‘আ.লীগ নিষিদ্ধে দলগুলো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে’
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : নভেম্বর ১৯, ২০২৪
আ.লীগ নিষিদ্ধের কথা বললে দলগুলো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সোমবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ‘নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, “আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে; সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার কাজ করছে। আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি মধ্যে ছিল। বাংলাদেশ প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে আমরা যেন দেউলিয়াত্বের দিকে না যাই সেই বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে।”
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হতে পারিনি। এমন একটা সময়ে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি যখন বাংলাদেশ একটা ধ্বংসযজ্ঞের মতো পরিস্থিতিতে ছিল। গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি ও নিচ্ছি। আন্দোলনে শতাধিক শিক্ষার্থীর চোখের মধ্যে ছররা গুলি ঢুকেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনের চোখের ভেতর থেকে সফলভাবে স্প্রিন্টার বের করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা করা হয়নি। তখন সরকারি অনেক মেডিকেল কলেজে বলেও দেওয়া হতো যাতে তাদের চিকিৎসা না দেওয়া হয়। অনেকেই তখন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। সেখানে অনেকে জমি জাগয়া বিক্রি করেও চিকিৎসা খরচ চালিয়েছে। ২৪-র গণঅভ্যুত্থান পুরোপুরি সফল হয়নি। এই গণঅভ্যুত্থান আংশিক সফল হয়েছে। কারণ আমাদের একদফা দাবির মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরোধ। কিন্তু এখনো সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিরোধ করা সম্ভব হয়নি।”
আসিফ মাহমুদ বলেন, “যে ক্যাম্পাসগুলো থেকে ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গণতান্ত্রিক চর্চার শুরুটাও সেই ক্যাম্পাসগুলো থেকে হওয়া উচিত। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল ক্যাম্পাসগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা ক্যাবিনেটে আলোচনা করব।”
আলোচনা সভায় সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট সাইয়েদ আবদুল্লাহ বলেন, “এই গণ–অভ্যুত্থানের পরে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট, প্রত্যেকেই এখন নিজেদের নাগরিক ভাবে। সংবিধান সংস্কার কমিটিতে আমি একটা কথা বলেছি, বাংলাদেশের অফিশিয়াল নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ থাকতে পারে না। কারণ, যে মুহূর্তে এই শব্দের ভেতরে প্রজা থাকবে, তখনই আমাদের মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করে, কেউ না কেউ বোধ হয় রাজা আছে। নতুন বাংলাদেশ আমি কোনো রাজা দেখতে চাই না, আমি দেখতে চাই এই দেশের মালিক এই দেশের জনগণ।”
আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, “আমাদের অধিকারের প্রয়োজনে আমাদের সবাইকে জাগ্রত থাকতে হবে। আমাদের অধিকার অন্য কেউ আদায় করে দেবে না। আমরা একটা সুষ্ঠু ভোট চাই, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যেখানে জবাবদিহি থাকবে। রাষ্ট্র যারা চালাবেন তারা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য থাকবেন। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যেখানে আমরা বিচার পাব। আমাদের ধর্ম আলাদা হতে পারে, জাতিগত পরিচয় আলাদা হতে পারে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারে; কিন্তু এই মৌলিক প্রশ্নগুলোতে আমরা সবাই এক।”
আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা লাকি, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফুল এলাহী, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন রুনু।
আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান ও প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম প্রমুখ। আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ শান্ত।