন করছেন। আর মাইর খেয়ে ও গুজব ব্যবহার করছেন। এ ক্ষেত্রে তারাও সফল।
আরও কথা হচ্ছে, দেশের ব্যাংক লুট হয়ে খাল হয়ে যাচ্ছে, মেধাবীরা যে চাকরি চায় তার বেতনের থলি লুট হয়ে যাচ্ছে। আরও কত সঙ্কট সরকারকে দেশের পক্ষে, মানুষের পক্ষে চাপে রাখার। সেগুলোতে তো কোনও রা নেই। এই বালের মেধাবীদের দিয়ে আমি কী করিব! এই দলের পেছনে আছে কিছু আগুন দেখলেই আলু পোড়াতে চাওয়া বাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রধান ইন্দন। শুনেছি ইসলামি ব্যাংকে শিবিরের দলীয় সার্টিফিকেট ছাড়া নাকি চাকরী হতো না। স্পষ্টত। তবুও নিরীহ ও মেহনতি মানুষের সন্তানদের পক্ষে চাই কোটা সংস্কার হোক ধীরে সুস্থে এবং সঠিক পরীক্ষা-নীরিক্ষার মধ্য দিয়ে।
লেখক: কবি ও গণমাধ্যমকর্মী