আশিকুজ্জামান টুলুর গল্প ‘সোনালি সন্ধে’
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
আজকের সন্ধেটা খুব সুন্দর। রিমা আর সেলিনা, দুই বান্ধবী রিকশায় করে যাচ্ছে শায়লাদের বাসায়। শায়লারা থাকে প্রেসক্লাবের অপজিটে গলির ভিতরে একটা অ্যাপার্টমেন্টে। রিমা সেলিনাদের রিকশাটা বাইতুল মোকাররমের ডান দিয়ে বিজয় নগরের মোড় পেরিয়ে সেক্রেটারিয়েটের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ ওরা খেয়াল করল, দুটো খুব হ্যান্ডসাম ছেলে বাইকে করে ওদের সাথে সাথে যাচ্ছে এবং ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে।
ওদের খুব ভালো লাগলো ছেলে দুটোকে। দুজনই পরে আছে ব্লু জিন্স আর ওপরে সুন্দর গেঞ্জি। ওদের খুব ভালো লাগতে শুরু করল। এমনি আজকের সন্ধেটা এত সুন্দর, তার মধ্যে বইছে বসন্তের এলোমেলো মন খারাপ করা বাতাস আর সাথে ওই সুদর্শন হোন্ডা সওয়ারি। ওদের দুজনের মনই খুব রোম্যান্টিক হয়ে গেল। কী এক ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল দুজনের মনকে। ওরাও ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে খুব মিষ্টি করে হাসি দিলো।
ছেলে দুটো বুঝে গেল, মেয়ে দুটোও দৃষ্টি বিনিময়ে ঈষৎ মিষ্টি হাসি দিয়ে সম্মতি জানিয়েছে। তারা দ্বিগুণ উৎসাহে ওদের পিছু নিলো। আজ ওদের ঠিকানা না নিয়ে মোটেও যাবে না। রিমা আর সেলিনাও আজ ওদের মন হারিয়ে ফেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল।
প্রেসক্লাব পেরিয়ে রিকশাটা হাইকোর্ট না গিয়ে ডানে ঢুকে গেল প্রসস্ত রাস্তাটায়। ওদিকটায় আলোর একটু ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। যেহেতু বেশির ভাগ লাইটপোস্টের বাতিগুলি অনেকদিন ধরে ফিউজ হয়ে পড়ে রয়েছে। রিকশাঅলা ধীরে সুস্থে চালিয়ে যাচ্ছে। ওদের পিছে পিছে বাইকটাও ধীরে ধীরে আসছে। রিমা খুব উশখুশ করছে একটু কথা বলার জন্য ছেলে দুটোর সাথে। এবার বাইকটা ঠিক ওদের সাথে সাথে যাওয়া শুরু করেছে।
রিমা বুঝে গেল যে, এটাই মোক্ষম সময় ফোন নম্বর দেয়া-নেয়া করার। রিমা আবার তাকালো ওদের দিকে মুখে হাসি নিয়ে। ছেলে দুটোও ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিলো। রিমা বলল, হাই?
ছেলে দুটোও বলে উঠল, হাই? কোথায় যাচ্ছেন?
এই তো, বন্ধুর বাসায়।
রিকশাটা একটু দাঁড় করাবেন?
আচ্ছা।
রিমা রিকশাঅলাকে থামতে বলল। রিকশা এসে একটা ফিউজ হওয়া লাইট পোস্টের নিচে অন্ধকারের মধ্যে থামলো। রিমা আর সেলিনা রোমান্টিসিজমে একেবারে গলে গলে পড়তে থাকলো। উঠতি বয়স, মাত্র ২০ বছর।
ছেলে দুটো জিজ্ঞেস করল, আপনাদের কার কি নাম? প্রশ্ন শুনে রিমা আর সেলিনার গালদুটো টকটকে টমেটোর মতো লাল হয়ে গেল লজ্জায় আর ভালো লাগায়। রিমা বলল, আমার নাম রিমা আর ওর নাম সেলিনা। আপনাদের?
একটা ছেলে বলল, আমার নাম কুদ্দুস আর ওর নাম নুরুল ইসলাম। ব্যাগে যা যা আছে দিয়ে দ্যান।
আৎকে উঠল রিমা, অ্যাঁ?
কুদ্দুস আর নুরুল বলে উঠল, তাড়াতাড়ি করেন, যা যা আছে দিয়ে দ্যান। দেরি করলেই খবর আছে।
এরই মধ্যে নুরুল রিভলভার বের করে ওদের দিকে তাক করে ধরেছে। রিমা আর সেলিনা আকাশ থেকে পড়ল! চেহারাটা বিদ্যুৎ গতিতে ভয়ে কুকড়ে গেল। কোথায় যে পালালো রোমান্টিসিজম, বলা কঠিন! কী আর করা! ওরা দিয়ে দিলো সাথে যা যা ছিল।
এরপর থেকে রিমা আর সেলিনা কোনো সত্যিকারের রোম্যান্টিক ছেলে দেখলেও তাকাতো না, পাছে যদি ছিনতাইকারি হয়, এই ভেবে।