আয়েশা মুন্নি
আয়েশা মুন্নির পাঁচটি কবিতা
প্রকাশিত : নভেম্বর ০৪, ২০২০
চর্ব্যচোষ্য লেহ্যপেয়
তোমার মোবাইলের মেসেঞ্জারে
কিছু মেসেজ বেখেয়ালে পড়ে আছে
তুমি ছুটছো, শুধু ছুটে যাচ্ছ কোন কাজে, কখনো বা প্রয়োজনহীন ব্যস্ততায়।
তুমি তো জানো না—
কিসের নেশায় এই ছুটে চলা,
ফেমাস কিংবা সেলিব্রিটি হওয়ার যে নেশা তোমাকে পেয়ে বসেছে,
তুমি মাদকাসক্তের মতো চর্ব্যচোষ্য লেহ্যপেয় হয়ে গেছ।
কাজে বা অকাজে মোবাইল স্কীনে অনবরত ছুটে চলে তোমার আঙুল...
আমার এক আকাশ মেঘের মালিকানা তোমায় দেব।
বৃষ্টিতে শরীর চুঁইয়ে জল গড়াবে
তুমি মুগ্ধ চোখে গিলে খাবে,
শরীরের অলিগলির গোলাপি আভা।
আচ্ছা, পাহাড় বেয়ে পড়া ঝর্ণার গান শুনেছ কখনো?
কোকিলের কুহুতান?
কিংবা সুরায় জল মেশানো শব্দ?
সকল ব্যস্ততার ছুটি দিয়ে একবার এসে দ্যাখো তো— জীবন পাও কিনা...
বিপন্ন প্লাবন
তোমার মতোই বদলে যেতে যেতে বিস্ময়ের যে গভীর আকাশ দেখা যায়, তা থেকে জীবনের অনুসঙ্গ খুঁজি।
অথচ আকাশ ঘনিয়ে এলে আমাদের দৌড়ে যাবার কথা ছিল নিরাপদ আশ্রয়ে।
অতঃপর ঝরঝর বৃষ্টি দিনে আমি যদি হারাতে চাই তোমার পাথুরে জীবন থেকে, তুমি ভুলে যেও— আমি বলে কেউ ছিল তোমার। অসীম গন্তব্যে চলে গেছে যে মেঘের ট্রেন—
সবাই যখন সেই মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে যাবার অপেক্ষায় থাকে... তুমিও দেখে নিও অতীত হয়ে যাওয়া সেই মেঘের ওপাড়ে ক্রমেই নীল আকাশ কী করে হঠাৎ মেঘলা হয়, এরপর বারিধারা। এরকম তুমুল ঝড়বৃষ্টির দিনে আমি মরে যেতে চাই, সবার অলক্ষ্যে।
তোমাকে প্রথম ভালোবাসার বিপন্ন প্লাবনে হৃদয় ভাসাতে ভাসাতে আমি যেন মরে যেতে পারি, দু`চোখ ভর্তি জলোচ্ছ্বাসের থৈথৈ জলে। মৃত্যুর পরে বেহুলার ভেলায় ভেসে যাবে আমার আত্মা। আমি যদি মরে যাই এমন বৃষ্টি দিনে, তুমি কেঁদো না। তুমি কেঁদো না এই ভেবে যে, বৃষ্টি জলে চোখের জল ধুয়ে অশ্রুর রেখা দেখা যায় না।
এমন বৃষ্টির জলে ভেজা নরম মাটির কবরে যখন আমাকে শুইয়ে দেবে, তখনো তুমি কেঁদো না। তোমাকে যেন কাঁদতে না হয়— সেজন্য আমি এমন বৃষ্টির দিনেই মরে যেতে চাই। এরকম বৈরী দিনে আমায় ভেবে যদি তোমার মন খারাপ হয়, বৃষ্টির ছন্দে বরং একখানা বাউল গেয়ে নিও।
সাদা আঁচলে রুপোলি চাঁদ
মেঘাচ্ছন্ন অবগুণ্ঠনে কষ্ট ঢেকে
তোমায় ভালোবাসি বলেছি,
মুখ ফুটে বলা হলো না কতটা ভালোবাসি...
হৃদয় ভায়োলিনে সুর তুলে
নিজেই নিজেকে বলেছি কতবার,
বলেছি, ভালোবাসি
প্রেমে ও অপ্রেমে যখন টেনেছিলে কাছে...
নিঃশব্দ জল তরঙ্গে ভোরের নদী
সূর্যের লাল আভায় নিজেকে রাঙায়,
টগবগে দুপুর রোদ্দুরে চোখ ঝলসায়
তেমনি আমিও ঝলসে যাই, ক্ষতবিক্ষত হই
প্রিয় লাটিমের তলার বকেয়া সময়ে...
সন্ন্যাসী করপুটে গুরুদক্ষিণার পাত্র হয়ে
খোলানেই পড়ে থাকি, ঘরে ওঠা হয় না!
বিকেলের সোনা রোদে নিজেকে দর্শাই
তখনো মলাট বাঁধা এই আমি,
অস্তগামী সূর্য যখন ডুবে যায়
খুন আর খুনি সেই অকুস্থলে
বিলাসী সন্ধ্যা হাসে।
কৃষ্ণপক্ষের দীর্ঘ রাত্রিতে
বিচ্ছেদে গুমড়ে উঠেছিল প্রাণ...
সেইদিন, ঠিক সেইদিন
বক্ষবাসের ভালোবাসায় দিয়েছি টান
নিস্তরঙ্গ নদীর জল বয়ে যাক...
বিশ্বাসের তিলকে থাকুক লাল পেড়ে সাদা শাড়ি
শ্বাসপ্রশ্বাসে বাড়ুক কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস,
মরে যাক নীলপদ্ম...
তখন সাদা আঁচলে রুপোলি চাঁদ আমার হবে।
বিপন্ন সময়
একটা বিপন্ন বিকেল...
বিপন্ন সময়...
আহত ইচ্ছে...
তোমার চলে যাওয়া...
আমার জন্য রেখে গেল জলছাপ, যেন কতদূরে ফেলে গেছো প্রেম।
তুমি দেখনি...
কেউ দেখেনি...
কত নির্মল ভালোবাসা,
নির্জনে পোড়াই তোমার অপেক্ষায়!
গোধূলি জুড়ে তোমার প্রস্থান
অন্ধকারে আমি মিলিয়ে যাই
আবার এক বুক প্রেম নিয়ে ঊষা দেখি,
তুমি আসবে বলে।
সূর্যস্নানে তাই উত্তাপ কুড়াই
তবুও তুমি এলে না!
চিরহরিৎ বনপথে রঙ নেই...
তোমার ফিরবার নিয়ম নেই...
ভুল মানুষ
আমার নিঃসঙ্গতা যখন বারান্দার রেলিং ঠেসে আটকে থাকে, তুমি তখন মুঠোফোনের দ্রুত চ্যাটে আঙুল চালাও অন্য কারো ইনবক্সে। কিন্তু আমাকে তুমিময় যাদুর পরশ বুলিয়ে মোহগ্রস্ত করতে তোমাকে দীর্ঘদিন ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে হয়েছিল। অথচ এখন আমি তোমার বিলাসী ইচ্ছেয় জন্ম নেয়া এক বনসাই প্রেমিকা। জানি, নিশ্চয়ই জানি তুমিও একদিন একা হবে, অনেকদিন পর...। অতঃপর বিষুবরেখায় ঘুরপাক খেতে খেতে তখন আমরা দুজন কামাক্ষার শহরের দুইপ্রান্তের বাসিন্দা হয়ে রবো।