ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত
আফসানা বেলাপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
আবুল হাসান আলী নাদভী ভারতবর্ষ, তথা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলেম। তাঁর ‘আরকানে আরবা’, ‘ইসলামি জীবনব্যবস্থা’, ‘সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস’(পঞ্চম খণ্ড), ‘মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো’ ইত্যাদি অনন্য সাধারণ গ্রন্থ। ‘ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত’ নামক সূরা কাহাফের পর্যালোচনাম মূলক এই গ্রন্থটিও উম্মাহর প্রতি সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভীর আরেক গুরুত্বপূর্ণ ইলমি খেদমত।
সূরা কাহাফে উপস্থাপন করা হয়েছে চারটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যাকে হয়তো গল্প বলতে মন চাইবে। কিন্তু কোরআনে উল্লেখিত ঘটনা বা কাসাসে কোনো কল্পনা নেই। আছে এমন এক বাস্তবতা যা একই সাথে শিক্ষনীয় ও নিগূঢ় সত্যের উন্মোচনকারী। সূরা কাহাফে বর্ণিত আছে গুহাবাসী যুবকের ঘটনা, দুই বাগিচার মালিকের কাহিনি, হযরত মূসা (আ.) ও খিজিরের (আ.) ঘটনা এবং বাদশা জুলকারনাইনের ঘটনা।
সাথে জগতের সবচেয়ে বড় ফিতনা— ফিতনাতুল আকবর— দাজ্জাল প্রসঙ্গ এবং দাজ্জালের মোকাবিলায় করণীয়। নদভী (র.) প্রতিটি ঘটনার গভীরতর তাৎপর্য উদঘাটন করেছেন। খিজিরের (আ.) ঘটনায় আল্লাহ সুবহানা তায়ালা মূসার (আ.) মাধ্যমে জগৎবাসীকে জানিয়েছেন দৃশ্যমান ঘটনার বাইরেও আছে আরো কোনো সত্য, যা শুধু জানে তারাই যাদেরকে খোদা জানাতে চান।
গায়েবের চূড়ান্ত ইলম শুধু আল্লাহতায়ালার আছে। মূসার (আ.) কাছে আল্লাহ উন্মোচন করলেন তার এক বিশিষ্ট বান্দাকে যে বেঁচে আছে মানবীয় আয়ুর প্রচল সীমানা উজিয়ে। বস্তুবাদে ও দৃশ্যমানতায় অভ্যস্ত মনে এক চাবুক যেন এ সূরা। সময় কীভাবে থমকে থাকে, একদার পরাজিতরা কী করে ঈমান ও তাওয়াক্কুলের দৌলতে বিজয়ী ও বীরের সম্মান লাভ করে, সেই ঐতিহাসিক শিক্ষা পাওয়া যায় আসহাবে কাহাফের ঘটনায়।
প্রতিটি ঘটনা জাগতিক আপাত নিয়মের বাইরের। যারা জগতের কার্যকারণকেই চূড়ান্ত মনে করে, ইহকালের সুখ-দুঃখকেই পরম অবস্থা ভাবে, তাদেরকে এই সূরার ব্যাখ্যায় নদভী (র.) যেন চ্যালেঞ্জ করছেন, দেখিয়ে দিচ্ছেন তাদের ক্ষীণ দৃষ্টি। পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী সভ্যতার শেষ পরিণতি ইহকালের অশান্তি ও পরকালের শাস্তি। খোদাভীতি, খোদার প্রতি শুকর মানব জীবনকে করে তুলতে পারে বরকতে ভরা।
এ অসামান্য বইয়ে নদভী (রা.) তাকওয়াবিহীন জাগতিক চাকচিক্য ও প্রযুক্তির উত্তুঙ্গ বিকাশ ও অগ্রগতির ভেতরে দেখছেন মানুষের বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। এ সভ্যতা ঠিক যেন দাজ্জাল। দাজ্জালের হাতের আগুন যে বেছে নিবে সে বেহেস্তি হবে আর যে বেছে নিবে তার অন্য হাতের বাগিচা ও প্রাচুর্য, সে পাবে দোজখের অনন্ত আগুনের শাস্তি।
এভাবেই দৃশ্যের অন্তরালের দৃশ্যের জন্যে প্রস্তুত হতে হয় মোমিনকে। ইমান এভাবেই বস্তুনিমগ্নতা থেকে বাঁচায় মুমিনকে। ইহজগতকে গুরুত্বের ক্রমের ভেতরে যথাস্থানে রেখেই ইসলাম মানুষকে পরকালের অদৃশ্য জগতের জন্যে প্রস্তুত করে, ইহজগতেই আল্লাহ এমন কিছু ঘটনা ঘটান যা বিবেকবান মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে আসন্ন কিন্তু অনন্ত পারলৌকিক জীবনকে। যেন একটা পর্দা সরালেই দেখা যাবে সত্যের চিরন্তন-শাশ্বত রূপ।
এ গ্রন্থে সূরা কাহাফের চারটি ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লামা নাদভী ঈমানের রূপ, বস্তুজগতের অধ্যাস আর এক চিরসত্য যা প্রায়শই `গায়েব` হয়ে থাকে আমাদের কাছে, তা অনবদ্য ভাষায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। দাজ্জালের আলোচনাতেও এভাবে এসেছে বস্তবাদ ও ঈমানের সংঘাতের প্রসংগ।
সাইয়েদ আবুল হাসান নদভী আরো বিশ্লেষণ করেছেন, কেন এই সূরাটিকে নবিজী দাজ্জালকে প্রতিরোধের অন্যতম ঢাল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বইটি পাঠকের অন্তর্চক্ষুর উন্মীলন ঘটাবে বলে বিশ্বাস করি।